ঢাকা বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ধোঁয়াশা 

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ১২:১০ এএম

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়িতে একটি পোশাক কারখানা ও একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের সূত্রপাত জানাতে পারেনি কেউ। আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ধোঁয়াশায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

গতকাল বিকেলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যারা শুরুতে আগুন নেভাতে এসেছেন, তারা রাসায়নিকের গোডাউন ও পোশাক কারখানার দুই দিকেই আগুন দেখেছেন।

তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, রাসায়নিকের গুদামের পাশে একটি ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে। সেখানে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গোডাউনে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন পোশাক কারখানার ওই পাঁচতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, ওই কারখানা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আরএন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। সেখানে গেঞ্জি তৈরি করা হতো। দোতলায় ছিল টি-শার্ট প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, নাম স্মার্ট প্রিন্টিং। আর পাঁচতলায় বিসমিল্লাহ ফ্যাশন নামে আরেকটি প্রিন্ট কারখানা চলছিল। আগুন লাগার পর কারখানা ভবন থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে আটকা পড়েন।

ঘটনার পর থেকে রাসানিকের গুদামের মালিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গোডাউনটিতে কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান বা লাইসেন্স ছিল না।

ওই ভবনের তিন ও চার তলায় অবস্থিত ছিল ‘আরএন ফ্যাশন’ নামে একটি গার্মেন্টস। সেখানেই কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করেন নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি চারতলায় কাজ করছিলাম। হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পাই। জানালা খুলে দেখি সামনের কেমিক্যাল আর ওয়াশ ফ্যাক্টরির মাঝখান দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। আগুন আমাদের দিকেই ছুটে আসছে। নিচে নামার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারিনি। চারতলায় আমরা আটকে পড়েছিলাম। পরে ভবনের পেছনের দিকের জানালা ভেঙে এক ব্যক্তি তাদের সাতজনকে বের করে আনেন। আমরা পাশের টিনশেডের ওপর লাফ দেই। কোনোমতে বাঁচতে পেরেছি। তবে তিনতলার কেউ বের হতে পেরেছে কি না জানি না।

নাজমুলের ভাষ্য অনুযায়ী, ভবনটি ছিল পাঁচতলা। প্রতিটি ফ্লোরে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ জন করে কর্মী কাজ করতেন। পাঁচতলার কর্মীরা সবাই বের হতে পেরেছেন বলে জানা গেলেও তিনতলার অনেকের খোঁজ এখনো মেলেনি। তিনি আরও জানান, দোতলায় ছিল ‘স্মার্ট প্রিন্টিং’ নামে একটি টি-শার্ট প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, যেখানে ছয়জন কর্মী ছিলেন। সেদিন তাদের ছুটি থাকায় সবাই নিরাপদে ছিলেন। ভবনের নিচতলা ছিল খালি।

নাজমুল জানান, তিন নম্বর সড়কের ওই ভবনের হোল্ডিং নম্বর ৪১। চারতলার ওপরে টিনের ছাউনি দিয়ে আরেকটি তলা তৈরি করা হয়েছিল। ভবনের মাঝখানে ছিল একটি মাত্র সিঁড়ি যা দিয়ে কর্মীদের ওঠানামা করতে হতো।

বেঁচে ফেরা নাজমুলের চোখে এখনো সেই আগুনের লেলিহান শিখা ভাসে, আমরা যারা বের হতে পেরেছি, শুধু আল্লাহর রহমতেই বেঁচে গেছি।