ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করে গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য করা বাংলাদেশের অনুরোধটি ভারত পর্যালোচনা করছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গতকাল বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
মুখপাত্র রণধীর বলেন, ছাত্র আন্দোলনকারীদের হত্যাকা-ে ভূমিকার জন্য প্রথমে গত বছর ডিসেম্বর মাসে এবং মৃত্যুদ-ের পর চলতি মাসে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের যে অনুরোধ পাঠানো হয়েছে, তা ভারতের বিদ্যমান বিচারিক ও আইনিপ্রক্রিয়ার ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
হাসিনার প্রত্যর্পণে দিল্লির জবাবের অপেক্ষায় ঢাকা : এদিকে এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘বিচারে দ-প্রাপ্ত ও অপসারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে ভারতকে পাঠানো সর্বশেষ অনুরোধের জবাব বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে, তবে চিঠি পাঠানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই জবাব মিলবেÑ এমনটি ধরে নেওয়া হচ্ছে না।’
গতকাল বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, ঢাকার অনুরোধ পাঠানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা জবাব দেবে। তবে আমরা জবাবের প্রত্যাশা করছি। আগের চিঠির উত্তর এখনো আসেনি।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (আইসিটি-১)-এর রায়ের পর ঢাকা আনুষ্ঠানিকভাবে নোট ভার্বাল পাঠিয়েছে ভারতের উদ্দেশে, যা নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের মাধ্যমে পাঠানো হয়। তৌহিদ হোসেন জানান, ‘ভারত জবাব দেবে না এমনটি বাংলাদেশ মনে করছে না; তবে সাত দিনের মধ্যেই উত্তর আসবে এমন প্রত্যাশা নেই। সর্বশেষ নোট ভার্বালটি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশের হাইকমিশনের মাধ্যমে।’
নির্বাচনে ভারতীয় পর্যবেক্ষক আসতে চাইলে অনুমতি দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এখানে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। এমনকি আমরা কোনো সহায়তাও করব না, যদি না নির্বাচন কমিশন আমাদের বলে।’
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনার বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। শুক্রবার পাঠানো ওই চিঠির বিষয়টি রোববার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গত ১৭ নভেম্বর আইসিটি-১ শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ- দেয়। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য দিয়ে সহযোগিতা করায় সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার পরদিনই উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ঢাকা আনুষ্ঠানিকভাবে পলাতক দুই দ-প্রাপ্তকে দেশে ফেরত আনার অনুরোধ পাঠাবে। তখন তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অবস্থান ভারতকে জানাব। চিঠিটি আজ রাতে বা কাল সকালে যা-ই যাক, নিশ্চিতভাবেই যাবে।’

