ঢাকা রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

নতুন সংবিধানের প্রস্তাব ছাড়া জুলাই সনদ ব্যর্থ : বললেন আখতার 

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৬:৫৪ এএম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আইনি ভিত্তি দেওয়া ও বাস্তবায়ন করা না হলে জুলাই সনদ মানুষের মুক্তির আকাক্সক্ষা ধারণ করতে ব্যর্থ হবে। তিনি বলেন, জুলাই সনদকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধানের প্রস্তাব যদি কমিশন না জানায়, তাহলে এটি ব্যর্থ। 

গতকাল শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন আরও জানান, এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। জুলাই সনদের খসড়া সম্পর্কে এনসিপির পর্যবেক্ষণ জানাতে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়। 

আখতার হোসেন বলেন, ব্যর্থ কোনো সনদে জাতীয় নাগরিক পার্টির সই করার কোনো অর্থ থাকে না। কমিশন জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে। ঐকমত্যের স্বার্থে ছাড় দিয়ে এনসিপি পরিবর্তিত প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছে বলে জানান এই নেতা। সদস্যসচিব আরও বলেন, আমরা এখানে এসে দেখছি যে, প্রস্তাবগুলোর ব্যাপারে যখন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সেগুলোকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে ব্যাপারটা নিয়েই অনেকে নানা ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করছেন। সে জায়গায় আমি তাদের কাছে আহ্বান রাখছি যে আমরা যে বিষয়গুলোতে একমত হলাম, কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেগুলোকে যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়।

নতুন সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, নতুন সংবিধানকে কোনো কোর্ট আর চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। এ কারণেই নতুন সংবিধান করে সেটাতে যদি আমরা সংস্কার প্রস্তাবগুলো অন্তর্ভুক্ত করি, তাহলেই কেবল কোর্ট সেটাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বিএনপি আসলে মন থেকে কতটা গ্রহণ করে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন আখতার হোসেন। এ বিষয়ে একমত হতে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

আখতার হোসেন বলেন, জুলাই গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে সংস্কারের অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা না গেলে আইনি মারপ্যাঁচ রেখে দিয়ে নোট অব ডিসেন্টের কথা বলে পরবর্তী সময়ে কেউ ক্ষমতায় এসে সংস্কার বাস্তবায়ন না হওয়ার পথ খোলা রাখা হলে জুলাই সনদের এই অপরিপূর্ণতার কাছে একটা প্রতারণার জায়গা তৈরি করবে। বিএনপি সেই প্রতারণার পথে অগ্রসর হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন রাখতে চাই। 

জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্টের বিষয়ে তিনি বলেন, নোট অব ডিসেন্টের অর্থ কমিশন এখনো আমাদের পরিষ্কার করেনি। এর অর্থ এটা নয়, কমিশন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তার বিপরীত কিছু বাংলাদেশে প্রবর্তন করা হবে। কমিশনের সব সিদ্ধান্তে সব রাজনৈতিক দল একমত হবে, তা নয়; কিন্তু বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে তারা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা যেন দেশে হুবহু বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে স্থির সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। 

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মনে করি বাংলাদেশে যে নির্বাচন হবে, তার মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটা নতুন শাসনতান্ত্রিক কাঠামো পাবে। এই আকাক্সক্ষা যদি নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ না হয়, তাহলে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো মানে থাকে না। 

আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি মন্তব্য করে আখতার হোসেন বলেন, যদি সরকার সামনে নতুন সংবিধান ও জুলাই সনদের বিষয় অপরিপূর্ণ রাখে এবং তা বাস্তবায়ন না করে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়, সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এনসিপির সংশয়ের জায়গা রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারি কিংবা তার আগেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু সেই নির্বাচনের ধরনটা কী রকম হবে, সেটা জাতির কাছে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। আমি যদি বিদ্যমান সংবিধানকে বহালতবিয়তে রেখে সামনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, তাহলে ওই সংবিধানের মধ্য দিয়ে এ দেশে আবার ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা থেকে যায়। এ কারণেই আমাদের দাবি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে। নতুন সংবিধানের বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যদি সামনের নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তাহলে এনসিপি যেকোনো সময় সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। 

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, সেগুলো কেবল সংসদ নির্বাচন করার কথা বলছে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো পরের সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলে সেগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ কারণেই আমরা নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়েছে। সরকার একটা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতিকে একটা নতুন সংবিধান উপহার দিতে পারে।