ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিশু শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তারের (৯) মৃত্যুতে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কুনিয়া গ্রামে চলছে মাতম। গত সোমবার বিকেলে দুর্ঘটনার খবর গ্রামে পৌঁছলে চারপাশে নেমে আসে বিষাদের ছায়া, স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
নিহত ফাতেমা আক্তার কুনিয়া গ্রামের প্রবাসী বনি আমিন ও রুপা দম্পতির কন্যা। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। মায়ের সঙ্গে তারা ঢাকায় বসবাস করত। প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল বাবা বনি আমিন কুয়েত থেকে দেশে ফিরে এসেছেন।
জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিজ গ্রাম কুনিয়া গ্রামে জানাজা শেষে কাওমি মাদ্রাসার পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
ফাতেমার মরদেহ ভোররাতে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম। স্বজন ও প্রতিবেশীরা ফাতেমাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে সেখানে ভিড় করেন।
নিহত ফাতেমার ফুফু ইয়াসমিন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ভাইজি ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত, কালকে (সোমবার) দুর্ঘটনায় মারা যায়। ওকে আমরা প্রথমে খুঁজে পাচ্ছিলাম না, পরে ঢাকার সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সাড়ে ৭টার দিকে পাওয়া যায়। এরপর ওখান থেকে রাত ৩টার দিকে খুলনায় নিয়ে আসা হয়। ওর ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল যে ডাক্তার হবে, আমাদেরও স্বপ্ন ছিল ফাতেমাকে ডাক্তার বানাব। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
তিনি আরও বলেন, ছোটবেলা থেকে শান্তশিষ্ট মেয়েটি ছিল আমাদের সবার চোখের মণি। ফাতেমা সবার বড়, ওর ছোট দুটো ভাই আছে। ও ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় ভালো ছিল, একবার বললেই সব কিছু মনে থাকত। কালকে ওর স্কুলটা ছুটি হয়ে গেছিল, কিন্তু ও কোচিংয়ের জন্য ওয়েট করছিল। আজকে (গতকাল) সে লাশ হয়ে বাড়িতে এলো! আমরা আসলে ওর শোক কীভাবে কাটিয়ে উঠব বুঝতে পারছি না।
ফাতেমার চাচাতো ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, সকালেই ফাতেমার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি যে কীভাবে জানাজা পড়িয়েছি ভাষায় বোঝাতে পারব না কতটা কষ্ট হয়েছে। জানাজা শেষে গ্রামের কুনিয়া কাওমি মাদ্রাসা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার দুপুর ১টা ১৮ মিনিটের দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অন্তত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ফাতেমাসহ একাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :