ঢাকা বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

রূপনগরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড 

প্রিয়জনের ছবি হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ১২:০৪ এএম

মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়িতে দুটি ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় নিখোঁজদের খোঁজে স্বজনদের আহাজারি বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার হলেও অনেকে নিখোঁজ ছিলেন। অগ্নিকা-ের পর ঘটনাস্থল ও জাতীয় বার্ন ইউনিটসহ আশপাশের হাসপাতালগুলোতে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে ফিরেন অসংখ্য মানুষ। অনেকে প্রিয়জনের ছবি হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় বার্ন ইউনিটে সরেজমিনে দেখা গেছে স্বজনদের আহাজারির দৃশ্য।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান গতকাল বিকেলে বলেন, মিরপুরের রূপনগর এলাকা থেকে আহত অবস্থায় তিনজনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে সুরুজের শরীরের ২ শতাংশ দগ্ধসহ ইনহ্যালেশন ইনজুরি এবং মামুন ও সোহেলের ইনহ্যালেশন ইনজুরি রয়েছে। বর্তমানে তাদের জরুরি বিভাগের অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। তাদের শরীর স্ট্যাবল হলে ছেড়ে দেওয়া হবে।

আহত মামুনের আত্মীয় জোসনা জানান, মামুন ও সোহেল এআর ফ্যাশনে চাকরি করে। মামুন কাটিং মাস্টার হিসেবে এবং সোহেল ফিনিশিংয়ের কাজ করে। অন্যদিকে সুরুজ এই গার্মেন্টসে অর্ডার দেওয়া ছিল, সেগুলো কোয়ালিটি চেক করার জন্য এসেছিল।

নিখোঁজ অনেকে, স্বজনদের আহাজারি :

১৪ বছর বয়সি ভাগনি মাহিরার খোঁজে ঘটনাস্থলে ছোটাছুটি করছিলেন মো. শফিকুল ইসলাম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ভাগনি মাহিরা ওই কারখানার তিন তলায় কাজ করত। আগুন লাগার পর থেকেই খুঁজছি। কোনো হাসপাতালেও পাইনি। ফায়ার সার্ভিস বলেছে ধৈর্য ধরতে।’ একইভাবে নিখোঁজ নারগিস আক্তারের বড় বোন লাইজু বেগম কান্না কণ্ঠে জানান, সকাল পৌনে ৮টায় আমার বোন কাজে গিয়েছিল। সাড়ে ১১টার দিকে খবর পেলাম আগুন লেগেছে। তখনই জানতে পারি, কেউ ভেতর থেকে বের হতে পারেনি। এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ নেই। 

ভেবেছি ভূমিকম্প হচ্ছে :

‘হঠাৎ একটি শব্দ শুনলাম। বিল্ডিংটা কেঁপে উঠল। ভাবছিলাম, ভূমিকম্প হচ্ছে। কিন্তু পরে দেখি ধোঁয়া আসছে জানালা দিয়ে। ধীরে ধীরে ধোঁয়া বাড়তে থাকে। এরপর আর বের হতে পারছিলাম না। মনে হয়েছে আজই বুঝি জীবনের শেষ দিন। কিন্তু আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’ এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন রাজধানীর মিরপুর শিয়ালবাড়িতে অগ্নিকা-ের ঘটনায় দগ্ধ আল মামুন (৩২)। যিনি বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। তার সাথে আরও দুজন চিকিৎসাধীন। আল মামুন বলেন, আমি আরএন ফ্যাশন নামে গার্মেন্টসের কাটিং মাস্টার। গার্মেন্টসটি ভবনটির ৩ ও ৪ তলায় অবস্থিত। বেলা সাড়ে ১১টায় পাশের একটি ভবনে বিকট শব্দ হয়। প্রথমে ভেবেছিলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। পরে ধোঁয়া দেখতে পাই। 

এর মধ্যেই ধোঁয়া আমাদের ভবনে ঢুকে পড়ে। ৪ তলাতে আটকে পরি আমি। তখন পাশের অন্য একটি বিল্ডিং থেকে ওয়াল ভেঙে আমাকে বের করে। তাদের ওই ভবনটি ৫ তলা বিশিষ্ট। ৩য় তলায় সুইং সেকশন। সেখানেও বহু ওয়ার্কার ছিল। আহত সোহেল সরদার (৩২) বলেন, আমি ৩য় তলায় ফিনিশিং সেকশনে কাজ করি। ধোঁয়া দেখে বের হওয়ার সময় ২য় তলায় আটকে পড়ি। তখন ২য় তলায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে সেখান থেকে আমাকে বের করে উদ্ধার কর্মীরা।

আহত সুরুজ উজ্জামান (৩২) বলেন, আমি আব্দুল্লাহপুরের টেক্সজোরা গ্লোবাল নামে একটি বায়িং হাউসে কাজ করি। একটি অর্ডারের কাজে শিয়ালবাড়ির আরএন ফ্যাশনে গিয়েছিলাম। আগুনের পর আমি সেখানে আটকে যাই। পরে নিজেই চেষ্টা করে বের হই।

এর আগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিয়ালবাড়ির একটি পোশাক কারখানা ও পাশের কসমিক ফার্মা নামের কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত ১৬ জন নিহতসহ দগ্ধ হন অন্তত ২০ জন, যাদের চিকিৎসা চলছে বিভিন্ন হাসপাতালে। তবে এর মধ্যে তিনজনকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আহতরা হলেনÑ মামুন (৩৫), সোহেল (৩২) ও সুরুজ (৩০)।