শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ১২:৪২ এএম

গল্পের জাদুকরের প্রয়াণ দিবস আজ

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ১২:৪২ এএম

গল্পের জাদুকরের প্রয়াণ দিবস আজ

আকাশে অনেক তারা ঝলমল করলেও সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের পানেই সবার চোখ আটকে যায়। বাংলা কথাসাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদ তেমনই এক নক্ষত্র। কথাসাহিত্যের গল্পের জাদুকর হিসেবে খ্যাত হুমায়ূন কথাসাহিত্যের পাশাপাশি নাটক, চলচ্চিত্র এমনকি গান দিয়েও সাধারণ মানুষের ভাবনার জগত বদলে দিয়েছেন। আজ ১৯ জুলাই, গল্পের জাদুকরের প্রয়াণ দিবস। ২০১২ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হুমায়ূন আহমেদ। তার মৃত্যুর পর একে একে কেটে গেছে ১৩টি বছর। এত দিন পরেও তার পাঠকপ্রিয়তার কমতি না দেখে প্রশ্ন জাগে, আসলেই কি তিনি মারা গেছেন, নাকি তিনি শুধুই শারীরিকভাবে অনুপস্থিত? এর উত্তর হলো- শারীরিক উপস্থিতি না থাকলেও তিনি বেঁচে আছেন মানুষের স্মৃতিতে, কল্পনায় আর তার কালজয়ী লেখায়। 

বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদের অবদানকে এককথায় ব্যাখ্যা করা কঠিন। কেউ যদি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের লেখা দিয়েই তার সাহিত্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে, তাহলে তার বাড়িয়ে বলা হবে না মোটেও। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’। সেই থেকে শুরু এরপর চার দশকের বেশি সময়জুড়ে তিনি লিখেছেন উপন্যাস, ছোটগল্প, গান, কবিতা। নির্মাণ করেছেন, অসংখ্য দর্শকপ্রিয় নাটক ও চলচ্চিত্র। সবখানেই রেখে গেছেন, তার স্বতন্ত্র প্রতিভার ছোঁয়া। তার লেখার ভাষা ছিল সহজ। চরিত্রগুলো হতো জীবন্ত। তার সৃষ্ট গল্পগুলো সাধারণ হলেও তাতে থাকত এক ধরনের মায়ার ঘোর। যে মায়া পাঠককে টেনে রাখত গল্পের মধ্যে। এই মায়ায় ছিল হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় শক্তি। তার তৈরি হিমু, মিসির আলি, শুভ্র চরিত্রগুলো আজও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে মানুষের মধ্যে, এমনকি অনেকের জীবনের দৃষ্টিভঙ্গিতেও। আজও হিমু খালি পায়ে হেঁটে বেড়ায় ঢাকার অলিগলি। আজও মিসির আলি যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন রাখেন রহস্যের মুখে, শুভ্র আজও নিজের নজরে দেখে এই পৃথিবী। 

হুমায়ূন আহমেদের লেখার ছোট ছোট মুহূর্ত, এবং সম্পর্কের টানাপড়েন দিয়েই তৈরি হয় গভীরতা। ঠিক যেমন- মানুষের বাস্তব জীবন বাইরে থেকে সহজ মনে হলেও, ভেতরটা হয় জটিল। অনেকে সাহিত্যসমালোচনায় তার লেখাকে ‘সহজ’ বলে অবজ্ঞা করেন। কিন্তু সাহিত্য বোদ্ধা মাত্রই জানেন, সাহিত্যে সহজ হওয়াই মূলত কঠিন কাজ। হুমায়ূন আহমেদ সেই কঠিন কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করেছেন। তৈরি করেছেন নিজের স্বকীয় স্থান। 

সাহিত্য ছাড়া নাট্যকার হিসেবেও তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ। কোথাও কেউ নেই, আজ রবিবার, বহুব্রীহি কিংবা অয়োময়; এসব নাটককে শুধু বিনোদনের উপাদান ভাবলে ভুল হবে। এগুলো হয়ে উঠেছিল আধুনিক পরিবর্তনশীল একসময়ের সামাজিক আয়না। নাটকে হাস্যরসের আড়ালে তিনি তুলে ধরেছেন পরিবার, শহরজীবন, সম্পর্কের ভাঙা-গড়া, কোনো ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তের যন্ত্রণা। চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন সৎ ও একাগ্র। তার চলচ্চিত্রে অতিরঞ্জিত চমকের বদলে গল্পটাই বেশি গুরুত্ব পেত। আগুনের পরশমণি কিংবা শ্যামল ছায়া তার প্রমাণ।
হুমায়ুন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোনা মহুকুমার মোহনগঞ্জে তার মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শহিদ ফয়জুর রহমান আহমদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। আর মা আয়েশা ফয়েজ ছিলেন গৃহিণী। 

তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্মের মধ্যে রয়েছে- উপন্যাস: শঙ্খনীল কারাগার, নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া, লীলাবতী, কবি, বাদশাহ নামদার, ময়ূরাক্ষী, দেয়াল, অপেক্ষা, আমার আছে জল, প্রিয়তমেষু, সমুদ্র বিলাস, অয়োময়, দুই দুয়ারী, নীল অপরাজিতা, জল জোছনা, নবনী, যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ, ইস্টিশন, মীরার গ্রামের বাড়ী ইত্যাদি। সিনেমা: আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, শ্যামল ছায়া, ঘেটুপুত্র কমলা, চন্দ্রকথা। টেলিভিশন ধারাবাহিক: এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আজ রবিবার, অয়োময়। 

এক পর্বের নাটক: আমরা তিন জন, আজ জরীর বিয়ে, অন্তরার বাবা, খোয়াব নগর, গুপ্ত বিদ্যা, কনে দেখা, জইতরি, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, পুষ্প কথা, বাদল দিনের প্রথম কদমফুল, সবাই গেছে বনে ইত্যাদি। 
গান: একটা ছিল সোনার কন্যা, যদি মন কাঁদে, আমার আছে জল, নদীর নাম ময়ূরাক্ষী ও আমার রসিক বন্ধু রে, ও আমার উড়াল পঙ্খী রে, আমার ভাঙ্গা ঘরের ভাঙ্গা চালা, কন্যা নাচিল রে, বাজে বংশী, চান্নি পসরে কে আমায় স্মরণ করে, চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়।

হুমায়ুন আহমেদ তার বহুমাত্রিক সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদক, বাচসাস পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদক, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ইত্যাদি।

মৃত্যুর আগে গুণী এই লেখক দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়েছেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক শোকের ছায়া দেখা যায়। তবে চলে যাওয়াটাই তার জন্য পূর্ণবিরাম নয়। পুরোনো পাঠকের মনে তো তিনি সবসময়ই থাকেন, আবার নতুন করে জন্ম নেন নতুন পাঠকের মনে। মৃত্যুর অনেক বছর পরেও বইমেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় যে লেখকের বই, তিনি হুমায়ূন আহমেদ। এত দিন পরেও হুমায়ূন আহমেদের এই জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে, ‘কীর্তিমানের মৃত্যু নেই’। 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!