জাতীয় পার্টিতে চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোনো পন্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। একই সঙ্গে আনিসুল ইসলাম মাহমুদদের বলয়ের নেতাদের ডাকা কাউন্সিলে দলের নেতাকর্মীদের যেতেও বারণ করেছেন জাপা মহাসচিব।
পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে জাপার প্রবীণ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে দেখাতে চাই, জাতীয় পার্টি কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল নয়, জাতীয় পার্টি একটি আদর্শ।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, গত ২৮ জুন জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। হল বরাদ্দ না পাওয়ায় কাউন্সিল স্থগিত করা হয়। ওই সময় হল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাজেট-সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। তাই, তারা আমাদের হল ভাড়ার অগ্রীম টাকা গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে আমরা ২৭ তারিখেও হল চেয়েছিলাম। কিন্তু, হল কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে হল বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কিছু সিনিয়র নেতা বিষয়টিকে মিথ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদের কিছু সিনিয়র নেতা ২৮ জুনই কাউন্সিল করার জন্য রেষারেষি শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুন জাতীয় পার্টির ৭৮টি ইউনিট কমিটির নেতৃবৃন্দ সভা করে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের ওপরে পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। পরবর্তীতে ২৮ জুন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সিনিয়র নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করার।’
জাপা মহাসচিব আরও বলেন, ‘প্রেসিডিয়াম সদস্যদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ ধারা মোতাবেক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান অনেককেই বহিষ্কার করেন। এতে বহিষ্কৃতরা একটি দেওয়ানি মোকদ্দমা করেন। দীর্ঘ শুনানির পরে মহামান্য বিজ্ঞ আদালত আদেশ দেন যে, আবেদনটি পরিবর্তিত আকারে মঞ্জুর করা হলো। আদালতের নির্দেশনা হলো জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও দপ্তর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত সাংগঠনিক কর্মকা-ে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে বাতিল করা হয়নি, চেয়ারম্যান পদ অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি এবং বর্তমান চেয়ারম্যানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়নি। এর মানে হচ্ছে, যারা প্রাথমিক সদস্যপদসহ বহিষ্কৃত হয়েছেন, তারা অদ্যাবধি পর্যন্ত বহিষ্কৃত আছেন। যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাদের পক্ষে জাতীয় পার্টির কোনো সভায় অংশ নেওয়া অবৈধ। তারা কোনো সভা ডাকতে পারেন না এবং প্রেসিডিয়াম সভা করতে পারেন না। বহিষ্কৃতদের কাউন্সিল ডাকার অধিকার নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই জাতীয় পার্টির পদ-পদবি ব্যবহার করে সভা করছেন, কেউ মহাসচিব দাবি করছেন। প্রকৃতপক্ষে আদালতের আদেশে মহাসচিব শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি এবং আদেশেও মহাসচিবের বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। তাহলে আরেকজন কী করে মহাসচিব দাবি করেন? আমরা লক্ষ করছি, আদালতের রায়ের অপব্যাখ্যা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
গঠনতন্ত্রের ২০/২(খ) ধারায় বলা হয়েছে, চেয়ারম্যানের দীর্ঘ সময়ের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান অথবা প্রেসিডিয়ামের কো-সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করতে পারবেন বলে তিনি জানান। দলের চেয়ারম্যান সব সিদ্ধান্ত সভা করে সবার মতামতের ভিত্তিতে নিয়ে থাকেন। জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন জাপা চেয়ারম্যান।
এদিকে পাল্টা আরেক সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দাবি করেন, দলের ভেতরে ভাগাভাগির কোনো প্রশ্ন নাই। এটা এরশাদ সাহেবের ১২ নম্বর নিবন্ধিত জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কার সম্মেলন। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, তাদের এই সম্মেলন হবে ‘আত্মশুদ্ধি ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব পুনর্গঠনের’ সম্মেলন। কাউন্সিলের মাধ্যমে দেখাতে চাই, জাতীয় পার্টি কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল নয়, জাতীয় পার্টি একটি আদর্শ। জাতীয় পার্টি সব সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই কাউন্সিল হবে তৃণমূল কর্মীদের জাগরণের দিন।
নবীন-প্রবীণ নেতৃত্বের সম্মিলন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপরেখা। এটি কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের নতুন শপথের দিন। ঐক্যের শক্তি, গণতন্ত্রের ভিত্তি ও জনগণের প্রত্যাশা বুকে নিয়ে জাতীয় পার্টি ‘এগিয়ে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে চুন্নু বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই শক্তি, ঐক্য ও গণতন্ত্রের যাত্রায় দেশের মানুষ আবারও জাতীয় পার্টির দিকে প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে। জাতীয় পার্টি আবারও সেই বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠবে।’