আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’ মোকাবিলার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। নির্বাচন-সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ১৫ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হবেও বলে জানান তিনি।
গতকাল বুধবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক হয়। বৈঠক থেকে এমন নির্দেশনা এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠক বিষয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড়ঝঞ্ঝাই আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’
সামাজিক মাধ্যমের অপতথ্য নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার আসবে, নির্বাচন বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর থেকে, বাইরে থেকে খুবই পরিকল্পিতভাবে নানা রকম অপপ্রচার চালানো হবে। এআই ছবি-ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটাকে সামাল দিতেই হবে। একটা অপপ্রচারের রচনা হওয়া মাত্র সেটা ঠেকাতে হবে, যেন ছড়াতে না পারে।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুন্দর ও উৎসবমুখর করতে হলে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। নির্বাচনি নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম, কীভাবে ভোট প্রদান করতে হবে, কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে কী করতে হবে, এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এই আলোকে ইলেকশন কমিশন এবং কালচারাল মিনিস্ট্রিকে টিভিসি বা ডকুমেন্টারি তৈরি করতে হবে।
প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- নির্বাচনে আর্মি ও নেভির ৯২ হাজার ৫০০-এর মতো সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে ৯০ হাজার থাকবে সেনাসদস্য, বাকিটা নৌবাহিনীর সদস্য। এ ছাড়া নির্বাচনের ৭২ ঘণ্টা আগে এবং নির্বাচনের ৭২ ঘণ্টা পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলা বিশেষ প্রস্তুতি থাকবে।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা নিয়োগ বিষয়ে তিনি বলেন, নিজ এলাকা কিংবা শ্বশুরবাড়ি থাকে, সেখানেও তার পোস্টিং হবে না। কোনো এলাকায় আত্মীয়-স্বজন নির্বাচনে দাঁড়ালেও সেখানে পদায়ন হবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বৈঠকে বলেছেন, ৬৪ জেলার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সবচেয়ে যোগ্য লোকগুলোকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিয়োগ করতে হবে। বিগত তিনটি নির্বাচনে ডিসি, এডিসি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের এবারে নির্বাচনে যুক্ত না রাখার সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা বলেছেন প্রেস সচিব।
পদায়নের ক্ষেত্রে কর্মকর্তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, শারীরিক যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, গণমাধ্যমে অনিয়মের প্রতিবেদন হয়েছে কি না, তা দেখা হবে বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, সবচেয়ে ফিট কর্মকর্তাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পদায়ন করা হবে। তবে নিজ জেলা বা শ্বশুরবাড়ির এলাকায় কাউকে পদায়ন করা হবে না। তাদের কোনো আত্মীয়স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কি না, পদায়নের ক্ষেত্রে সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখা হবে। আগামী ১ নভেম্বর এগুলো শুরু হবে।
প্রেস সচিব আরও জানান, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ নিয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আনসার সদস্যদের প্রশিক্ষণ আরও কার্যকর করার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। বডি ওর্ন ক্যামেরা নিয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে কথা হয়েছে। প্রশিক্ষণসংক্রান্ত ভিডিও ও উপকরণগুলো যেন ১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট, টিভি বা বিটিভিতে আসে, সে বিষয়ে দ্রুত কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। সংসদ অধিবেশন না থাকায় এখন সংসদ টেলিভিশন ব্যবহৃত হচ্ছে না, তাই নির্বাচন কমিশন সংসদ টিভিকে ব্যবহার করে নির্বাচনসম্পর্কিত যাবতীয় প্রচার করতে চাইছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বিশেষ সহকারী আব্দুল হাফিজ, বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া, নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, কোস্টগার্ড মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল জিয়াউল হকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন