বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ১০:৫৯ পিএম

অদৃশ্য কারণে আটকা উদ্বোধন

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ১০:৫৯ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে এই ইউনিটের রিয়্যাক্টর কন্টেইনমেন্টে (সুরক্ষা ব্যূহ) অভেদ্যতা ও কাঠামোগত স্থিতিশীলতার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। নিরাপত্তা মান অনুযায়ী গঠিত এই পরীক্ষায় কন্টেইনমেন্টের দৃঢ়তা এবং চাপে সহনশীলতা যাচাই করার পরিপ্রেক্ষিতে নিশ্চিত হয়েছে নিরাপত্তা। প্রকল্পটি পরিচালনার জন্য রাশিয়ার ত্রয়িতস্কে রসাটম গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রকল্পের একটি দলকে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণও। ভিভিইআর চুল্লিতে কীভাবে কম্পিউটার বিশ্লেষণ টুল ব্যবহারের মাধ্যমে পরমাণু জ্বালানির ব্যবস্থাপনা করা হবে, সে বিষয়ে দক্ষ হয়েছেন তারা। শেষ হয়েছে কাক্সিক্ষত সঞ্চালন লাইনের কাজও।

শুধু হট মিডিয়া টেস্টের অপেক্ষায় থাকা কেন্দ্রটির উদ্বোধন আটকে গেছে অদৃশ্য কোনো কারণে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বার বারই জানানো হয়েছিল শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উদ্বোধন করবেন এটি। কিন্তু অক্টোবর শেষ হয়ে গেলেও এ-সংক্রান্ত কোনো খবর দিতে পারেনি সরকারের কোনো সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মূলত কূটনৈতিক কারণেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন আটকে আছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, নকশা অনুযায়ী নির্ধারিত চাপমাত্রা প্রয়োগ করে একটি শক্তিশালী কম্প্রেসরের মাধ্যমে ভেতরের চাপ বাড়ানো হয়। এ সময় কন্টেইনমেন্ট কাঠামো কতটা চাপ সহ্য করতে পারে, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। পরীক্ষাটি ছিল জ্বালানি লোডের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারণ, পারমাণবিক কোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রিয়্যাক্টর কন্টেইনমেন্টই হয়ে দাঁড়ায় প্রতিরক্ষার শেষ স্তর। এই স্তরটি সফলভাবে পার হয়েছে। এই কন্টেইনমেন্ট নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে প্রি-স্ট্রেসড রিইনফোর্সড কংক্রিট ও শক্তিশালী ইস্পাত আবরণ। এমন কাঠামো যাতে তেজস্ক্রিয় উপাদান কোনোভাবেই বাইরে ছড়াতে না পারে, এমনকি বড় ধরনের দুর্ঘটনার সময়ও যেন ভেতরে সুরক্ষিত থাকে, সেই লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়েছে এই ব্যূহ।

রাশিয়ার প্রযুক্তি ও অর্থায়নে গড়ে তোলা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রয়েছে দুটি ভিভিইআর-১২০০ ধরনের ৩+ প্রজন্মের চুল্লি, যার প্রত্যেকটির উৎপাদনক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রসাটমের প্রকৌশল শাখা।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বার বার বলা হচ্ছিল গত মার্চ মাসেই উৎপাদনে আসবে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এমনকি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রোসাটম থেকে খোদ প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছিলÑ শেষ হয়ে গেছে এটির নির্মাণকাজ। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দাবি মতে, সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হয়নি এত দিন। এখন সঞ্চালন লাইন পুরোপুরি প্রস্তুত। শেষ হয়েছে সব ধরনের সুরক্ষা পরীক্ষাও। তাই উদ্বোধনে আর বাধা থাকছে না জানিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আনোয়ার হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এত দিন আমাদের মাথাব্যথা ছিল সঞ্চালন লাইন নিয়ে। এর কাজ মোটামুটি শেষ। আমাদেরও কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ।

এখন একটা নির্দিষ্ট সময় দেখে উদ্বোধন করার পালা। তবে ঠিক কবে নাগাদ এটি হবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজে এ কাজের উদ্বোধন করবেন।’ তাহলে কি কেন্দ্রের কাজ শতভাগ শেষ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটি আসলে হ্যাঁ বা না দিয়ে উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। এখানে গ্রিড লাইন সিনক্রোনাইজেশনের বিষয় আছে। টেকনিক্যাল বিষয়ে শতাংশের হিসাবে বলা সম্ভব নয়। আমাদের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন যেটি আছে তা খুবই সামান্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে এটা তো পারমাণবিক জ¦ালানি। এটা আমাদের সবার জন্যই নতুন। রিয়্যাক্টর ভ্যাসেল একবার চালু হলে সেটি আর বন্ধ করা যাবে না।’ চলতি বছর উদ্বোধন হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করে রাশিয়ার স্টেট করপোরেশন ফর নিউক্লিয়ার এনার্জি রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচোভ জানিয়েছিলেন, প্রকল্পের ড্রাই রান চলছে। শিগগিরই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি আশ্বাস দেন, রসাটম নিরাপত্তা, গুণগত মান এবং আন্তর্জাতিক মান মেনে চলার দিকে মনোনিবেশ করে প্রকল্পটির সমাপ্তিতে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ সময় প্রধান উপদেষ্টাও যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় রোসাটমকে ধন্যবাদ জানান।

এত দিন সঞ্চালন লাইন নিয়ে সংকট থাকলেও এটির কাজও শতভাগ শেষ হয়েছে দাবি করে বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘পদ্মার ওপর আমাদের যে পাইলিংগুলোর কাজ চলছিল তা প্রায় শেষ। আমাদের তরফ থেকে আর কোনো বাধা নেই এটির উদ্বোধনে।’ তিনি পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশকে (পিজিবি) উদ্ধৃত করে জানান, ‘রূপপুর পারমণাবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন তৈরির কাজ হয়েছে সাতটি প্যাকেজের মাধ্যমে। এর মধ্যে রূপপুর থেকে বাঘাবাড়ী পর্যন্ত ৬৫ দশমিক ৩১ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজের অগ্রগতি শতভাগ। আমিনবাজার থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার নির্মাণকাজও শেষ। রূপপুর থেকে ঢাকা (আমিনবাজার-কালিয়াকৈর) ১৪৭ কিলোমিটার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় দুই মাস আগে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ পর্যন্ত ১৪৪ কিলোমিটার, ধামরাই পর্যন্ত ১৪৫ কিলোমিটার, বগুড়া পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার এবং ৯টি বে এক্সটেনশন নির্মাণকাজও শেষ হয়েছে।

পদ্মা নদীর ওপর যে দুইটি সঞ্চালন লাইনের কাজ চলছিল, চলতি মাসে সেটিও শেষ হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আর খুব বেশি কাজ বাকি নেই। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র চাইলেই উৎপাদনে আসতে পারে। কিন্তু ঠিক কী কারণে এর উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছে না আমার জানা নেই।’

পিজিসিবি সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রিডলাইন প্রকল্প শুরুতে ভারতীয় ঋণে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ঋণ ছাড় দীর্ঘায়িত করায় বাংলাদেশ সরকার পরে গ্রিডলাইন নির্মাণ প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ থেকে বেরিয়ে আসে। পাশাপাশি করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পে কর্মকর্তাদের যোগ দেওয়ায় ধীরগতি নামে। এতে পিছিয়ে পড়ে সঞ্চালন লাইনের কাজ। বর্তমানে পিজিবি ও সরকারের অর্থায়নে গ্রিডলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। সঞ্চালন লাইনের কাজের বিপরীতে এখন প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পড়েছে। এর মধ্যে সঞ্চালন লাইনের ঠিকাদারের বিল বকেয়া ২৫ মিলিয়ন ডলার। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে পিজিবি বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে ২৫ মিলিয়ন ডলার ছাড়ের অনুরোধ জানিয়েছে।

তবে রূপপুর চালু করতে এর বাইরে আরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ক্যাব) জ¦ালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এর সঙ্গে নিরাপত্তাব্যবস্থা, ভৌত অবকাঠামো, টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম এবং কেন্দ্র চালুর জন্য বিকল্প হিসেবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত রাখারও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পারমাণবিক কেন্দ্রটি চালাতে হলে বিকল্প হিসেবে অন্তত ১ হাজার ৯০৭ মেগাওয়াট সক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে হবে। সম্প্রতি রুশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ সুপারিশ করা হয়েছে বলেও আমরা জেনেছি। কোনো কারণে রূপপুরে বিঘœ ঘটলে বিকল্প কেন্দ্র থেকে যেন সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, সে জন্যই এ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে হবে। এ ধরনের বিকল্পকে স্পিনিং রিজার্ভ বলা হয়। তবে আমরা চাই, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এটির প্রথম ইউনিটের কাজ অন্তত শেষ হোক।’

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ প্রকল্পে বেশির ভাগ অর্থায়ন দিয়েছে রাশিয়া। ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে রাশিয়ার অর্থায়ন রয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটের সক্ষমতা মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। চলতি বছরে প্রথম ইউনিট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের মধ্য দিয়ে রূপপুর প্রকল্পের মূল পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। পরবর্তী বছর ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। এটি বাড়িয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর করা হয়েছে। তবে চুক্তি অনুসারে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও খরচ বাড়াতে পারবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজের উদ্বোধন করা হয়। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর এর প্রথম ইউনিটের ডামি ফুয়েল লোডিং শুরু হয়। এই কার্যক্রম চলে প্রায় দুই সপ্তাহ। এ সময় ১৬৩টি ডামি ফুয়েল এসেম্বলি এবং ১১৫টি কনট্রোল অ্যান্ড প্রোটেকশন সিস্টেম এবসর্বার রড লোড করা হয়। ডামি ফুয়েলের সাহায্যে রিয়্যাক্টরের সব প্যারামিটার যাচাই নিশ্চিত হওয়ার পর প্রকৃত ফুয়েল লোড করা হয়।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!