ঢাকা রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

এক দিনে ৪ শিশু-তরুণের  প্রাণ কাড়ল ডেঙ্গু

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৬:৫৮ এএম
  • নতুন আক্রান্ত ২৪৮ জন
  • তবুও মশা নিয়ন্ত্রণে নেই কার্যকর উদ্যোগ

ডেঙ্গুতে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু। গতকাল বুধবার এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুর সংক্রমণে মারা গেছেন ৪ জন শিশু-তরুণ। বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। একই সময় সারা দেশে ২৪৭ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭ হাজার ৭৮২ জন। এর আগের তিন বৃহস্পতিবার একসঙ্গে ৫ জনের মৃত্যু হয়। 

শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) তিনজন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২২৬ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরের এ যাবত ২৬ হাজার ৭৮১ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। 

চলতি বছরের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২৮ হাজার ২০২ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক দুই শতাংশ পুরুষ ও ৪০ দশমিক আট শতাংশ নারী রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর এ যাবত ডেঙ্গুতে ১১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত চারজনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে ৪ ও ৭ বছর বয়সি দুই মেয়ে। মুগদা মেডিকেলে মারা গেছেন ২৬ বছর বয়সি এক তরুণী, আর ঢাকা মেডিকেলে মারা গেছে ১৫ বছর বয়সি এক কিশোর।

সাধারণত জুন-জুলাই মাসকে বলা হয় ডেঙ্গুর প্রজনন মৌসুম। তবে বর্ষাকাল আরেকটু বিস্তৃত হলে আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও থাকতে পারে এর প্রভাব। কিন্তু চলতি বছর আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কপালে ভাঁজ পরাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে নতুন নতুন রোগী। হাসপাতালে ভর্তিদের মধ্যে কেউ কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও বেশির ভাগই কাতরাচ্ছেন জ্বরে। সিটি করপোরেশন লোক দেখানো পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করলেও কার্যত মশা নিয়ন্ত্রণ কিছুই হচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। আর সিটি করপোরেশন বলছে, নগরবাসীর অসচেতনতার কারণেই অনেক চেষ্টাও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা।

কিন্তু তারপরও ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বহন করে এডিস মশা নিধনে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। এই জাতের মশা নালা-নর্দমার নোংরা পানিতে জন্মায় না, বরং জন্মায় মানুষের ঘরের ভেতরে ও আশপাশে জমে থাকা অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার পানিতে। ছাদে ও বারান্দায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে, গাছের টব, ডাবের খোসা ইত্যাদি আঁধারে জমে থাকা পানিতে। বর্ষাকালে প্রায়ই থেমে থেমে বৃষ্টি হয় বলে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। তাই জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে থাকে এবং এটাকেই ডেঙ্গুজ্বরের মৌসুম বলা হয়। প্রাকৃতিকভাবে জুন থেকেই শুরু হয় ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজনন ঋতু। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখনই মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। 

এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২১৪ এবং ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫৭৫ জনের। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।