- ফ্লোটিলার আটক অধিকারকর্মীদের অনশন কর্মসূচি
- গাজা অভিমুখে নতুন করে আরও ১১টি জাহাজের যাত্রা
- আমরা গাজা পর্যন্ত যাব, কোনো বাধা মানব না- আলোকচিত্রী শহিদুল আলম
ত্রাণ নিয়ে গাজা অভিমুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের সবশেষ জাহাজটিও আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল শুক্রবার সকালে গাজা উপকূলে এলে ম্যারিনেট নামের জাহাজটির দখল নেয় ইসরায়েলি সৈন্যরা। এর আগে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের অন্য সব জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি নৌবাহিনীর হাতে আটক ফ্লোটিলার অধিকারকর্মীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন। এদিকে ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে গাজা অভিমুখে নতুন করে আরও ১১টি জাহাজ যাত্রা করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) গতকাল জানিয়েছে, এসব নৌকায় প্রায় ১০০ জন অধিকারকর্মী আছেন।
লাইভস্ট্রিম ভিডিওতে দেখা গেছে, গতকাল সকালে ইসরায়েলি বাহিনীর সদস্যরা জোর করে ম্যারিনেট নামের জাহাজটিতে উঠে পড়েন। পোল্যান্ডের পতাকাবাহী ম্যারিনেট জাহাজটিতে ছয়জন ক্রু আছেন বলে জানা গেছে। এর আগে ম্যারিনেট বাদে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের অন্য সব জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েল।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা হলো সেই সংগঠন, যারা ইসরায়েলের অবৈধ নৌ অবরোধ ভেঙে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। সংগঠনটি জানায়, ফিলিস্তিনি উপকূলের দিকে যাওয়া শেষ নৌযান মেরিনেটকে স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ২৯ মিনিটে আটক করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী।
নৌযান থেকে সরাসরি সম্প্রচারে দেখা যায়, ইসরায়েলি কমান্ডোরা একটি ছোট নৌযানে করে মেরিনেটের কাছে যায় এবং পরে সেটিতে উঠে পড়ে। এর পরই সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। ফ্লোটিলার আয়োজকেরা জানিয়েছেন, আটক হওয়ার সময় মেরিনেট গাজা থেকে ৪২ দশমিক ৫ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। অর্থাৎ, তখনো সেটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিল।
সংগঠনটি গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছে, ‘মেরিনেট ছিল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার আটক না হওয়া শেষ নৌযান। স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ২৯ মিনিটে এটিকে আটক করা হয়। এটি তখন গাজা থেকে ৪২ দশমিক ৫ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। গত ৩৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি দখলদার নৌবাহিনী আমাদের সব নৌযান অবৈধভাবে আটক করেছে। প্রতিটি নৌযানে ত্রাণ ছিল...’
ফ্লোটিলার আটক অধিকারকর্মীদের অনশন কর্মসূচি
ইসরায়েলি নৌবাহিনীর অবৈধ অভিযানে আটক গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অধিকারকর্মীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি টু ব্রেক দ্য সিজ অন গাজা। বিবৃতিতে তারা ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের মন্তব্যেরও তীব্র নিন্দা জানান। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটক কর্মীদের মুখোমুখি হয়ে বেন-গভির তাদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে মন্তব্য করেন।
কমিটির পক্ষ থেকে এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণহত্যায় দায়ীদের কাছ থেকে এর চেয়ে আলাদা কিছু প্রত্যাশা করার নেই। তারা তাদের মন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন, যিনি দেহরক্ষীদের নিরাপত্তাবলয়ে থেকে বিশ্বজুড়ে ৫০টি দেশের শান্তিকামী কর্মীদের সামনে দাঁড়িয়ে উদ্ধ্যত আচরণ করছেন।’
সংগঠনটি আরও জানায়, আটক কর্মীরা অহিংস উপায়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অংশ হিসেবে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা আন্তর্জাতিক আইন অমান্য না করে শুধু শান্তিপূর্ণ উপায়ে গাজার ওপর আরোপিত ইসরায়েলি অন্যায্য অবরোধ ভাঙতে মানবিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
নতুন ১১ জাহাজের যাত্রা
এদিকে ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে গাজা অভিমুখে নতুন করে আরও ১১টি জাহাজ যাত্রা করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) জানিয়েছে, এসব নৌকায় প্রায় ১০০ জন অধিকারকর্মী আছেন।
এক বিবৃতিতে এফএফসি জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজ আরও ৮টি নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে ইতালি ও ফ্রান্সের পতাকাবাহী নৌবহর ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’ যোগ দিয়েছ। এই বহরে রয়েছে দুটি নৌকা। একসঙ্গে এ দুটি দল ১১টি জাহাজের বহর নিয়ে গাজা অভিমুখে ছুটে চলেছে।
বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এই বহরে থাকা ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজটিতে আছেন।
আমরা গাজা পর্যন্ত যাব, কোনো বাধা মানব না: আলোকচিত্রী শহিদুল আলম
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র কাছ থেকে আলাদা অবস্থানে আছেন বলে জানিয়েছেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেছেন।
গাজামুখী নৌযান থেকে দেওয়া ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেন, ‘আজ ৩ অক্টোবর ২০২৫। দেখতেই পাচ্ছেন, ঝকঝকা রোদ। আজ আমরা ফিলিস্তিন টাইম জোনে এসেছি। সুমুদ ফ্লোটিলায় যারা গিয়েছিলেন, তারা ভিন্নভাবে গিয়েছিলেন। আমরা আলাদাভাবে যাচ্ছি। এভাবেই আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে ওদের ওপর কিছু হলেও আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি। জানতে পেরেছি, ইসরায়েল তাদের (সুমুদ ফ্লোটিলা) সব জাহাজ আটক করেছে।’
অনেক বড় জাহাজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে শহিদুল আলম বলেন, ‘আমাদেরটা সবচেয়ে বড় জাহাজ। আমাদের সঙ্গে আরও আটটি ছোট নৌকা পাড়ি দিয়েছিল। তারা আমাদের একটু আগে পাড়ি দিয়েছিল। আমরাসহ এই মুহূর্তে এই ৯টি নৌযান মুক্ত আছে। আমরা আজ ফিলিস্তিনি টাইম জোনে এসেছি। এখনো দূরত্ব আছে। তবে আজ আমরা এই আটটি ছোট নৌকা নিয়ে পার হয়ে যাব। এরপর থেকে আমাদের এই জাহাজই সবচেয়ে আগে থাকবে। এতে বোঝাই যাচ্ছে, আক্রোশটা আমাদের ওপরই পড়বে। কিন্তু আমরা একেবারেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আমরা একেবারেই গাজা পর্যন্ত যাব এবং কোনো বাধাই গ্রহণ করব না।’
অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্য নিয়ে গাজার দিকে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করে শহিদুল আলম বলেন, ‘এটা বলা প্রয়োজন, সুমুদ ফ্লোটিলায় যে নৌকাগুলো ছিল, তাদের কিন্তু দায়িত্ব ছিল ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার। আমরা কিন্তু ত্রাণের জন্য যাচ্ছি না। আমরা একটা অবৈধ অবরোধ ভাঙব, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে যাচ্ছি।’
শহিদুল আলম বলেন, ‘এই নৌকায় অনেক সাংবাদিক আছেন, চিকিৎসক আছেন। সঙ্গে অন্য কর্মীরাও আছেন। কিন্তু আমরা ত্রাণ দেওয়ার অজুহাতে যাচ্ছি তা না। আমরা লড়াই করতে যাচ্ছি, ফিলিস্তিনে আমাদের থাকার, যাওয়ার অধিকার আছে। ইসরায়েল যত মানুষ খুন করেছে এবং যত সাংবাদিক ও যত চিকিৎসক খুন করেছে, সেটার প্রতিবাদ আমরা জানাব।’
বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘আমরা যেটা করতে পারি, যেহেতু এই দেশগুলোর নেতা-নেত্রীরা অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, সে ক্ষেত্রে নাগরিক হিসেবে আমরা যেটা করতে পারি, সেটাই আমরা করতে চাইব। আপনাদের ভালোবাসাই আমাদের অনুপ্রেরণা।’
শহিদুল আলম বলেন, ‘যেমনটা দেখা যাচ্ছে, আজ সকালে সমুদ্র বেশ শান্ত। এটা অপ্রত্যাশিত। কারণ, মুহূর্তের মধ্যেই এটা বদলে যেতে পারে। গতকাল খুব খারাপ অবস্থা ছিল। আমি একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তবে এখন পুরো চাঙা, লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’