ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

জোয়ারেও ভাঙন আতঙ্কে উপকূলবাসী

হাসানুর রহমান তানজির, খুলনা
প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০১:৩৪ এএম

দেশের দক্ষিণাঞ্চলবাসীদের সারা বছরই বাঁধ ভাঙা আর গড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। নদীভাঙন ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও খুলনা জেলার নদীর পাড়ের মানুষের আতঙ্ক যেন কাটছেই না। জোয়ারের পানিতেও এখন বাঁধ ভাঙার ভয়ে থাকে উপকূলের জনপদ। বিশেষ করে কয়রা, পাইকগাছা এবং দাকোপ অঞ্চলজুড়ে মানুষের মধ্যে বছরজুড়ে একটা আতঙ্ক থাকে। বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে উপকূলীয় এ অঞ্চলগুলোর নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে নদীভাঙন আতঙ্ক তৈরি হয়। সাগরের উত্তাল ঢেউ এবং নদীর গতি বদলের ফলে এলাকাগুলোর ভাঙনের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর। অন্যদিকে, দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, উপজেলার ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রা রিং বাঁধ, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, মঠবাড়িয়া, ২ নম্বর কয়রা, হোগলা, গাজীপাড়া, গোলখালী, হাজতখালী, জোড়শিং ও মহেশপুর এলাকা, কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট থেকে গোবরা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার, হরিণখোলা ঘাটাখালী এলাকায় এক কিলোমিটার, ৬ নম্বর কয়রা এলাকা, মহারাজপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবাদ, মঠেরকোনা, মঠবাড়ি, দশহালিয়া এলাকা, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা থেকে গণেশ মেম্বারের বাড়ি পর্যন্তÍ এক কিলোমিটার, কাশিরহাটখোলা থেকে কাটমারচর পর্যন্ত ৭০০ মিটার, পাথরখালী এলাকায় ৬০০ মিটার এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের শেখেরকোনা, নয়ানি, শাপলা স্কুল এলাকা, তেঁতুলতলার চর ও চৌকুনি এলাকা, পাইকগাছার আলমতলার হাট থেকে পাইকগাছা ব্রিজ পর্যন্ত এক কিলোমিটার বাঁধ, দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা, বটবুনিয়া এলাকা, সুতারখালী ও বাণীশান্তা ইউনিয়নের একাধিক পয়েন্টে বেড়ি বাঁধ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নদীভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাঝে মাঝে ব্লক আর বালির বস্তা ফেলছে। কিন্তু এভাবে কাজ করে নদীভাঙন ঠেকানো সম্ভব না। একের পর এক ভেড়ি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো স্থায়ী পরিকল্পনা নেই। বালুর বস্তা আর জিওব্যাগ দিয়ে সাময়িক ঠেকানো ছাড়া কিছু না। সবাই আতঙ্কে থাকেন।
খুলনার কয়রা কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভাঙন নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শাহরিয়ার ইসলাম বলেন, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। 

পাইকগাছার বাসিন্দা শামসুর রহমান বলেন, আমাদের মতো উপকূলবাসীদের নদী নিয়ে চিন্তায় আর আতঙ্কে দিন কাটে। জোয়ার হলেও নদীপাড়ের মানুষের রাতে ঘুম হয় না। বাঁধ থাকলেও এখন বাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটে আমাদের। নদীভাঙন এবং বাঁধ ঠেকাতে হলে উন্নত মানের কাজ ও পরিকল্পনা ছাড়া উপায় নাই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, ফুলতলা, দিঘলিয়া, রূপসা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা জেলা। নদীভাঙন ঠেকাতে জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৭টি পোল্ডার রয়েছে। এসব পোল্ডারের দৈর্ঘ্য মোট ১ হাজার ১৩ দশমিক ৯০ কিলোমিটার। যার মধ্যে ৬ দশমিক ৭৭১ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর আওয়তায় রয়েছে ৯টি পোল্ডার। যার মোট দৈর্ঘ্য ২৯৯ দশমিক ০৬ কিলোমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর আওয়াতায় রয়েছে ১৮টি পোল্ডার। যার দৈর্ঘ্য ৭১৪ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার। 
উপজেলাগুলোর মধ্যে দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা এবং কয়রায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার অতি ঝুঁকিপূর্ণ দুর্বল বাঁধ রয়েছে। আরও জানা যায়, উপজেলাগুলোতে বাঁধ মেরামত ও সংরক্ষণে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৭১ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৩ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭

কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে দশ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের খুলনা শাখার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, নদীভাঙন একটি জাতীয় সমস্যা। এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনার সঙ্গে স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। 

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, আবহাওয়া অফিসের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক করি। এ ছাড়াও তাদের প্রয়োজন হলে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। তিনি আরও বলেন, সিপিপি ভলেন্টিয়ারের মাধ্যমে এবং মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক করা হয়। জেলা এবং উপজেলা সমন্বয় করে যেকোনো দুর্যোগের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।

খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থায়ী সমাধানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ শুরু হবে। এ ছাড়াও বাঁধ নিয়ে কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।