শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম

দেশীয় অ্যাপ দিয়েই শনাক্ত হবে মুরগির রোগ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম

দেশীয় অ্যাপ দিয়েই শনাক্ত হবে মুরগির রোগ। ছবি - সংগৃহীত

দেশীয় অ্যাপ দিয়েই শনাক্ত হবে মুরগির রোগ। ছবি - সংগৃহীত

বাংলাদেশের পোলট্রি খামারির খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশজুড়ে ছোট-বড় হাজার হাজার খামারি প্রতিদিন মুরগি পালন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে পোলট্রি খামারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মুরগির বিভিন্ন রোগ সনাক্তকরণ এবং সময়মতো প্রতিকার করা। অনেক সময় খামারিরা রোগের লক্ষণ বুঝতে পারেন না, ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়। বিশেষ করে কক্সিডিওসিস, সালমোনেলোসিস, নিউক্যাসল ডিজিজের মতো মারাত্মক রোগ দ্রুত শনাক্ত করা কঠিন। সাধারণ ল্যাব টেস্ট বা পশুচিকিৎসকের পরামর্শ পেতে অনেক সময় লাগে এবং খরচও অনেক।

এই সমস্যার সমাধানে দেশীয় আইটি স্টার্টআপ ‘নেভরোনাস সিস্টেমস’ তৈরি করেছে একটি নতুন প্রযুক্তি-ভিত্তিক টুল, যার নাম ‘পোলট্রি পাল’। এটি একটি মোবাইল অ্যাপ যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে মুরগির রোগের প্রাথমিক ধারণা দিতে সক্ষম। মুরগির বিষ্ঠার ছবি বিশ্লেষণ করে অ্যাপটি দ্রুত ও সহজভাবে সম্ভাব্য রোগ সনাক্ত করতে পারে। ফলে খামারিরা আগেভাগেই সতর্ক হতে পারেন এবং বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি এড়াতে পারেন।

উদ্ভাবনের পেছনের গল্প

গত শনিবার বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ে নেভরোনাস সিস্টেমসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাজিব মোস্তাফিজ জানান, দেশের খামারিদের জন্য সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে অ্যাপটি তৈরি করেছেন তিনি ও সহপ্রতিষ্ঠাতা আকরাম হোসেন। রাজিব মোস্তাফিজ বলেন, “পোলট্রি খামারে কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়া মানে খামারিদের মাথায় হাত। অনেক সময় রোগের লক্ষণ বোঝার আগেই ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়। আমরা চেয়েছি এমন একটি টুল তৈরি করতে, যা রোগের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে খামারিকে সতর্ক করতে পারবে। পোলট্রি পাল অ্যাপ সেই কাজটিই করে।”

তিনি আরও জানান, এই অ্যাপটি তৈরি করতে দুই প্রতিষ্ঠাতার দেড় বছরের বেশি সময় লেগেছে এবং খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। এই দীর্ঘ গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলেই আজ খামারিরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মুরগির রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেতে পারছেন।

পোলট্রি পাল অ্যাপ কিভাবে কাজ করে

পোলট্রি পাল অ্যাপ ব্যবহার করতে খামারিকে কোনো জটিল প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয় না। কেবল মুরগির বিষ্ঠার একটি পরিষ্কার ছবি তুলে অ্যাপে আপলোড করতে হয়। এরপর অ্যাপের শক্তিশালী AI অ্যালগরিদম ছবিটি বিশ্লেষণ করে। এখানে অ্যাপটি বিবেচনা করে:

  • বিষ্ঠার রং

  • ঘনত্ব

  • সূক্ষ্ম বায়ো-মার্কার

এর ভিত্তিতে অ্যাপটি একটি প্রাথমিক ফলাফল প্রদান করে। ফলাফলে জানা যায় মুরগি সুস্থ আছে কি না, বা কোন রোগের প্রাথমিক লক্ষণ লক্ষ্য করা গেছে। রাজিব মোস্তাফিজ স্পষ্ট করে বলেন, “অ্যাপটি মূলত প্রাথমিক রোগ শনাক্তকারী টুল, কোনোভাবেই বিশেষজ্ঞ পশুচিকিৎসকের বিকল্প নয়। আমরা সব সময় ব্যবহারকারীদের যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগে নিবন্ধিত ভেটেরিনারিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করার পরামর্শ দিই।”

খামারিদের জন্য আশীর্বাদ

বাংলাদেশের পোলট্রি খামারি সাধারণত ছোট ও মাঝারি ব্যবসা চালান। অনেক সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুত পশুচিকিৎসকের সেবা পাওয়া বা নমুনা ল্যাবে পাঠানো সম্ভব হয় না। এই অবস্থায় পোলট্রি পাল অ্যাপ খামারিদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।

অ্যাপটির মূল সুবিধা গুলো হলো:

  1. অফলাইন কার্যকারিতা
    একবার অ্যাপটি ডাউনলোড হলে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই এটি ব্যবহার করা যায়। মোবাইলের প্রসেসিং ক্ষমতা ব্যবহার করে অ্যাপটি সরাসরি রোগ নির্ণয় করে, যা গ্রামীণ পরিবেশে খুবই কার্যকর।

  2. খরচ ও সময় সাশ্রয়
    খামারিরা তাৎক্ষণিক ফলাফল পেয়ে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন। ফলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়ানো যায়।

  3. খামারিদের ক্ষমতায়ন
    অ্যাপটি শুধু রোগ নির্ণয়ই করে না, এটি রোগ-সম্পর্কিত বিভিন্ন জেনেরিক ও বাণিজ্যিক ওষুধের তথ্যও প্রদান করে। এতে খামারিরা আরও সচেতন ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠেন।

  4. পশুচিকিৎসকদের সহায়ক
    অ্যাপটি পশুচিকিৎসকদের জন্য ‘এক্সপার্ট সেকেন্ড অপিনিয়ন’ হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া আরও মসৃণ করতে সহায়ক।

দেশের পোলট্রি খাত ও প্রযুক্তির সংযোগ

বাংলাদেশে পোলট্রি খাত অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। দেশজুড়ে খামারিরা কর্মসংস্থান তৈরি করে, বাজারে ডিম ও মুরগির সরবরাহ নিশ্চিত করে। তবে রোগের প্রাদুর্ভাব খামারিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রচলিত ল্যাব পরীক্ষার খরচ অনেক বেশি এবং সময়সাপেক্ষ। বিশেষ করে ছোট খামারিরা সব সময় দ্রুত সেবা বা ল্যাব পরীক্ষার সুবিধা পান না। এই ক্ষেত্রে পোলট্রি পাল অ্যাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

AI প্রযুক্তির ব্যবহার মুরগির রোগ সনাক্তকরণে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। আগে খামারিরা দিনে দিনে অপেক্ষা করতেন, অনেক সময় মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হতো পশুচিকিৎসকের সেবা নিতে। এখন এই জটিল কাজ স্মার্টফোনেই সম্ভব।

ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ও প্রতিক্রিয়া

খামারিরা ইতিমধ্যেই অ্যাপটি ব্যবহার শুরু করেছেন। তারা জানাচ্ছেন, অ্যাপের মাধ্যমে তারা দ্রুত মুরগির রোগের প্রাথমিক তথ্য পাচ্ছেন এবং সময়মতো প্রতিকার গ্রহণ করতে পারছেন। এর ফলে ক্ষতি অনেকাংশে কমেছে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি খামারিরা যাদের জন্য ল্যাব টেস্ট ও পশুচিকিৎসকের খরচ অনেক বেশি, তাদের জন্য এই অ্যাপ এক আশীর্বাদ।

রাজিব মোস্তাফিজ বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি অ্যাপটি খামারিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। তারা শুধুমাত্র রোগ শনাক্তকরণ নয়, বরং রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এটি আমাদের মূল উদ্দেশ্যও ছিল—খামারিকে ক্ষমতায়ন করা।”

প্রযুক্তিগত দিক

পোলট্রি পাল অ্যাপের মূল প্রযুক্তি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ইমেজ প্রসেসিং অ্যালগরিদম। এই প্রযুক্তি মুরগির বিষ্ঠার ছবি বিশ্লেষণ করে রঙ, ঘনত্ব এবং অন্যান্য সূক্ষ্ম সূচক দেখে সম্ভাব্য রোগের পূর্বাভাস দেয়।

  • AI অ্যালগরিদম: ছবি থেকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ

  • ডাটাবেস সংযোগ: বিভিন্ন রোগের বায়োমার্কার সম্পর্কিত তথ্য ব্যবহার

  • ইউজার-ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস: সহজ ব্যবহারযোগ্য

  • অফলাইন মোড: ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া কাজ

এই সব ফিচার একসাথে খামারিকে দ্রুত, সঠিক ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করছে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

নেভরোনাস সিস্টেমসের লক্ষ্য শুধুমাত্র একটি অ্যাপ বানানো নয়। তারা ভবিষ্যতে আরও নতুন ফিচার যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। এতে থাকবে:

  • আরও রোগ শনাক্তকরণ

  • মুরগির খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত পরামর্শ

  • স্বাস্থ্যকর খামার পরিচালনার জন্য রিয়েল টাইম রিপোর্ট

  • অ্যাপস্টোরে উন্মুক্ত করা, যাতে iOS ব্যবহারকারিরাও সুবিধা নিতে পারেন

রাজিব মোস্তাফিজ জানান, “আমাদের লক্ষ্য হলো এমন প্রযুক্তি তৈরি করা যা খামারিকে সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়। এটি শুধু রোগ শনাক্তকরণ নয়, বরং খামারি যাতে আরও সচেতন, স্বাবলম্বী ও দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন, সেই দিকেও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।”

পোলট্রি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায়, রোগ সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের ছোট ও মাঝারি খামারিরা এই সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগেন। ‘পোলট্রি পাল’ অ্যাপ এই সমস্যার সমাধান আনতে সক্ষম। এটি দ্রুত, সাশ্রয়ী, ব্যবহারবান্ধব এবং খামারিকে ক্ষমতায়নকারী প্রযুক্তি।

মুরগির বিষ্ঠার ছবি বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে রোগ শনাক্ত করার মাধ্যমে খামারিরা আগেভাগেই সতর্ক হতে পারছেন। এটি শুধুমাত্র খামারির জন্যই নয়, পশুচিকিৎসকদের জন্যও সহায়ক। এই অ্যাপ দেশের পোলট্রি শিল্পে প্রযুক্তির সংযোগকে আরও দৃঢ় করছে এবং খামারিদের জীবনকে সহজ ও সুরক্ষিত করছে।

বর্তমানে অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে এবং খুব শিগগিরই অ্যাপস্টোরেও উন্মুক্ত হবে।

পোলট্রি পাল অ্যাপ তাই কেবল একটি টুল নয়, এটি বাংলাদেশের খামারিদের জন্য একটি আশার আলো, যা তাদের পেশা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!