শাহজালাল আন্তর্জাতিক ও অন্য বিমানবন্দরের লাউঞ্জের লিজ বাতিল, নবায়ন এবং নতুনভাবে বরাদ্দে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এসব লেনদেনে বেবিচকের একজন প্রভাবশালী সদস্যের নেতৃত্বে একটি চক্র সক্রিয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত এপ্রিলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় শাহজালালসহ অন্যান্য বিমানবন্দরে লিজ নেওয়া দুই ব্যক্তির লাউঞ্জ বাতিলের নির্দেশনা দেয়। এই দুই ব্যক্তি ক্ষমতাচ্যুত বিগত সরকারের ছত্রছায়ায় ছিলেন, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেবিচকের চক্রটি লাউঞ্জগুলো শাহজালালের অভ্যন্তরীণ স্পাইসি রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী সাদিকে বরাদ্দ দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এ জন্য সাদির সঙ্গে চক্রটির কোটি টাকার রফা হয়।
পত্রে অভিযোগ করা হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুন মাসে সব বিমানবন্দরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লিজ নবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বেবিচক চেয়ারম্যানের দপ্তরে সুপারিশনামা পাঠান। কিন্তু চক্রটির যোগসাজশে সব নথিপত্র একজন সদস্যের দপ্তরে ফাইলবন্দি করে রাখা হয়।
এদিকে চক্রটি লিজ বাতিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের চিঠির অজুহাতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে আওয়ামী দোসর তকমা দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে। যারা চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দিতে পারেনি তাদের লিজ বাতিল করে দেওয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে ১৬ প্রতিষ্ঠানের লিজ বাতিলের বিষয়টি উল্লেখ করা যায়।
অভিযোগে বলা হয়, গতকাল বুধবার পর্যন্ত লিজ নবায়নের জন্য ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফাইল কেবলমাত্র আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় ফাইলবন্দি করে রাখা হয়। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সুবিধা মিলেছে, তাদের ফাইলগুলো অনুমোদনের জন্য বর্তমান চেয়ারম্যান দপ্তরে পাঠানো হয়। চেয়ারম্যান জুনে বিদেশ ভ্রমণে থাকায়, এসব ফাইল তার দপ্তরে পড়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যে পাঁচ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে শাহজালাল ও শাহ আমানতে লাউঞ্জ ইজারা দেওয়া হয়েছিল, তাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ফের ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করছে চক্রটি। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠান হলো- শাহজালাল বিমানবন্দরের চিকেন এক্সপ্রে, আইটি সেন্টার, অলবি রেন্ট-এ কার, এয়ারপোর্ট হেল্পে সার্ভিস এবং শাহ আমানত বিমানবন্দরের এপিআই অ্যাভিয়েশন।
বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বরাবরে অভিযোগ আকারে পাঠিয়েছেন সচেতন ব্যবসায়ী মহল।
এই অভিযোগপত্রে বলা হয়, এই পাঁচ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক খান মোহাম্মদ ইকবাল। তিনি কিশোরগঞ্জের অধিবাসী। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও আব্দুল হামিদের আত্মীয়তার সূত্রে তিনি বেবিচক থেকে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইজারা নেন। তিনি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ব্যবসা করেছেন। নিজেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিলেও তার প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ভ্যাট ও আয়কর নিবন্ধন নেই।
বেবিচকের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৬ প্রতিষ্ঠানের লিজ বাতিল করে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নেওয়া হলেও ইকবালের পাঁচ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়নি। এখন আবার তাকে নতুন করে লিজ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, দুষ্ট লোক বেবিচকে থাকবে না। তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। লাউঞ্জ বরাদ্দ ও নবায়ন নিয়ে ভবিষ্যতে আর অভিযোগ থাকবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।’
আপনার মতামত লিখুন :