শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:৩৯ পিএম

পুরান ঢাকার বংশাল

মাংস কিনে ঘরে ফেরা হলো না তাদের

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:৩৯ পিএম

মাংস কিনে ঘরে ফেরা  হলো না তাদের

সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল গতকাল শুক্রবার। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এদিন একটু ভালো কিছু খেতে চান সবাই। সেই আশায় গতকাল সকালে পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলীতে একটি ভবনের নিচতলায় নয়নের মাংসের দোকানে গিয়েছিলেন অনেকেই। ঘড়িতে সময় তখন ১০টা ৩৮ মিনিট, এ সময় হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হয়। তীব্র ঝাঁকুনিতে দোকানের সামনে থাকা ক্রেতাদের ওপর ওই ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ে। এ ঘটনায় আহত হন অনেকেই। আহতদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনজনের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন শিশু মেহরাব হোসেন রিমন (১২), তার বাবা আবদুর রহিম (৪৮) ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফি।

গতকাল দুপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মর্গের সামনে বসে কান্না করছেন রাফিউলের সহপাঠী ইমতিয়াজ উদ্দিন নাদিম। তিনি বলেন, ‘শুনেছি, রাফিউল তার মায়ের সঙ্গে বাজার করতে গিয়েছিল। সকালে ফেসবুক গ্রুপে দেখলাম, রাফিউলের একটা ছবি দেওয়া। মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। এখানে এসে দেখি, সে আর নেই। ওর মা গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।’

রাফিউলের আরেক বন্ধু অপু বলেন, ‘সে (রাফিউল) খুবই শান্তশিষ্ট একটা ছেলে ছিল। আমাদের সঙ্গে একসঙ্গে ক্লাস করেছে। তার মারা যাওয়ার ঘটনা আমরা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। কী বলব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’

বংশালের কসাইটুলীর যে ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়েছে, সেটিতে থাকেন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী মো. রাওনাক। তিনি ভূমিকম্পের সময়কার কথা জানিয়ে বলেন, ওই সময় পুরো বিল্ডিং দুলছিল। ওপর থেকে কিছু পড়ার আওয়াজ শুনে নিচে যাই। গিয়ে দেখি গলিতে একটি শিশুসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের কয়েকজন ধরে দ্রুত রিকশা ও ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, মাংসের দোকানটিতে মহিষ জবাই করা হয়েছিল। মহিষের মাংস কিনতে ভবনটির নিচে অনেকেই ভিড় করেছিলেন।

নিহত রাফিউলের বন্ধুরা জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। পরিবারে মা-বাবাসহ তারা দুই ভাই-বোন। বাবা চাকরি করেন দিনাজপুরে। হলে সিট পেলেও মা ও বোনের সঙ্গে বংশালের বাসায় থাকতেন তিনি।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজহারুল ইসলাম খান বলেন, ‘২০ জনের মতো আহত ব্যক্তি এখানে আসেন। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’

মিটফোর্ড হসপিটালে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন নিহত রাফিউলের মা নুসরাত। দায়িত্বরত চিকিৎসক লুৎফুন নেসা বলেন, ‘নুসরাতের সিটি স্ক্যান করার পর তেমন বড় কোনো ইনজুরি আমরা পাইনি। তিনি মোটামুটি শঙ্কামুক্ত বলা যায়।’

তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর সুরিটলা স্কুলের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন কাপড় ব্যবসায়ী আবদুর রহিম (৪৮)। গতকাল সকালে অনেকের মতো ছোট ছেলে মেহরাব হোসেন রিমনকে (১২) নিয়ে বংশালের কসাইটুলীতে নয়নের মাংসের দোকানে গিয়েছিলেন তিনিও। এ সময় হঠাৎ ভূমিকম্পে ভবনের ছাদ থেকে রেলিংয়ের ইট পড়ে আহত হন তারা। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

আবদুর রহিমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সকালে বাবা ও ছেলে মাংস কিনতে বের হয়েছিলেন। ভূমিকম্পের পর তার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, মোবাইল ফোন বন্ধ। এ সময় পরিবারের সদস্যরা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে গিয়ে বাবা-ছেলের লাশ শনাক্ত করেন।

গতকাল দুপুরে মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে আহাজারি করছিলেন আবদুর রহিমের ভাই নাছির। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাই খুব ভালো মানুষ। দুই বছর আগে হজ করে আসছে। ও আমার ভাই, আমার ভাইকে যেন আল্লাহ জান্নাতবাসী করেন।’

নাছির আরও বলেন, দুপুরে জুমার নামাজের পর মা ফোন করে বলেন, তার ভাই ও ভাতিজা সকালে মাংস কিনতে বের হয়েছিলেন। ভূমিকম্পের পর থেকে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পরে তারা মর্গে খুঁজতে গিয়ে ভাই ও ভাতিজার লাশ শনাক্ত করেন।

নিহত আবদুর রহিম বিক্রমপুর গার্ডেন সিটিতে ফেব্রিকসের ব্যবসা করতেন। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। ছোট ছেলে মেহরাবকে নিয়ে রাজধানীর সুরিটলা স্কুলের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রকোনায়।

গতকাল সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানীসহ দেশজুড়ে ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। ভূমিকম্পটিকে মাঝারি মাত্রার বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!