গত পাঁচ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয় ছয়জনের। বছরের শেষে এসেও ডেঙ্গুতে এমন ঊর্ধ্বমুখী মৃত্যুহারে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। এ সময়টায় নতুন করে আরও আক্রান্ত হয়েছে ৭৮৮ জন। মারা যাওয়া ছয়জনের মধ্যে তিনজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা। এ নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে এবং শনাক্ত রোগী ৮৭ হাজার ৭১২ জনে পৌঁছেছে।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০৮ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩০ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৬৬ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৮৬ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮৮ জন এবং সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) তিনজন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ৯৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী। এ নিয়ে চলতি বছর আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মোট ছাড়পত্র পেয়েছে ৮৪ হাজার ৫৭০ জন। আর চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছে ৬২ দশমিক ৪০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ নারী।
নভেম্বর শেষ হতে চলল। এরই মধ্যে আবহাওয়ায় ঠান্ডা অনুভূতি হচ্ছে। এই সময়টায় অন্যান্য বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও চলতি বছর এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও মৃত্যুকে আশঙ্কার কারণ হিসেবেই অভিহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ বছরের নভেম্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে হার আমরা দেখছি, তা অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় বেশি। এর একমাত্র কারণ মশার প্রজনন হার বৃদ্ধি। বাসা-বাড়িতে জমানো পানি থাকছেই। এ ছাড়া রয়েছে নির্মাণাধীন ভবন। এসব জায়গায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে। তাই মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা ছাড়া বিকল্প আর নেই।’
একই কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসার কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু যদি কেউ হাসপাতালে আসতেই দেরি করে, তাহলে বা জ¦রে আক্রান্ত হয়েও চিকিৎসকের পরামর্শ না নেয়, তাহলে আমাদের জানার উপায় কী? আর মশা মারার কাজ তো আমাদের না। যেসব কর্তৃপক্ষ আছে, তারা তাদের কাজটি ঠিকমতো করবে বলে আমরা আশা করছি। তবে সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি, সেটা হলো ব্যক্তি সচেতনতা।’
২০২৩ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। গত বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫৭৫ জনের এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন।

