স্বাধীন উদ্যোক্তাদের জন্য নামমাত্র মূল্যে লাইসেন্সসহ নতুন সেবা ব্র্যান্ডের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে। মূলত বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর জনবান্ধব রাষ্ট্রে রূপান্তরের অংশ হিসেবে সহজ ও হয়রানিমুক্ত ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ (সেবা)’ নামে একটি জনমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব স্বাক্ষরিত এক চিঠি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। যা প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এই চিঠির একটি অনুলিপি রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে।
চিঠি সূত্রে জানা গেছে, সহজ ও হয়রানিমুক্ত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসব সেবা প্রান্তিক জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেও বলা হয়েছে। এজন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অন্তত দুটি সেবা অনলাইনে সহজলভ্য করার বিষয়ে জরুরি নির্দেশ দিয়েছেন।
উদ্যোগটি বাস্তবায়নের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দপ্তরগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে স্বাধীন উদ্যোক্তাদের জন্য নামমাত্র মূল্যে লাইসেন্সসহ নতুন সেবা ব্র্যান্ডের অনুমোদন। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা। উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসে সহ-কার্যকরী স্থান স্থাপন।
বিশেষত, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের আদলে সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর, সংস্থার স্থানীয় অফিস, পোস্ট অফিস এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে কিয়স্ক কার্যক্রম চালু করা। নাগরিক ভেরিফিকেশনের জন্য কিয়স্কে ফেইস ভেরিফিকেশন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডিভাইস বিবেচনা করা।
ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সার্ভিস আউটলেট কেন্দ্র স্থাপন। মনিটরিং ও টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ (৩৩৩, কল সেন্টার, ওয়েব সাপোর্ট)। অভিযোগ ও প্রতিকার ব্যবস্থার জন্য ৩৩৩ নম্বর ব্যবহারের কার্যকর প্রয়োগ, মনিটরিং ও কারিগরি সাপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, উদ্যোক্তাদের বিশেষ ব্যাজ, পরিচিতি বা ব্র্যান্ডিং চালু করে উদ্যোগটির ক্যাম্পেইন করা।
এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীন অধিদপ্তর, দপ্তর, পরিদপ্তর, সংস্থা ও কোম্পানিগুলোর আওতায় ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন অনলাইন সেবা প্রবর্তনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে অনলাইনভিত্তিক কমপক্ষে দুটি সেবা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা এবং সম্ভাব্য ধারণা অনতিবিলম্বে পাঠানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, আপনার সহায়তা তৃণমূল পর্যায়ে নাগরিক তথ্য ও সেবা পৌঁছে দিতে প্রধান উপদেষ্টার গৃহীত এই জাতীয় উদ্যোগটি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাজেটে দেশের বৃহত্তর যুব জনগোষ্ঠীর দক্ষতা, উদ্ভাবন ও আত্মকর্মসংস্থান সক্ষমতা গড়ে তোলার দৃঢ় অঙ্গীকার করা হয়েছে। তাই ঘোষিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তারুণ্যকেন্দ্রিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ জন্য তরুণ উদ্যোক্তা উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
প্রস্তাবিত এই তহবিল থেকে যুবকরা সহজ শর্তে আর্থিক সহায়তা পাবে। পাশাপাশি সফল উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণের সীমা বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা এখন থেকে পাবেন ২ লাখ টাকা। যা আত্মকর্মসংস্থান গঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক উদ্যোগ হিসেবে দেখছে সরকার।
এদিকে বর্তমান সরকারের তারুণ্যকেন্দ্রিক প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত পরিকল্পনা দাবি করা হচ্ছে ‘তারুণ্যের উৎসব’। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে আয়োজিত এই কর্মসূচির জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা, যার উদ্দেশ্য তরুণদের রাষ্ট্রীয় অগ্রগতিতে কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
তাই প্রস্তাবিত বাজেটে, ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২০২৫ সালের এ উৎসব ইতোমধ্যেই সারা দেশে উদ্দীপনা ও আশার আলো ছড়িয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে শুধু কর্মসংস্থান নয়, বরং এক নতুন প্রজন্মের মধ্যে নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রও সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।