শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

দেশের ইতিহাসে আলোচিত যত ভূমিকম্প

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

দেশের ইতিহাসে আলোচিত যত ভূমিকম্প

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে স্বল্প ও মাঝারি মাত্রার বেশ কিছু ভূমিকম্প হয়েছে। তবে এগুলোর কোনোটিতেই দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতি ঘটেনি। ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা বারবারই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে। নিকট অতীতে বাংলাদেশে কোনো ভয়াবহ ভূমকম্পনের স্মৃতি না থাকলেও দেশের কয়েকশ বছরের ইতিহাসে রয়েছে বেশ কিছু বিধ্বংসী ভূমিকম্পের তালিকা।

বাংলাদেশের ভূখ-ে প্রথম বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে ১৫৪৮ সালে। এর ফলে বর্তমানে চট্টগ্রাম ও সিলেটের অবস্থান যেখানে, এই অঞ্চলে নানা জায়গায় মাটি ফেটে দ্বিখ-িত হয়ে যায়। সেখান থেকে দুর্গন্ধযুক্ত কাদা-পানি বেরোনোর তথ্যও পাওয়া যায়। তবে এই ভূমিকম্পের বর্ণনায় হতাহতের কোনো তথ্য লিপিবদ্ধ হয়নি।

পরবর্তী শতকে ১৬৪২ সালে এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে সিলেট জেলার অনেক দালানকোঠা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সেবারও মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হওয়া অন্যতম বড় ভূমিকম্পটি ঘটে ১৭৬২ সালের এপ্রিল মাসে। ১৯০৮ সালের ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গ্যাজেটিয়ার চিটাগং’-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৭৬২ সালের ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম জেলার অনেক জায়গায় মাটি ফেটে প্রচুর পরিমাণে কাদা-পানি ছিটকে বেরোয়। ‘পর্দাবন’ নামক জায়গায় একটি বড় নদী শুকিয়ে পড়ার বর্ণনাও পাওয়া যায় তখন। ‘বাকর চনক’ নামের এক অঞ্চলের প্রায় ২০০ মানুষ তাদের গৃহপালিত প্রাণীসহ পুরোপুরি নিমজ্জিত হয় সমুদ্রগর্ভে। ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে ভূখ-ের বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয় অতল গহ্বরের। মাটির নিচে কয়েক হাত গভীরতায় দেবে গিয়ে কিছু কিছু গ্রাম ভেসে যায় পানিতে।

কথিত আছেÑ সীতাকু-ের পাহাড়ে দুটি আগ্নেয়গিরি উৎপন্ন হয়েছিল সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে। যদিও পরবর্তীতে আর চিহ্নিত করা যায়নি নির্দিষ্ট নামে বর্ণিত সেই স্থানগুলোকে। চট্টগ্রামের বর্তমান বাহারছড়া নামক জায়গাটিকে আঠারো শতকের সেই সময়ে ‘বাকর চনক’ নামে অভিহিত করা হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।

১৭৬২ সালের এই ভূমিকম্পে চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকাতেও ভয়াবহ ভূকম্পনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে ১৯১২ সালের ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গ্যাজেটিয়ার ঢাকা’তে। জেমস টেইলরের ‘আ স্কেচ অব দ্য টপোগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস অব ঢাকা’র বর্ণনা অনুযায়ী, ঢাকার বিভিন্ন নদী আর ঝিলের পানিতে প্রবল আলোড়ন দেখা গেছে সেই ভূমিকম্পের সময়ে। পানির স্তরও সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি উঁচু হয়ে গিয়েছিল। ভূকম্পন শান্ত হলে পানি নিচে নেমে যাওয়ার পর অসংখ্য মরা মাছ ছড়িয়ে পড়েছিল জলাশয়ের পাড়ে।

ভূপৃষ্ঠের প্রবল আলোড়নের পাশাপাশি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল ভূগর্ভস্থ শব্দ। অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে পড়েছিল ভূমিকম্পের ফলে। প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৫০০ মানুষ। ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গ্যাজেটিয়ার ঢাকা’র একই সংখ্যায় পাওয়া যায় ১৭৭৫ ও ১৮১২ সালের শক্তিশালী ভূমিকম্পের বর্ণনা। ১৮১২ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বেশ কিছু ঘরবাড়ি আর দালানকোঠা। বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৭৭৫ সালের ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে ঢাকার আশপাশের অঞ্চলে আর ১৮১২ সালের ভূমিকম্পটি হয়েছিল সিলেটে। তবে উভয় ভূমিকম্পেই হতাহতের কোনো বর্ণনা পাওয়া যায়নি।

১৮৬৫ সালের শীতকালে আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের বর্ণনা পাওয়া যায় ১৯১২ সালের ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গ্যাজেটিয়ার চিটাগং’-এ। সীতাকু-ের এক পাহাড় ফেটে বালি আর কাদা বেরোয় সেই সময়। তবে আর কোনো গুরুতর ক্ষতির তথ্য মেলেনি এই ভূমিকম্পে।

১৮৮৫ সালে মানিকগঞ্জে আঘাত হানা প্রায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি পরিচিত ‘বেঙ্গল আর্থকোয়েক’ নামে। এর সম্ভাব্য উপকেন্দ্র ছিল ঢাকার ১৭০ কিলোমিটার দূরবর্তী সাটুরিয়ার কোদালিয়ায়। এই ভূমিকম্পের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে ভারতের বিহার, সিকিম, মণিপুর ও মিয়ানমারেও অনুভূত হয়েছিল কম্পন। ঢাকা, ময়নমনসিংহ, শেরপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জের অনেক দালানকোঠা, স্থাপত্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেবার। তবে এতে প্রাণহানির কোনো সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।

১৮৯৭ সালের ১২ জুন সংঘটিত বিধ্বংসী ভূমিকম্পটি পরিচিত ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক’ নামে। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ধারণা করা হয় প্রায় ৮। ১৯২৩ সালের ‘বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গ্যাজেটিয়ার পাবনা’য় বর্ণিত তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পে সিরাজগঞ্জে উপবিভাগীয় অফিসের ওপরের তলা, কারাগার, ডাকঘরসহ নানা স্থাপনা ধ্বংস হয়। প্রায় সব দালান স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভীষণভাবে। অ্যান্ডু ইউল অ্যান্ড কোংয়ের পাটের ব্যাগের ফ্যাক্টরি ধূলিসাৎ হয়ে যায় এই ধাক্কায়। কোম্পানিটি তাদের ব্যবসাই গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় এরপর। পাবনার কোর্ট হাউসসহ অন্যান্য ইটের স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভূপৃষ্ঠের নানা স্থানে চির ধরে, অনেক কুয়া পরিপূর্ণ হয় ভূ-তল থেকে উঠে আসা পলিমাটি আর বালিতে।

‘ইস্টার্ন বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গ্যাজেটিয়ার চিটাগং’ থেকে জানা যায়, ১৮৯৭ সালের এই ভূমিকম্পটি পূর্বে দক্ষিণ লুসাই পর্বতমালা থেকে শুরু করে পশ্চিমে শাহাবাদ পর্যন্ত সমগ্র বাংলা জুড়ে অনুভূত হয়েছিল। যার সম্ভাব্য মূল কেন্দ্র ছিল আসামের চেরাপুঞ্জির কাছাকাছি। ভূমিকম্পের স্থায়িত্বকাল ছিল জায়গাভেদে ছয় সেকেন্ড থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত। চট্টগ্রামে স্থায়ী ছিল সবচেয়ে বেশি সময় ধরে।

‘ইস্টার্ন বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গ্যাজেটিয়ার ঢাকা’র তথ্য মতে, উক্ত ভূমিকম্প ঢাকা শহরের অনেক উল্লেখযোগ্য স্থাপনার ক্ষতিসাধন করেছিল। সে তুলনায় প্রাণহানির সংখ্যা ছিল বেশ কম। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনাগুলোর মেরামত বাবদ সে সময় খরচ হিসাব করা হয়েছিল প্রায় দেড় লাখ রুপি।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে শুধু সিলেট জেলাতেই মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৪৫। ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিঘিœত হয় এর কারণে। রাজশাহীসহ পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য জেলাও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখনকার হিসাবে শুধু অর্থ-সম্পত্তির ক্ষতিই হয়েছিল প্রায় ৫০ লাখ টাকা।

১৯১৮ সালে প্রায় ৭ দশমিক ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয় শ্রীমঙ্গলে। যা শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প নামেই পরিচিত। মিয়ানমার ও ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলেও অনুভূত হয়েছিল এই ভূমিকম্প। শ্রীমঙ্গলের অনেক দালান-কোঠা ধ্বংস হয়েছিল এই ভূকম্পনে।

১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট আঘাত হানে আসাম ভূমিকম্প। বিংশ শতকের অন্যতম ভয়ানক এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭। বাংলাদেশের নানান অঞ্চলে এটি অনুভূত হলেও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি দেশে।

১৯৯৭ সালের ২২ নভেম্বর চট্টগ্রামে ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ঘটে। এতে শহরের নানান স্থাপনায় ফাটল ধরে।

বিংশ শতকে বাংলাদেশের শেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্পটি হয় মহেশখালী দ্বীপে। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসের সেই ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল এই দ্বীপেই। ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দ্বীপের অনেক বাড়িঘর।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের তথ্য মতে, দেশে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২২১টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যার মধ্যে ২০১৭ সালে ২৮টি, ২০১৮ সালে ৮টি, ২০১৯ সালে ১০টি, ২০২০ সালে ২৪, ২০২১ সালে ৩৫, ২০২২ সালে ২১, ২০২৩ সালে ৪১ এবং ২০২৪ সালে ৫৪টি ভূমিকম্প হয়।

চলতি বছরের যত ভূমিকম্প : ২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে অনুভূত ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসাম রাজ্যের মরিগাঁও। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩।

এ ছাড়া চলতি বছরের ৫ মার্চ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যার উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৪৪৯ কিলোমিটার। উৎপত্তিস্থলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসাম রাজ্য।

এ ছাড়া ২১ সেপ্টেম্বর ৪ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ১৮৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। বেলা সাড়ে ১২টার পর অনুভূত হওয়া এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের ছাতকে।

এ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আলোচিত ভূমিকম্পের মধ্যে রয়েছেÑ ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় ভূমিকম্প। ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৫, যা মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প।

একই বছরের ১৬ জুন রাজধানীসহ সারা দেশে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ। মে মাসের পাঁচ তারিখে আরেকটি ভূমিকম্প হয় ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের হিসাব অনুযায়ী, ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের দোহার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এটিরও গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার।

২০২৩ সালের ২ ডিসেম্বর সকালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস জানায়, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।

২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল নেপালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যাতে প্রায় ৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। এই ভূমিকম্প এতটাই প্রবল ছিল যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, চীনসহ আশপাশের প্রায় সব দেশেই এর কম্পন অনুভূত হয়।

২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। ওই সময় আতঙ্কে প্রাণ হারান ছয়জন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!