আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আরেকটি জোট হলো। কয়েক ভাগে বিভক্ত জাতীয় পার্টির দুটি অংশের নেতৃত্বে এই জোটের নাম হয়েছে ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ (এনডিএফ)। জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি-জেপির নেতৃত্বাধীন অংশ দুটিসহ মোট ১৮টি দল থাকছে এই জোটে। গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েলস পার্টি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন জোটের ঘোষণা দেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
জোটভুক্ত অন্য দলগুলো হলোÑ জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জাতীয় ইসলামিক মহাজোট, জাতীয় সংস্কার জোট, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, স্বাধীন পার্টি, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, বাংলাদেশ জনকল্যাণ পার্টি, অ্যাপ্লায়েড ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগ।
এনডিএফ জোটের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রধান সমন্বয়ক হয়েছেন জনতা পার্টি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার মিলন এবং প্রধান মুখপাত্র রুহুল আমিন হাওলাদার।
লিখিত বক্তব্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রকৃত গণতান্ত্রিক রূপান্তর, বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান আকাক্সক্ষার সমন্বয়ে আগামী দিনের রাষ্ট্রসংস্কার, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মধ্যপন্থার উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বেগবান করা, ইসলামি মূল্যবোধ এবং সর্বধর্ম সম্প্রীতিতে বিশ^াসী, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রবর্তন, ফ্যাসিবাদের চির অবসান এবং সুশাসন প্রত্যাশী জনগণের ম্রিয়মাণ কণ্ঠস্বরকে সোচ্চার করতে রাজনৈতিক জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জোটভুক্ত দলগুলো নিজ নিজ আদর্শ ও স্বকীয়তা বজায় রেখে উপযুক্ত নীতিমালা এবং কয়েকটি দাবির ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন ও রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। এর নাম হবে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট।
লিখিত বক্তব্যে এনডিএফ জোটের তরফে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়Ñ অন্তর্বর্তী সরকারকে আগামী দুই মাসে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারে পরিণত হতে হবে। হয়রানিমূলক মামলা তুলে নিয়ে ভোটে অংশগ্রহণের সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা ও সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। একটি ভয়হীন, নিরাপদ ও কার্যকর রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী, চাঁদাবাজ, দখলবাজÑ যে দলেরই হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম কমাতে হবে। স্বনির্ভর অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর জরুরিভিত্তিতে মনোযোগ দিতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত এবং বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
জোটের নেতারা জানান, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে এবং দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করবে এনডিএফ। জাতীয় পার্টির একাংশের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে সংস্কার হতে পারে না, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে সব দলকেই সমান সুযোগ দিতে হবে। এ সময় অতীতের সব ভুল-ত্রুটি ভুলে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, তিন খ-ে বিভক্ত জাতীয় পার্টির তিন অংশই দলের প্রতীক লাঙ্গল নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই জিএম কাদের অংশ বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। আর এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলাদা হওয়ার পর নীরব থাকলেও এখন তার অংশটি বলছে, তারাই লাঙলের ‘একমাত্র দাবিদার’। জিএম কাদেরের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার সুযোগে গেল ৯ আগস্ট ‘ঐক্য সম্মেলন’ করে আলাদা হয়ে যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদারসহ দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। রওশনের অংশ থেকে বেরিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
এর আগে জাতীয় পার্টিতে একাধিকবার ভাঙন হয়েছে। তার মধ্যে ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফার ভাঙন হয়। তখন থেকেই আলাদাভাবে রাজনীতি করে আসছে এ অংশটি।
উল্লেখ্য, গত রোববার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে নতুন একটি রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে; যেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’।

