বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


লিনা আকতার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ০১:৫৬ এএম

শেষ বয়সেও ভালো থাকুক শরীর-মন

লিনা আকতার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ০১:৫৬ এএম

শেষ বয়সেও ভালো থাকুক শরীর-মন

ডিহাইড্রেশন হলো এমন একটি অবস্থা যখন শরীরে পানির সরবরাহ কমে যায়। এটি অল্প বয়স্কদের কাছে ছোট একটি সমস্যা হলেও বয়স্কদের মধ্যে একটি জটিল হতে পারে। কারন যখন আমাদের শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে তখন আমাদের শরীর সঠিকভাবে কাজ করতে সমস্যাবোধ হয়।

পানি আমাদের শরীরে সতেজ, শীতল রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরীর প্রায় ৬০ শতাংশ পানি দিয়ে গঠিত। আমাদের শরীরের প্রধান কিছু অঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক, হৃৎপি- এবং ত্বকে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। পর্যাপ্ত পানি ছাড়া আমাদের এই অঙ্গগুলো কাজ করতে পারে না বা ব্যর্থ হয়।

পানি কীভাবে শরীরকে কাজ করতে সাহায্য করে:

১. স্বাভাবিক তাপমাত্রা

বজায় রাখতে

২. আমাদের জয়েন্টগুলো লুব্রিকেটেড রাখতে

৩. মেরুদ- রক্ষা করতে

৪. বর্জ্য পরিত্রাণ করতে যেমন- প্রসাব, ঘাম, মলত্যাগের মাধ্যমে ডিহাইড্রেশন তীব্রতার মাত্রা বয়সের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়। তাই বয়সের সঙ্গে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

বয়স্কদের পানিশূন্যতার কারণ

সব সময় যে অপর্যাপ্ত পানি গ্রহণ বয়স্কদের পানিশূন্যতার একমাত্র কারণ তা নয়। আরও কিছু কারণ এরসঙ্গে যুক্ত রয়েছে যেমন-

১. ব্যক্তি যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগ বা অসুস্থতা থাকে যেমন ডায়রিয়া, জ্বর, বমি হওয়া।

২. মূত্রবর্ধক ওষুধ যেটি পানি নিংসরণে বৃদ্ধি করে এমন ওষুধ খেলে ডিহাইড্রেশন হতে  পারে। এ ছাড়া অনেক বেশি মেডিসিন গ্রহণ করলে পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করতে হবে।

৩. ঘাম বেশি হলে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে।

৪. আবহাওয়া উষ্ণ হলে শরীরে পানির চাহিদা বাড়ে।

ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ

১. শুকনো মুখ বা জিহ্বা

২. ক্লান্তি

৩. রক্তচাপ কমে যাওয়া

৪. কোষ্ঠকাঠিন্য

৫. গাঢ় রঙ্গের প্রসাব

৬. মেজাজ পরিবর্তন যেমন বিরক্তি বা বিষণœতা

বয়স্করা কেন বেশি ঝুঁকিতে

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে বয়স্কদের ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেশি থাকে। এখানে কিছু বলা হলো-

১. তৃষ্ণা সংবেদন হ্রাস: বেশিরভাগ বয়স্কদের তৃষ্ণার সংকেত কম পায়। যখন তারা তৃষ্ণার্তবোধ করে তখন মারাত্মক পানিশূন্য হয়ে পড়ে।

২. পেশি ভর ক্ষয়: বয়স্কদের প্রতি দশকে পেশির ভর ৩ থেকে ৮ শতাংশ বেশি হারে হ্রাস পায়। আরও যদি বেশি চর্বি জমা হয় তবে তাদের শরীরে পানি কম থাকে।

৩. চলাফেরার গতিশীলতা বা গতি কম থাকা: কিছু বয়স্কদের চলাফেরার সমস্যা হতে পারে। দুর্বলতা বা আঘাত বা চিকিৎসার অবস্থার কারনে তারা নড়াচড়া কম করতে পারে। বিশেষ করে হাড় ভেঙে যাওয়া হাড় ক্ষয় বা আঘাতের কারণে চলাফেরা কম হতে পারে। এ ছাড়া চিকিৎসার কারণে দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকা, টয়লেট বা বিশ্রমিাগার ব্যবহার করতে না পারা। অনেক সময় তারা ইচ্ছাকৃত কম পানি গ্রহণ করতে পারে।

৪. স্বাদ ও গন্ধের অনুভুতি কম: বয়স্করা ক্ষুধা, স্বাদ ও অনুভূতি হ্রাস পায়। এজন্য তারা তাদের খাবারে লবণ বা চিনি যোগ করে থাকেন।

৫. গিলতে অসুবিধা: বয়স্করা অনেক সময় গিলতে অসুবিধা বা তরল গ্রহণ করতে পারে না। আবার যারা ঘনঘন পানি বা তরল পান করেন তাদের পানির টেক্সচার পছন্দ না করার কারণে পানি পান কম করেন, ফলে ডিহাইড্রেশন হয়।

৬. প্রসাবে অসংযম: কারো ক্ষেত্রে প্রসাব দুর্ঘটনাক্রমে বিছানা বা লুঙ্গিতে করে ফেলেন। এজন্য রাতে যাতে একাধিক বার না উঠতে হয় কম পানি পান করেন।

ডিহাইড্রেশনের প্রকারভেদ

তিন ধরনের ডিহাইড্রেশন রয়েছে যা প্রত্যেকটি শরীরে তরল এবং লবণের ঘনত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করে।

১. আইসোটোনিক ডিহাইড্রেশন: পানি এবং সোডিয়াম উভয়ই হারিয়ে গেলে আইসোটোনিক ডিহাইড্রেশন ঘটে। এটি বমি, ডায়রিয়া ঘাম এবং চিকিৎসার অবস্থার কারণে হয়ে থাকে।

২. হাইপোটোনিক ডিহাইড্রেশন: হাইপোটোনিক ডিহাইড্রেশন ঘটে যখন শরীরে পানির ক্ষয়ের তুলনায় অতিরিক্ত লবণের ক্ষয় বেশি হয়। এটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি মূত্রবর্ধক ব্যবহার এবং কম সোডিয়াম খাদ্য অনুসরণ করার কারণে ঘটে। এ ছাড়া বারবার বমি, ডায়রিয়ার কারণে হতে পারে।

৩. হাইপারটনিক ডিহাইড্রেশন: বয়স্কদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। বমি, জ্বর ও অপর্যাপ্ত তরল গ্রহণের কারণে লবণের ক্ষতির তুলনায় শরীরে বৃহত্তম পানি হ্রাস করে।

কতটা পানি প্রয়োজন

বয়স্কদের কতটা পানি প্রয়োজন তা শরীরের ওজন, উচ্চতা ওষুধ ও শারীরিক কাজকর্ম ও পরিবেশের তারতম্যের উপর নির্ভর করে পানির হিসাব করতে হবে। সাধারণত শরীরের ওজনের অর্ধেক আউন্স পানি পান করতে বলা হয়। প্রতি ক্যালরির জন্য ১ মিলি পানি বা তরল (ক্যালরির চাহিদার উপর ভিত্তি করে)। এ ছাড়া প্রসাবের আউটপুট এর উপর লক্ষ্য রেখে করতে হবে (তরলের ভারসাম্য উপর ভিত্তি করে)।

পানি বা তরল গ্রহণ বাড়ানোর সাধারণ টিপস

১. পানি বা তরল খাওয়ার চার্ট বানানো। কত ঘনঘন প্রসাব করেন। প্রসাবের রং বর্ণহীন, ফ্যাকাশে, কিংবা গাঢ় হলুদ হলে পানিশূন্যতা বোঝা যায়। প্রতিদিন পানি পান করার সময় নির্ধারণ করুন।

২. প্রতিটি খাবারের সঙ্গে পানি রাখুন। বাইরে গেলে পানির বোতল বহন করতে বলুন। তবে চিনিযুক্ত পানীয় ও ক্যাফিন সীমিত করাই ভালো।

৩. ঘুম থেকে উঠার পর এবং ঘুমাতে যাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে ১ গ্লাস পানি পান করুন।

৪. স্ন্যাকস হিসেবে পানিসমৃদ্ধ ফল খেতে দিন। যেমন- শসা, লেবু, তরমুজ, আনারস, পেঁপে, কমলালেবু, মাল্টা ইত্যাদি।

৫. প্রতিবার ওষুধ খাওয়ার সময় ১ গ্লাস পানি পান করুন।

৬. টিভি দেখা, পড়ার সময়, কিংবা ডেস্কে কাজ করার সময় কাছাকাছি পানীয় বোতল রাখুন।

৭. ভারী খাবার গ্রহণের পরপরই পানি পান না করে খাবার ৩০ মিনিট  আগে বা পরে পানি পান করুন।

৮. তাপমাত্রা গরম বা উষ্ণ হলে পানি পান করার কথা মনে করিয়ে দিন।

৯. পানি খেতে না ভালো লাগলে স্বাদযুক্ত পানীয় বা তরল করে দিন। পানিতে তুলসীপাতা, পুদিনাপাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে পারেন। এ ছাড়া ফলের রস পাানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে দিন।

১০. কোনো বিধিনিষেধ না থাকলে দুধ খেতে দিন। এটি ডিহাইড্রেশনে কাজ করবে।

১১. সবজির স্যুপ, চিকেন স্যুপ, টমেটো বা অন্য কোনো স্যুপ দিতে পারেন তার পছন্দমতো।

১২. কম তেল, মসলা ছাড়া সবজির ঝোলের তরকারি দিতে পারেন।

লিনা আকতার
পুষ্টিবিদ
রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল
অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!