ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ২২ কোটি আইসিবিতে আটকা

হাসান আরিফ
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:১৭ পিএম

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি) রক্ষিত ২২ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত সুদসহ ফেরত চেয়েছে। টাকা পেতে জটিলতার কারণে এখন অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চেয়েছে ব্যাংকটি। দীর্ঘদিনের চেষ্টায়ও আমানত তোলা সম্ভব না হওয়ায় ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম ও স্বল্পমেয়াদি দায় পরিশোধে চাপে পড়েছে ব্যাংকটি।

আইসিবিতে আটকে থাকা ২২ কোটি টাকার আমানত দ্রুত উত্তোলন সম্ভব না হলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের নিয়মিত তহবিল ব্যবস্থাপনা আরও চাপে পড়বে। ব্যাংকের প্রধান তহবিলের উৎস যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রি-ফাইন্যান্স ঋণ, তাই এ ধরনের বিলম্ব দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের ঋণসেবা পরিচালনা, দায় পরিশোধ এবং ব্যাংকের নিয়মিত কর্মকা-ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ব্যাংকটি তাই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহায়তা চেয়েছে, যাতে আইসিবিতে রক্ষিত আমানত দ্রুত সুদসহ ফেরত পাওয়া যায় এবং আর্থিক প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে।

ব্যাংকটির স্বল্পমেয়াদি দায়, বিশেষত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রি-ফাইন্যান্স ঋণের সুদ, কর প্রদান ও অন্যান্য ব্যয় মেটাতে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মেয়াদি আমানত রাখা হয়। এগুলোর ম্যাচিউরিটি শেষে অর্থ তুলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তার দায়গুলো পরিশোধ করে থাকে।

ব্যাংকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ঋণ বিতরণের পুরো কাঠামোই নির্ভরশীল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত প্রি-ফাইন্যান্স তহবিলের ওপর। ফলে মেয়াদি আমানত সময়মতো উত্তোলন করতে না পারায় ব্যাংকটির আর্থিক প্রবাহে সরাসরি চাপ পড়ে, যার প্রভাব পড়ে চলমান কার্যক্রম ও স্বল্পমেয়াদি দায় পরিশোধে।

জানা গেছে, আইসিবির প্রধান কার্যালয় ও লোকাল অফিসে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ১৮ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত রেখেছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বারবার চিঠি দেওয়ার পরও আমানত সম্পূর্ণ উত্তোলন সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ আইসিবি মাত্র ৮ কোটি টাকা পরিশোধ করে। বাকি ২২ কোটি টাকা এখনো আইসিবিতে রয়ে গেছে।

এর মধ্যে আইসিবির প্রধান কার্যালয়ের এফডিআর নং ১২২৫৩/১/২১৩২, বর্তমান স্থিতি ১৯ কোটি টাকা, প্রথম খোলা ১৫ নভেম্বর ২০২১, সর্বশেষ ম্যাচিউরিটি ১৫ আগস্ট ২০২৫।

আইসিবি লোকাল অফিসের এফডিআর নং ০০০৫৮১৯/এলওসি/৫১৩, বর্তমান স্থিতি ৩ কোটি টাকা, প্রথম খোলা ২৬ অক্টোবর ২০২১, সর্বশেষ ম্যাচিউরিটি ২৬ অক্টোবর ২০২৫। এই হিসাবে মোট স্থিতি দাঁড়ায় ২২ কোটি টাকা।

মেয়াদোত্তীর্ণ আমানত উত্তোলনের জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ২০২৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর ১২৯তম সভায় উপস্থাপন করা হয়। পর্ষদ সেখানে নির্দেশনা দেয়, পরবর্তী ম্যাচিউরিটিতে আইসিবিতে রক্ষিত ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত সুদসহ উত্তোলনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি পাঠাতে হবে এবং এর অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর পাঠাতে হবে।

পর্ষদের নির্দেশ অনুসারে একাধিকবার আইসিবিকে চিঠি পাঠানো হলেও প্রত্যাশিত টাকা পাওয়া হয়নি। এতে ব্যাংকের কার্যক্রমে চলমান চাপ আরও বেড়েছে।

বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রি-ফাইন্যান্স ঋণের সুদ, নিয়মিত কর প্রদান এবং অন্যান্য ব্যয় পরিচালনায় নিয়মিত অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু আইসিবিতে আটকে থাকা বিপুল পরিমাণ আমানত সময়মতো উত্তোলন করতে না পারায় ব্যাংকের অর্থ পরিচালনায় অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চানু গোপাল ঘোষ তার স্বাক্ষরিত চিঠি উল্লেখ করেছেন, ব্যাংকের স্বল্পমেয়াদি দায়গুলো পরিশোধ এবং সার্বিক কার্যক্রম সচল রাখতে আইসিবিতে রক্ষিত ২২ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত সুদসহ দ্রুত পাওয়া একান্ত প্রয়োজন।

দুই দিকেই পাঠানো চিঠিতে ব্যাংকটি আইসিবির কাছে থাকা আমানত দ্রুত পাওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করেছে।