ঢাকা শনিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৫

ফেরার চেষ্টায় কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালছে আ.লীগ

মেহেদী হাসান খাজা
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ১১:৩৯ পিএম

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইভাবে দলটির অনেক সিনিয়র নেতা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিও আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। তারা সেখান থেকেই আগামী নির্বাচন বানচাল, দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং সরকারকে বিপাকে ফেলার নীলনকশা করছেন। এ উদ্দেশ্যে বিভিন্নভাবে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে ঢাকার রাজপথে নৈরাজ্য ও নাশকতার ছকও আঁকছেন দলটির পলাতক নেতারা। সূত্রের খবর, এই লক্ষ্য অর্জনে কোটি কোটি টাকাও ঢালছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটি। এ ছাড়া নভেম্বর ও ডিসেম্বরকে টার্গেট করে রাজনীতির মাঠ ও রাজপথ দখলের পরিকল্পনা করেছেন আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরই অংশ হিসেবে দেশব্যাপী ঝটিকা মিছিলসহ সাংগঠনিক কাজও চালানোর চেষ্টায় আছেন দলটির নেতাকর্মীরা। যদিও প্রতিনিয়তই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছেন তারা। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা এমনই তথ্য জানিয়ে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রাজধানীসহ দেশজুড়ে বড় নাশকতার পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। এসব অপকর্মের জন্য পাশের দেশে বসে দলের শীর্ষ নেতারা একটি বৈঠকও করেছেন। এ কারণে সম্প্রতি প্রসাশনের সব পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তবে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সামনের দিনে দেশের মাটিতে তারা বিভিন্ন ধরনের নাশকতা করতে চাইছে। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বর্তমান সরকারকে বাধা দেওয়া। আমরা আশঙ্কা করছি, দেশের মাটিতে এই সময়টাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হবে।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী লীগের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনার তথ্য হাতে পেয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে সক্রিয় হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের তথ্যমতে, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত রাজনৈতিক দলটি নভেম্বর-ডিসেম্বর ও নির্বাচনকে টার্গেট করে দেশি-বিদেশি গোষ্ঠীর সহায়তায় অরাজকতা সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার নীলনকশা করছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচন প- করা এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে পুরোনো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফিরে যাওয়া। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। দলটির কয়েকজন নেতাকর্মী আত্মগোপনে থেকে এই অরাজকতায় সম্পৃক্ত। এ জন্য ভারত ও দেশের মধ্য থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও ভাড়াটে লোক দিয়ে বড় ধরনের নাশকতা করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। 

পুলিশ সদর দপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, গত ১১ মাসে সারা দেশ থেকে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশের পদ-পদবি নেই বললেই চলে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি মাঠে থাকছেন ছাত্ররাও। তবে নিষিদ্ধ সংগঠনের এমন ঝটিকা মিছিল নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

এদিকে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উপদেষ্টা প্রতিটি থানার ওসিদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের মিছিল হলে যারা যার এলাকার জবাব দিতে হবে, পাশিপাশি এটি প্রতিরোধ বা বন্ধ না হলে কোনো ওসির চেয়ার থাকবে না। এসব প্রতিরোধ না করতে পারার কারণে সম্প্রতি ঢাকার পাঁচটি থানার ওসিকে ডিএমপির সদর দপ্তরে বদলি করা হয়েছে। 

বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত আইজিপি (অপরাধ ও অপস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, পরাজিত শক্তি নানাভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘœ করার অপচেষ্টা করছে। দুর্গাপূজার মধ্যে ধর্মীয় সেনসিটিভিটি কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চক্রান্ত করা হয়েছে। এ কাজে দেশের বাইরে থেকেও নানাভাবে ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশের মধ্যে আওয়ামী মতাদর্শের লোক তথ্য পাচার করছেনÑ এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা পুলিশের পুরোনো ব্যাধি। অধিকাংশ লোক পেশাদার। এর মধ্যে দু-চারটা লোক আছে, যারা ষড়যন্ত্র করে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন একটা গোষ্ঠী ক্ষমতায় ছিল। তাদের আস্থাভাজন কিছু লোক ঘাপটি মেরে থাকতেই পারে। এটা ক্রমান্বয়ে কমে আসবে। কিন্তু এরা যাতে কোনো প্রকার নেগেটিভ রোল প্লে করতে না পারে, সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।’

এদিকে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, ‘দেশজুড়ে অস্থিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি কাজ করছে। আমরা অতীতেও বিভিন্ন সময়ে এবং বিশেষ দিনে নাশকতার চেষ্টা দেখেছি। এবারও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত আওয়ামী লীগের নাশকতা রুখে দিতে। তারা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তাদের প্রতিরোধ করতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং জনগণও এখন সতর্ক। পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে যেকোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা লক্ষ করছি, পুলিশের ভেতরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাত ছিল এবং এখনো রয়েছে, যেটার সমাধান জরুরি। এ অবস্থা রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে। যেকোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। তাহলেই পরাজিত শক্তিকে প্রতিরোধ করা অনেকটা সম্ভব।’