দূরের আকাশে মেঘের খেলায় রঙিন ভোর। গর্জন তুলে ধেয়ে আসা ঢেউ যেন সমুদ্রের এক অনন্ত ডাক। সেই ডাকেই সাড়া দিচ্ছেন হাজারো ভ্রমণপিপাসু। ঈদের ছুটি কিংবা সাপ্তাহিক অবকাশÑ যেকোনো সুযোগ পেলেই পর্যটকের পা পড়ছে কুয়াকাটায়, যেখানে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায় সমুদ্রের বুকে। গতকাল শুক্রবার কুয়াকাটা সৈকতে চোখে পড়ার মতো পর্যটক এসেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল গড়াতেই কুয়াকাটার সৈকতে জমে ওঠে পর্যটকের ভিড়। কেউ গা ভিজিয়ে নিচ্ছেন নোনাজলে, কেউ বা সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত। শিশুরা বালির দুর্গ বানিয়ে খেলায় মগ্ন, আর বড়রা ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটে যাচ্ছেন সৈকতের পূর্ব প্রান্তের ঝাউবনের দিকে। কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটকের আনাগোনা লক্ষ করা গেছে। পর্যটকরা হইহল্লা করে মাতিয়ে রেখেছেন পুরো সমুদ্রসৈকত। সমুদ্রের বুকে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, কেউ বা আবার দল বেঁধে সাঁতার কাটছেন। আনন্দ উপভোগের দৃশ্য স্মৃতিপটে ধারণের জন্য কেউ কেউ ছবি তুলছেন। অন্যদিকে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় ব্যস্ততা দেখা গেছে কুয়াকাটার সব রেস্তোরাঁসহ পর্যটননির্ভর সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। পর্যটকদের উপস্থিতিতে স্বস্তি ফিরছে কুয়াকাটয়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেক দিন কুয়াকাটায় তেমন পর্যটক ছিল না।
সৈকতে কথা হয় পর্যটক আসাদুজ্জামান রিপনের সঙ্গে। তিনি খুলনা থেকে এসেছেন। রিপন বলেন, ‘অনেক দিন ধরে প্ল্যান করছি আসবো, নানা কারণে আসা হয়নি। অবশেষে আজ এসেই পড়লাম। খুব সুন্দর জায়গা। বড় বড় ঢেউ আমাকে মুগ্ধ করেছে।’
পর্যটকদের জন্য এখন কুয়াকাটায় রয়েছে নানা আকর্ষণ। সৈকতের পাশেই তাজা সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ, ঝাউবনের শান্ত সবুজ দৃশ্যপট, রাখাইন পল্লির নিজস্ব সংস্কৃতি, ফাতরার চর, লাল কাঁকড়ার চর, চর গঙ্গামতি আর সাইকেল কিংবা মোটরবাইকে পুরো সৈকত পাড়ি দেওয়ার মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক শহীদুল ইসলাম সাগর বলেন, ‘সাগরের ঢেউ দেখে খুবই ভালো লাগছে। তবে সি বিচের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। জিও ব্যাগগুলো এমনভাবে পড়ে আছে, আমরা গোসল করতে ভয় পাচ্ছি। ঢেউয়ের তোড়ে অনেক জায়গায় গর্ত হয়ে গেছে। সেসব গর্তে পড়ে অনেকে ব্যথা পাচ্ছেন।’
সৈকতের ব্যবসায়ী রুবেল হাওলাদার বলেন, ‘প্রায় দুই মাস ধরে পর্যটক ছিল না। আজ (গতকাল) পর্যটকের সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। বেচাকেনাও মোটামুটি ভালো হয়েছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা সব পর্যটককে সেবা দেওয়া ও আইনি সহায়তা দেওয়া আমাদের কর্তব্য।
সাপ্তাহিক ছুটিতে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে। তাদের সেবায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে। বিভিন্ন টিমে ভাগ হয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। আমাদের মোবাইল টিম মাঠে কাজ করছে। মাইকিং করে পর্যটকদের সব বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে’।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন