সফরকারী আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে ১০০তম টেস্ট ম্যাচ খেলছেন মুশফিকুর রহিম। অনুমিতভাবেই গতকাল সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ঐতিহাসিক ম্যাচটি রাঙিয়ে দিলেন এই উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান। নিজের শততম টেস্টে বিশে^র ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি হাঁকানোর রেকর্ড গড়লেন মুশফিক। মুশফিকের রেকর্ড গড়ার দিন সেঞ্চুরি হাঁকালেন লিটন দাসও। এই জোড়া সেঞ্চুরির সুবাদে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৪৭৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে ৯৮ রান সংগ্রহ করে আয়ারল্যান্ড।
দ্বিতীয় দিন সেঞ্চুরির জন্য মাত্র ১ রানের অপেক্ষায় ছিলেন মুশফিক। তার ব্যাটের দিকেই নজর ছিল সবার। মুশফিক ৮ বল খেলে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপহার দিলেন। জর্ডান নিলের বলে দৌড়ে এক রান নিয়ে মুশফিক পৌঁছে যান রেকর্ড সেঞ্চুরিতে। সেঞ্চুরি করে কিছুটা থমকেই যেন গিয়েছিলেন মুশফিক। ধীরস্থিরভাবে হেলমেট খুলে তা উঁচিয়ে ধরেছেন বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের দিকে। মাঠেই সেজদা দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানান সৃষ্টিকর্তার প্রতি। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে মুশফিকের এই সেঞ্চুরিটি বিশেষভাবে স্মরণীয় থাকবে। সেঞ্চুরি করে মুশফিক নাম লেখালেন আরেকটি এলিট ক্লাবে। আগে শততম টেস্টে ১০ ক্রিকেটার সেঞ্চুরি করেছেন। মুশফিক যোগ দেওয়ায় সেই ক্লাবের সদস্য দাঁড়াল ১১। অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং নিজের শততম টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছিলেন। মুশফিক এখন নিজের শততম টেস্টে পন্টিংকে ছুঁয়ে ফেলতে পারেন কি নাÑ সেটি দেখার বিষয়। তবে মুশফিক এই ইনিংসেই চাইলে ঢুকে যেতে পারেন আরও বিরল এক কীর্তিতে। শততম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি আছে শুধু ডেভিড ওয়ার্নার ও জো রুটের। তাদের পাশে নাম লেখাতে এখনো লম্বা পথ পারি দিতে হবে মুশফিককে। সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিদূর আর এগোতে পারেননি মুশফিক। ৯৯তম ওভারে হামফ্রিসের প্রথম বলে বলবার্নিকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। ৫ চারে ২১৪ বলে ১০৬ রানের ইনিংস খেলে মুশফিক ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় করতালিতে ফেটে পড়ে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি।
মুমিনুলের সঙ্গে ১০৭ রানের পর লিটনের সঙ্গে ১০৮ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতরানের জুটির রেকর্ড আগে থেকেই মুশফিক-লিটনের দখলে। সপ্তম সেঞ্চুরি জুটিতে নিজেদের আরও ছাড়িয়ে গেলেন দুজন। মুশফিক ফেরার পর তার ভূমিকায় নেমে একটি প্রান্ত আগলে রাখেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দাপুটে ব্যাটিংয়ে দ্রুতই শতরানের কাছে পৌঁছে যান লিটন। ৯১ থেকে দারুণ একটি ছক্কা মারেন তিনি হামফ্রিজকে। শতরান পূর্ণ করেন ১৫৮ বল খেলে। ১২৩ রানের জুটি ভাঙে মিরাজের বিদায়ে। তিন রানের জন্য ফিফটি পাননি এই অলরাউন্ডার। অভিষিক্ত লেগ স্পিনার গ্যাভিন হোয়ে পান প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ। পরের ওভারে স্লগ সুইপের চেষ্টায় শেষ হয় লিটনের ইনিংসও। লোয়ার অর্ডারে তিন চার এক ছক্কায় ১৮ রান করেন ইবাদত হোসেন। ৩৩ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে পাঁচশ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। আগের দিন চার উইকেট নেওয়া অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন এ দিন যোগ করেন আরও দুটি। আড়াই বছর আগে মিরপুরেই আরেক দফায় ৬ উইকেট নিয়েছিলেন এই অফ স্পিনার। আয়ারল্যান্ডের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তার।
ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা খারাপ করেনি আইরিশরা। পল স্টার্লিং যথারীতি শুরু করে চেনা আগ্রাসী চেহারায়। তাকে (২৬ বলে ২৭) ফিরিয়েই ৪১ রানের জুটি ভাঙেন একাদশে ফেরা সৈয়দ খালেদ আহমেদ। দিনের বাকিটুকু কেবলই স্পিনের সামনে আইরিশদের টিকে থাকার লড়াই। সেই চেষ্টায় সফল হননি কেউ। উইকেটে ততক্ষণে বল নিচু হতে শুরু করেছে বেশ। গ্রিপও করছে। তেমন কোনো জুটি তাই গড়ে ওঠেনি। বালবার্নি ও কার্টিস ক্যাম্ফারকে ফেরান হাসান মুরাদ। এই দুটির মাঝে কেড কারকাইমেলকে ১৭ রানে থামান মিরাজ। প্রথম স্পেলে খুব ভালো করতে না পারা তাইজুল দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে বিদায় করেন হ্যারি টেক্টরকে। দিনের শেষ পাঁচ ওভার কোনোরকমে কাটিয়ে দেন লর্কান টাকার ও স্টিভেন ডোহেনি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন