খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে গুলি ও রগ কেটে হত্যার ঘটনায় একাধিক বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের মাধ্যমে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত শনিবার দুপুরে মাহবুবের বাবা আব্দুল করিম মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় এ হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় সজল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশের গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ঘটনাটির পেছনে কিছু তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, যার ভিত্তিতে হত্যাকারীদের বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে। তবে হত্যার মূল কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। ছায়া তদন্তে যুক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা, দলীয় কোন্দল, মাদক কারবার, চরমপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্ক, কুয়েটের সংঘর্ষের ঘটনাসহ বিভিন্ন দিক মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। এ ছাড়া এ যুবদল নেতার নামে একটি হত্যা মামলাও রয়েছে। সেই শত্রুতার জেরে এমনটি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দৌলতপুর থানা পুলিশ জানায়, মাহবুবের নামে আটটি মামলা বিচারাধীন আছে, যার মধ্যে মাদক মামলাও রয়েছে। সিটি বাইপাসে একটি পেট্রলপাম্পে হস্তক্ষেপ এবং সম্প্রতি তার প্রাইভেটকার কেনাকে ঘিরেও রহস্য তৈরি হয়েছে। খুন হওয়ার কয়েক দিন আগেও তাকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি তার স্ত্রী এরিন সুলতানা দৌলতপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ইমাম হোসেনকে জানিয়েছিলেন।
দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, গত শনিবার রাত সোয়া ২টার দিকে দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে সজলকে (২৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিলিং মিশনে তার অংশগ্রহণ ছিল না। কিন্তু মাহাবুবের অবস্থান সম্পর্কে খুনিদের সব তথ্য দিয়েছে সজল। তার তথ্যের ওপর নির্ভর করে এ হত্যাকা- হয়েছে। হত্যাকা-ের বিষয়ে সজল অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হবে।
গ্রেপ্তার সজল ওই এলাকার বাসিন্দা সাহেব আলীর ছেলে। ওই সড়কে তার মুদি দোকানের ব্যবসা ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকায় হুমা ও আরমান নামে দুটি গ্রুপ সক্রিয়। তারা একসময় একই গ্রুপে ছিল। সম্প্রতি চরমপন্থি নেতা শাহিন খুন হওয়ার আগে দুটি দলে বিভক্ত হয়। বর্তমানে হুমা অস্ত্র মামলায় বাগেরহাট কারাগারে এবং আরমান আরেকটি মামলায় খুলনা কারাগারে রয়েছেন। মাহবুবের আপন খালাতো ভাই আরমানের সঙ্গে সখ্যের কারণে চরমপন্থিদের সঙ্গে মাহবুবের দূরত্ব বাড়ে।
নিহত মাহবুবুর রহমানের বাবা আবদুল করিম মোল্লা বলেন, মাহবুব প্রতিবাদী ছিল। কেউ চাঁদা চাইলে সে প্রতিবাদ করত। কয়েকটা সন্ত্রাসী গ্রুপ আশপাশে ঘুরছে। তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
মাহবুবের স্ত্রী এরিন সুলতানা বলেন, ‘রাজনৈতিক বিষয়, কুয়েটের বিষয় মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমার স্বামী কারো ক্ষতি করেনি। আশপাশের লোকই এ হত্যা করেছে। মানিকতলায় যুবদলের সুধী সমাবেশের ঘটনায় ওর বন্ধু জাকির মামলা করার পর মাহবুবুরের কাছে নিয়মিত হুমকি আসত, কিন্তু কারা দিচ্ছে, তা বলত না। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ সুমন বলেন, ‘মাহবুবের হত্যাকা- প্রমাণ করে খুলনা শহরে আমরা কেউ নিরাপদে নেই। এ লোমহর্ষক ঘটনার সঠিক তদন্ত করে হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারলে প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা হারাবে।’
মহানগর শ্রমিক দলের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও মাহবুবের শ্বশুর আজাদ বেগ বলেন, কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ছাত্রদলের সংঘাতে যুবদলের নেতা হিসেবে মাহবুব পাশে দাঁড়িয়েছিল। এ ঘটনাও একটি কারণ হতে পারে। ৫ আগস্টের পর দলীয় অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করেন মাহবুব। এ ছাড়া মানিকতলার যুবদলের একটি সুধী সমাবেশে মারামারির ঘটনায় তার বন্ধু জাকির মামলা করলে আসামিরা মাহবুবের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। নিয়মিত তাকে হুমকি দেওয়া হতো।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ্ বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তনাধীন। এ মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে অনেক তথ্য আমরা পেয়েছি, যা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। হত্যাকা-ে একাধিক অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। তিনজন খুনি একটি মোটরসাইকেলে করে আসে। তাদের একজনের মাথায় হেলমেট ছিল। আশপাশের ভিডিওফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।’