আজ থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। এই ম্যাচে জয়ে চোখ নাজমুল হোসেন শান্তদের। সর্বশেষ গত জুনে শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছিলেন তারা। পাঁচ মাস আগে দুই ম্যাচের সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে ১-০ ব্যবধানে হেরেছিল টাইগাররা। সিরিজের প্রথম টেস্টটি ড্র হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে জিতে নেয় লঙ্কানরা। ওই সিরিজের প্রথম ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্ত দুই ইনিংসেই (১৪৮ ও ১২৫) সেঞ্চুরি হাঁকানোর কীর্তি গড়েন। আর মুশফিকুর রহিম ১৬৩ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন। নাজমুল ও মুশফিক দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির জুটি গড়েন। তাদের ব্যাটিং নৈপুণ্যে গলে বাংলাদেশ দুর্দান্ত এক ড্র উপহার দিলেও পরের ম্যাচে খেই হারিয়ে ফেলে। ব্যাটিং ব্যর্থতায় ইনিংস হারের হারের স্বাদ পায় তারা। এই সিরিজ হারের পরই নেতৃত্ব থেকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সরে দাঁড়ান শান্ত। তবে অধিনায়কের দায়িত্ব আবার নিলেন এই ক্রিকেটার। এবার অধিনায়ক হিসেবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নতুন শুরু হচ্ছে শান্তর। আর এই শুরুটা জয়ে রাঙিয়ে দেওয়ার প্রত্যয় তার।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে মোহাম্মদ আশরাফুলেরও। সাবেক এই অধিনায়ক এখন জাতীয় ক্রিকেট দলের ব্যাটিং কোচ। আয়ারল্যান্ড সিরিজের জন্য নতুন এই দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। তার অধীনে বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভাগ কী পারফরম্যান্স করে, সেটিই দেখার অপেক্ষা। অপরদিকে সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৯তম টেস্ট ম্যাচ খেলবেন মুশফিকুর রহিম। এই ম্যাচটিতে তার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
টেস্ট ক্রিকেটের নবীন সদস্য আয়ারল্যান্ড। এ পর্যন্ত তাদের ১০টি টেস্ট ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে কম অভিজ্ঞ হলেও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ সহজ হবে না। কারণ- সর্বশেষ তিনটি টেস্ট ম্যাচেই জিতেছে আইরিশরা। এর মধ্যে আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে তারা। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৩ রানের টেস্ট ম্যাচ জিতেছে তারা। এই পারফরম্যান্স বাংলাদেশ সফরে আয়ারল্যান্ড দলকে বাড়তি আত্মবিশ^াস জোগাবে। এ ছাড়া ২০২৩ সালের এপ্রিলে ঢাকায় এসে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি টেস্ট ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাও আছে আয়ারল্যান্ডের। মিরপুরে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জিতলেও টেস্ট ক্রিকেটের নতুন দল হিসেবে ভালো লড়াই করেছে আইরিশরা। এই অভিজ্ঞতা এবার কাজে দেবে তাদের। ঘরের মাঠে খেললেও আইরিশদের সামনে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কেননা বাংলাদেশের ক্রিকেটের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। টানা সিরিজ হারের পর ওয়ানডে ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ালেও টি-টোয়েন্টিতে আবার পথ হারিয়েছে। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ক্যারিবীয়দের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হেরেছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি-দুই ফরম্যাটের ক্রিকেটেই বাংলাদেশের ব্যাটিং হতাশ করছে। আর টেস্ট ক্রিকেটে তো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না নির্বোধ সমর্থকরাও। আড়াই দশক ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেললেও এখনো টেস্ট ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জটা নিতে জানে না বাংলাদেশ! তাদের পারফরম্যান্সেও সেটির প্রতিফলন ঘটেছে। সর্বশেষ ১০ টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের জয় মাত্র দুটি। একটি ম্যাচে ড্রয়ের রেকর্ড। আর বাকি ৭টি ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে দুইবার ইনিংস হারের রেকর্ডও রয়েছে।
বেতার ভবনের সামনে হাতবোমা বিস্ফোরণ
এ ছাড়া ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় বাংলাদেশ বেতার ভবনের সামনে হাতবোমা ফাটানো হয়। সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে এই বিস্ফোরণ ঘটে বলে শেরেবাংলানগর থানার ওসি ইমাউল হক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বেতার ভবনের প্রধান ফটকের সামনে কে বা কারা একটি ককটেল ছুড়ে মারলে সেটি বিস্ফোরিত হয়। তবে কেউ হতাহত হননি।’
পুলিশ আশপাশের সিসিটিভি ভিডিও দেখে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করছে বলে জানান। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণার মধ্যে সোমবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত পাঁচ জায়গায় ককটেল হামলার খবর দিল পুলিশ। এদিন ভোর পৌনে ৪টার দিকে মিরপুর গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে হাতবোমা ছুড়ে পালিয়ে যায় দুই ব্যক্তি।
এরপর মোহাম্মদপুরে স্যার সৈয়দ রোডে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের খাদ্যপণ্যের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘প্রবর্তনা’র সামনে ও সীমানার ভেতরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে সকাল ৭টা ১০ মিনিটের দিকে। এ ছাড়া ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে রাপা প্লাজার কাছে মাইডাস সেন্টারের সামনে এবং ধানমন্ডি ৯/এ ইবনেসিনা হাসপাতালের সামনে সকাল ৭টার দিকে ককটেল ফাটানো হয়।
এসব বিষয়ে রাজনৈতিক ও অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ ১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফ্যাসিবাদের পক্ষ থেকে আন্দোলন বা ব্লকেডের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের গুজব ও অপপ্রচারÑ যার মধ্যে রয়েছে গণসমাবেশ ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, লকডাউন ঘোষণাসহ নানা গুজব, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার আশঙ্কা এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগ। এসব বিষয়ে প্রশাসন চোখ-কান খোলা রাখতে হবে এবং সব বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন অপরাধ বিশ্লেষকেরা।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খোন্দকার রফিকুল বলেছেন, ‘রাজধানীসহ সারা দেশে চেকপোস্ট বাড়ানোর পাশাপাশি তল্লাশি কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। ১৩ নভেম্বর ঘিরে কোনো দল বা গোষ্ঠী বিশেষ কিছু ঘটাবে বলে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা অপপ্রচার আছে। এসব অপপ্রচারকে সামনে রেখে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই সঙ্গে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে আগুন দেওয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার বাংলাদেশ পুলিশ।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি: ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়িয়েছি। যেখান থেকে যে ধরনের তথ্য পাচ্ছি সব ধরনের তথ্যকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। বিভিন্ন মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বিশ্লেষণ করে এরই মধ্যে বেশ কিছু দলীয় কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ ওই কর্মকর্তা জানান, দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত ১৪ মাসে তারা ঝটিকা মিছিলসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু পুলিশি তৎপরতায় বারবার ব্যর্থ হয়েছে। তাই পুরোনো কৌশল বাদ দিয়ে এবার তারা নতুন কিছু করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে ব্যাপক হতাহতের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করতে চায়। নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রায় শতাধিক পরিকল্পনাকারীকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ।’
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষে এই মুহূর্তে বড় কিছু করা সম্ভব নয়। তবে ১৩ নভেম্বর ঘিরে ফেসবুক এবং ইউটিউব থেকে আমরা অনেক ধরনের তথ্য পাচ্ছি। এসব তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিচ্ছি। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশ কয়েক দিন ধরেই কাজ করছে। মাঠে থাকবে রাজনৈতিক দলগুলোও।’ আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোনো থ্রেট না থাকলেও আমরা বেশ কিছু নেতাকর্মীকে নজরদারিতে রেখেছি।’
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরাও সেগুলো আমলে নিয়ে মাঠে আছি। নিষিদ্ধ কোনো সংগঠন যেন অরাজকতা চালাতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট তৎপর আছি। কেউ নাশকতার চেষ্টা চালালে আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
আওয়ামী লীগকে প্রেস সচিবের হুঁশিয়ারি
নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষে ঢাকার রাজপথে ঘোষিত কর্মসূচি কঠোরভাবে দমন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে জুলাই বিপ্লবীদের ‘ধৈর্যের পরীক্ষা না নেওয়ার’ আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘এটা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর নয়, এটা নতুন বাংলাদেশ।’
জুলাই অভ্যুত্থান দমাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচারের রায় ঘনিয়ে আসায় ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে গতকাল সোমবার ঢাকায় দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে; কয়েক জায়গায় বোমাবাজির ঘটনাও ঘটেছে।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা আন্দোলনে জামায়াতকর্মীদের সঙ্গে সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে শফিকুল আলম বলেন, ‘বিএএল, তাদের সহযোগী এবং তাদের গণহত্যাকারী নেতারা মনে করছেন যেন আবারও ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ফিরে এসেছে। তারা কল্পনা করছে দিবালোকে এক ডজন মানুষ হত্যার পর হাজার হাজার গু-া নিয়ে মধ্য ঢাকার রাস্তায় দখল নেওয়ার দৃশ্য। কিন্তু দুঃখিত, এটা এখন একটি নতুন বাংলাদেশ। নিষিদ্ধ রাজনৈতিক বা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর যেকোনো সমাবেশের প্রচেষ্টাই আইনের পূর্ণশক্তির মুখোমুখি হবে।’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাইয়ের বিপ্লবীদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। আর মনে রাখবেন, এটা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর নয়, এটা জুলাই, চিরকালের জন্য।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন