শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ১২:০৫ এএম

রাকসুতেও শিবিরের ইতিহাস ভিপি, এজিএসসহ ২০ পদে জয়

মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ১২:০৫ এএম

রাকসুতেও শিবিরের ইতিহাস  ভিপি, এজিএসসহ ২০ পদে জয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ২৩ পদের মধ্যে ভিপি, এজিএসসহ ২০ পদে এবং সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচ পদের মধ্যে তিনটিতে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। এ ছাড়া ১৭টি হল সংসদের শীর্ষ ৫১ পদে বিপুল ভোটে বিজয় পেয়েছে শিবির ও ছাত্রী সংস্থা মনোনীত প্যানেল। অন্যদিকে জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার। দীর্ঘ ৩৫ বছর পরে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় প্রকাশ করা হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট ও তাদের আকাক্সক্ষা নিয়েই তারা কাজ করবেন। 

এর আগে রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় মোট ১৬ বার। ওই নির্বাচনগুলোয় বিজয়ী হয় বামপন্থি ধারার রাজনৈতিক দলগুলো। এর মধ্যে অন্তত ছয়বার শীর্ষ পদে বিজয়ী হয়েছিল ছাত্র ইউনিয়ন, সাতবার ছাত্রলীগ, তিনবার জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র মৈত্রী বিজয়ী হয়েছিল দুবার। ওই নির্বাচনগুলোতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি শিবির। তবে সময়ের পরিক্রমায় সেই ঐতিহ্য হারিয়েছে বামপন্থি দলগুলো। এ বছরের নির্বাচনে তাদের মধ্য থেকে কেউ কোনো পদে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করে ‘ভূমিধস’ জয় পেয়েছে শিবির মনোনীত প্যানেল। কেন্দ্রীয় সংসদের ভিপি, এজিএসসহ ২৩ পদের মধ্যে ২০ পদ, ১৭টি হল সংসদে ভিপি, জিএস এবং এজিএসের ৫১ পদের সব কটিতে এবং সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি পদের তিনটিতে জয় পেয়েছে শিবিরের প্যানেল। 

বিজয়ী হলেন যারা : ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ভিপি পদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১২ হাজার ৬৮৭। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল প্যানেলের শেখ নূর উদ্দিন আবীর পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৭ ভোট। জিএস পদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন আধিপত্যবিরোধী প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৩৭। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭২৯টি। এদিকে এজিএস পদে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের প্রার্থী এস এম সালমান সাব্বির পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৪১ ভোট।

ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের বিজয়ীরা হলেনÑ ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, এজিএস এস এম সালমান সাব্বির, সহকারী ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক আবু সাঈদ মোহাম্মাদ নুন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা, সহকারী সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মো. রাকিবুল ইসলাম, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সাইয়িদা হাফছা, সহকারী মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সামিয়া জাহান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বি এম নাজমুছ সাকিব, সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সিফাত আবু সালেহ, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. মুজাহিদ ইসলাম, সহকারী মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক আসাদুল্লাহ গালিব, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সাঈম, বিতর্ক ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক ইমরান লস্কর, সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক মো. নয়ন হোসেন, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাসুমা ইসরাত মুমু। এ ছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মো, দ্বীপ মাহবুব, সুজন চন্দ্র, মো. ইমজিয়াউল হক কামালি এবং এ বি এম খালেদ নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে ছাত্রদল মনোনীত নারগিস খাতুন নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে তোফায়েল আহমেদ (স্বতন্ত্র) নির্বাচিত হয়েছেন।

সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে পাঁচজনের মধ্যে শিবির মনোনীত তিনজন নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেনÑ মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, ফাহিম রেজা এবং এস এম সালমান সাব্বির। অন্য দুজন সিনেট সদস্য হলেন সালাহউদ্দিন আম্মার ও আকিল বিন তালেব।

হল সংসদে শীর্ষ পদে বিজয়ী যারা: নির্বাচনে ১৭টি হল সংসদে শীর্ষ পদ ৫১টি। সবগুলোতেই বিজয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির ও ছাত্র সংস্থার প্যানেল সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। মাদার বখশ হল সংসদে ভিপি পদে মো. রুবেল আলি ও জিএস পদে ইব্রাহিম হোসাইন, শেরেবাংলা ফজলুল হক হলে ভিপি রানা হোসাইন ও জিএস তানজীল হোসাইন, শাহ মখদুম হলে ভিপি শামীম পাটোয়ারী ও জিএস বায়জিদ, নবাব আব্দুল লতিফ হলে ভিপি নেয়ামত উল্যাহ ও জিএস নুরুল ইসলাম শহীদ, সৈয়দ আমির আলি হলে ভিপি নাঈম ইসলাম ও জিএস সাব্বির ইসলাম, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে ভিপি আশিকুর রহমান ও জিএস সোয়াইব হোসেন, হবিবুর রহমান হল সংসদে ভিপি আহমাদ আহসান উল্লাহ ফারহান ও জিএস আশিক শিকদার, মতিহার হলে ভিপি তাজুল ইসলাম ও জিএস আরিফুল ইসলাম, সোহরাওয়ার্দী হলে ভিপি কাউসার হাবিব ও জিএস সাচ্ছু হোসেন এবং বিজয়-২৪ হলে ভিপি রাছেল মিয়া ও জিএস ইমরুল হাসান মিশকাত নির্বাচিত হয়েছেন।

এ ছাড়া নারীদের হলগুলোর সংসদেও বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে ছাত্রী সংস্থার প্যানেল। বেগম খালেদা জিয়া হল সংসদে ভিপি সাবরিনা মারজান ও জিএস জারিন তাসনিম রিফা, জুলাই-৩৬ হলে ভিপি সৈয়দা সমাপিকা আহমেদ সিমি ও জিএস তাসফিয়া তাবাস্সুম, রহমতুন্নেসা হলে ভিপি সাইফুন নাসিরা ও জিএস হাবিবা আক্তার রিয়া, মন্নুজান হলে ভিপি সুমাইয়া জাহান ও জিএস তাসমেরি জাহান তন্বী, রোকেয়া হলে ভিপি অর্পণা হক মুগ্ধ ও জিএস মোসা. লায়লা খাতুন এবং তাপসি রাবেয়া হলে ভিপি মরিয়ম খাতুন ও জিএস তাওহিদা আক্তার বিজয়ী হয়েছেন।

‘বিজিতদের পরামর্শ নিয়েই ক্যাম্পাস গড়ে তুলব’: ফলাফল ঘোষণা শেষে রাকসুর নবনির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) মোস্তাকুর রহমান জাহিদ সংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে এক পদে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। বিজিতদের পরামর্শ, সহযোগিতা নিয়েই ক্যাম্পাস গড়ে তুলব। শিক্ষার্থীরা আমাদের জয়ী করেছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট অনুযায়ী কাজ করব। যারা জয়ী হতে পারেননি, তাদের সংখ্যা বেশি। তারাও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন বলে আশা করি।’

এদিকে ছাত্রশিবির প্রথমবারের মতো রাকসুতে বিজয় পেয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদ বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন সময়ে অনেক জুলুম-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমরা আর এগুলো দেখতে চাই না। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেছি। এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন ইতিহাস তৈরি হলো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৩৫ বছরের অচলাবস্থা ভেঙে দিয়েছেন।’

‘শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেটের বাইরে আমি এক মুহূর্ত থাকব না’: নবনির্বাচিত জিএস সালাউদ্দিন আম্মার ফলাফল ঘোষণার পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ম্যান্ডেট শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেটের বাইরে আমি এক মুহূর্ত থাকব না, ইনশাআল্লাহ। আজ থেকে এক বছর পরে দায়িত্ব পালন শেষে আপনারা আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন যে কেমন লাগছে। যদি দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে পারি, তাহলে হয়তো এভাবে সম্মানের সঙ্গে আপনাদের কাছে এসে বলতে পারব যে আমি এই দায়িত্ব পালন করেছিলাম। যে সম্মান নিয়ে আজকে ঢুকছি, সেই সম্মানটা নিয়ে বের হতে চাই।’

এ সময় আম্মারের পাশে বসে ছিলেন তার মা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে যে আদর্শ ও শিক্ষা দিয়ে তাকে মানুষ করেছি, আমি চাই যে সে সেই আদর্শ ও শিক্ষাটা পূর্ণ করে শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট অনুযায়ী সামনে কাজ করবে।’

ছাত্রদল প্যানেলের একমাত্র বিজয়ী নার্গিস : নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মোছা. নার্গিস খাতুন। তিনিই ছাত্রদল প্যানেল থেকে একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী। মোছা. নার্গিস খাতুন জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড়। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৪ সাল থেকে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে খেলেন নার্গিস। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল ছাড়াও অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় নারী দলের হয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি।

নির্বাচনে জয়লাভ করে মোছা. নার্গিস আক্তার বলেন, ‘রাকসুতে আমি ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। এটা আমার জন্য গর্বের, সম্মানের। এখানে শুধু আমি জয়ী হইনি, জয়ী হয়েছেন আমাকে ভোট দেওয়া প্রত্যেক ভোটার, জয়ী হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যারা দলবল-নির্বিশেষে যোগ্যতার মূল্যায়ন করেছেন।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!