শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৫, ১১:৫৬ পিএম

জুলাই-যোদ্ধাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৫, ১১:৫৬ পিএম

জুলাই-যোদ্ধাদের সঙ্গে  পুলিশের সংঘর্ষ

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসনের দাবিতে জুলাই সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এ সময় পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর করা হয় এবং একটি প্যান্ডেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা ধরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিকে জুলাই সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে লাঠিচার্জ ও হামলার প্রতিবাদে এবং অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ সারা দেশের বেশ কয়েকটি সড়কপথ অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এতে সারা দেশে যান চলাচলের ব্যাঘাত ঘটে এবং দীর্ঘ যানজট ও ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।

পুলিশ জানায়, জুলাই-যোদ্ধারা পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, দর্শনার্থীদের প্যান্ডেলে অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করেন। এরপর সংসদ ভবন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। পাশাপাশি কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা হয় পুরো সংসদ ভবন এলাকা ও আশপাশের সড়ক।

গতকাল শুক্রবার দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় জুলাই সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুপুর ২টা পর্যন্ত চলতে থাকে তাদের ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া।  জানা যায়, গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়া জুলাই-যোদ্ধাদের মঞ্চ এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।  একপর্যায়ে তারা সংসদ ভবন এলাকার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও এবিপিএন সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং লাঠি হাতে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং দোকানপাট সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। জুলাই-যোদ্ধারা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার গেট থেকে বেরিয়ে বিপরীত দিকে অবস্থানরত পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় পুলিশকে ধাওয়া দিলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। পুলিশ তখন জুলাই-যোদ্ধাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এ সময় সেচ ভবনের সামনে আগত দর্শনার্থীদের জন্য স্থাপন করা প্যান্ডেলে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ তখন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পরপর দুটি সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সয়ম জুলাই-যোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে খামারবাড়ি মোড়ের দিকে যেতে থাকেন। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাড়াও আসাদগেট এলাকা কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাঁচ শতাধিক বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারী নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার মূল মঞ্চ এবং অতিথিদের জন্য নির্ধারিত স্থানে বসে পড়েন। বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, সনদ প্রণয়নে তাদের পরামর্শ নেয়নি সরকার। একই সঙ্গে স্বীকৃতি না দিয়ে করা হয়েছে অবমূল্যায়ন। ঘোষণাপত্রের মতো এখানেও আইনি ভিত্তি না থাকার অভিযোগ তাদের। দুপুর ১টার দিকে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত হন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরা। হত্যার বিচার, জুলাই-যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত সম্মান, আর্থিক সহায়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আশ্বস্ত করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তবে আলী রীয়াজের বক্তব্যেও আশ্বস্ত হতে পারেননি জুলাই-যোদ্ধারা। এর পরই তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে শুরু হয় পুলিশি অ্যাকশন।

এতে অন্তত ৪০ জন ‘জুলাই-যোদ্ধা’ আহত হয়েছেন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, আহতদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে তাদের অবস্থা গুরুতর নয়। আহতরা হলেন সিনথিয়া মিম, শফিকুল ইসলাম, শফিউল্লাহ, হাবিব উল্লাহ, তানভিরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, আতিকুল গাজী, রাকিব, লাইলি প্রমুখ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বিক্ষুব্ধদের উদ্দেশে বলেন, ‘জুলাই-যোদ্ধাদের সম্মান, নিরাপত্তা ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতে কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সনদের অঙ্গীকারনামায় সংশোধন আনা হবে।’ তবে তার এই আশ্বাসে সন্তুষ্ট হতে পারেননি উপস্থিত আন্দোলনকারীরা। তারা ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলকে মঞ্চে স্থান দেওয়ার দাবি জানান এবং সনদের আইনি স্বীকৃতি ও কার্যকর বাস্তবায়নের রোডম্যাপ চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগঠক মো. মুনতাসিব ফুয়াদ বলেন, বৃহস্পতিবার রাতেও জুলাই-যোদ্ধারা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছে, তখন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে যে এখন আর কিছুই করার নেই। পরে জুলাই-যোদ্ধাদের বিভিন্ন গ্রুপে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আমরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ জুলাই সনদ যদি জুলাই-যোদ্ধাদের মনোঃপূত না হয়, তাহলে এটি বাস্তবায়নের কোনো মানে নেই। যাদের রক্তের ওপর এ সরকার গঠিত, তাদের মারধর করা হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক।

যাদের রক্তের ওপর সরকার গঠিত, তারাও গুলি করে: ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আহত সিনথিয়া মিম বলোন, ‘যাদের রক্তের ওপর সরকার গঠিত হলো, তারাই জুলাই-যোদ্ধাদের ওপর গুলি করল। ক্ষমতার লোভে পড়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও অবশেষে আওয়ামী ফ্যাস্টিসদের মতো ফের রাজনীতিতে প্রবেশ করল, যা দেশের জন্য অমঙ্গল।  তিনি বলেন, জুলাই-যোদ্ধাদের অপমান করে এ দেশের মাটিতে কেউ রেহাই পাবে না।  প্রয়োজনে জীবন দিব, তার পরও দাবি আদায়ের লড়াই চলছে, চলবে।’

আহতদের মধ্যে একজন জুলাই আন্দোলনে আহত হয়ে ডান হাত হারানো আতিকুল গাজী বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেওয়ার প্রতিবাদে আমরা জুলাই শহিদ পরিবার ও আহত যোদ্ধারা আন্দোলন করে আসছিলাম। সরকার আমাদের দাবিতে সাড়া না দিয়ে আজ জুলাই সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠান করতে গেলে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদে দাঁড়াই। তখন হঠাৎ পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।’

আহত আতিকুল গাজী বলেন, তার বাসা উত্তরা এলাকায়। স্বাক্ষর হতে যাওয়া জুলাই সনদের প্রতিবাদ জানাতে তারা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এসেছিলেন। সেখান থেকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে লাঠিপেটা করে। এলোপাতাড়ি লাঠির আঘাতে আহত হন তারা। আতিকুল গাজী আরও বলেন, ‘যে জুলাই আমাদের মাধ্যমে এসেছে, সেই জুলাই সনদে যদি আমরাই না থাকি, তাহলে এই সনদ আমরা মানি না। আমি মনে করি, এই সরকার ব্যর্থ, জুলাই সনদটাও ব্যর্থ।’

আন্দোলনকারী শামীম হাসান বলেন, ‘শুরুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ি অবস্থানে থাকলে আমরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারতাম না। আমাদের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে পরে পেটানো হলো। আমরা আইন ভাঙার পক্ষে না। তবে যেটি করা হয়েছে, সেটি মেনে নেওয়ার মতো না। জুলাই-যোদ্ধা আজমী ফেরদৌস বলেন, সংবিধানে জুলাই-যোদ্ধাদের স্বীকৃতি না এলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!