বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশীয় ফ্রিল্যান্সারদের অনবদ্য অবদান থাকলেও, এই পেশার দাপ্তরিক স্বীকৃতি যেন এখনো অধরা। বাসাভাড়া নেওয়া, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে পেশাগত পরিচয় প্রদানের মতো নানান প্রয়োজনে এখনো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ফ্রিল্যান্সার পেশাজীবীদের। ২০২০ সালে ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড নামক একটি বিশেষ পরিচয় ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হলেও, ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যার সমাধান তাতে হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের নানারকম সুবিধা নিশ্চিতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)। একগুচ্ছ সুবিধা নিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের পাশে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটি। ‘ফ্রিল্যান্সার ফোরাম’ গঠনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার পেশাজীবীদের বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে সংগঠনটি।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এক প্রতিবেদন ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড রিপোর্ট ২০২৩’ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ফ্রিল্যান্সারদের ১৪ শতাংশই বাংলাদেশে। তারা ঘরে বসে অনলাইনে দেশিয় এবং বিদেশি গ্রাহকদের জন্য নানারকম কাজ করে থাকে। ধারণা করা হয়, দেশে বর্তমানে মোট ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। ২০২০ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) মাধ্যমে এই পেশাজীবীদের প্রথমবারের মতো ‘আইডি কার্ড’ বা পরিচয় পত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন বলা হয়েছিল যে, এই কার্ডের মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্ট খোলা, ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ নেওয়া, বিদেশ ভ্রমণে পেশাগত পরিচয় প্রদানের মতো সেবা পাওয়া যাবে। এই কার্ড গ্রহণে আগ্রহীদের বিএফডিএসকে এককালীন এবং বাৎসরিক অর্থ প্রদান করতে হতো। তবুও ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যার সমাধান হচ্ছিল না। উপরন্তু, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ওপর সরকারি কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা পাওয়া নিয়েও জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় ফ্রিল্যান্সারদের। অনেকক্ষেত্রে, সেই প্রণোদনা না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ফ্রিল্যান্সারদের পক্ষ থেকে। ফলে আইডি কার্ড প্রসঙ্গে এক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
গত সপ্তাহে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা সংক্রান্ত জটিলতার এক ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ফ্রিল্যান্সার পেশাজীবীরা ফেসবুকে জানাতে থাকেন যে, ব্যাংকে তাদেরকে আইডি কার্ড ছাড়া অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দিচ্ছে না। ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করা না হলেও, বেশ কয়েকটি ব্যাংক এই আইডি কার্ড ছাড়া ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালু করছিল না। দেশের অন্তত তিনটি তফসিলি ব্যাংকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে। এমন ঘটনায় ফেসবুকে সরব হয়ে ওঠেন ফ্রিল্যান্সাররা। ফাইভার সহ বিভিন্ন স্বনামধন্য মার্কেটপ্লেসে উল্লেখযোগ্য কাজের অভিজ্ঞতা থাকলেও, আইডি কার্ডের বাধ্যবাধকতা মানতে পারছিলেন না এই খাতের পেশাজীবীরা। কোনো একটি সংগঠনকে চাঁদা দিয়ে, নিজেদের পেশারই স্বীকৃতি নিতে ইচ্ছুক নন তারা। এমন প্রেক্ষাপটে চলমান জটিলতা নিরসনে এগিয়ে এসেছে বাক্কো।
সংগঠনটির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে ‘ফ্রিল্যান্সার ফোরাম’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাক্কো। দীর্ঘমেয়াদে এই ফোরামকে বাক্কো’র সঙ্গে ‘এফিলিয়েড’ (অধিভুক্ত) করা হবে। আর এই ফোরামের সদস্যরা তখন বাক্কোর এফিলিয়েড সদস্য হবেন। এফিলিয়েড সদস্য মর্যাদায় ফ্রিল্যান্সাররা সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে নানাবিধ সুবিধা পাবেন। এ বিষয়ে বাক্কো’র সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আলিম ইনফোটেককে বলেন, ‘এই ফ্রিল্যান্সাররা বেশিরভাগই বয়সে তরুণ এবং তারাও আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। কিন্তু তাদের পেশার প্রত্যাশিত স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না, যথাযথ সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার ১৬ বছর ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে প্রচারণা চালিয়েছে, কিন্তু ফ্রিল্যান্সারদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কিছুই করেনি। সম্প্রতি এ বিষয়টি বাক্কো নেতৃবৃন্দের নজরে আসলে, আমরা সাংগঠনিকভাবে ফ্রিল্যান্সারদের পাশে থেকে তাদের সাহায্য করার উদ্যোগ নিয়েছি’
ফয়সাল আলিম বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সার ফোরাম থেকে ফ্রিল্যান্সাররা বাক্কো’র এফিলিয়েটেড সদস্য হবেন। বাক্কো’র এই সদস্যপদের মর্যাদায় তাদের জন্য বেশকিছু সুবিধা নিশ্চিত হবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বাড়ানো, বিদেশ ভ্রমণে ভিসা প্রসেসে সহায়তা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে বাক্কো’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে বিদেশে পাঠানো, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ও সামাজিক আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানোসহ একগুচ্ছ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ফ্রিল্যান্সারদের আয় করা বৈদেশিক মুদ্রার ওপর প্রণোদনা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতেও কাজ করবে বাক্কো। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এই ফোরামে অন্তত ৩০ হাজার ফ্রিল্যান্সার পেশাজীবীদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা থাকবে বাক্কো’র’।
তিনি বলেন, ‘এই খাতে সরকারি সহায়তাও প্রয়োজন। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে যৌথভাবে বাক্কো এই কাজগুলো করছে যেন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া সুযোগ সুবিধাগুলো নিশ্চিত হয়। এক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যা সমাধানে তিনি বেশ আগ্রহী হয়ে এগিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন দফায় আমাদের সাথে আলোচনা করছেন যে কী কী করলে এই পেশাজীবীরা তাদের কাজের যথাযথ স্বীকৃতি পাবেন’। ইন্ডাস্ট্রি এবং সরকার যৌথভাবে কাজ করলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পেশাজীবীরা আরও সাফল্য অর্জন করবে বলেও প্রত্যাশা এই উদ্যোক্তার।
কোড :
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার ১৬ বছর ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে প্রচারণা চালিয়েছে, কিন্তু ফ্রিল্যান্সারদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কিছুই করেনি। অথচ ফ্রিল্যান্সাররা দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা
ফয়সাল আলিম
সাধারণ সম্পাদক, বাক্কো
আপনার মতামত লিখুন :