ঢাকা রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

সাদাপাথর ফেরত দিতে ৩ দিনের আল্টিমেটাম

সিলেট ব্যুরো
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৭:০০ এএম
  • পাথর লুটে জাফলংয়ে আটক ২
  • জৈন্তাপুরে ৩০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার
  • উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি কেরেছ বিজিবি

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটন এলাকার সাদাপাথর লুটের ঘটনার পর থেকে অভিযান পরিচালনাসহ নানা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় সাদাপাথর ফিরিয়ে দিতে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে প্রশাসন। জাফলংয়ে পাথর লুটের ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। 

জৈন্তাপুরে জব্দ করা হয় আরও ১৪ হাজার ঘনফুট পাথর। আর পাথর লুটের ঘটনায় বিজিবি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করেছে। 

সাদাপাথর ফিরিয়ে দিতে আল্টিমেটাম :

প্রশাসন বলেছে, সিলেটের সাদাপাথর এলাকা থেকে পাথর সরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলো তিন দিনের মধ্যে ফিরিয়ে না দিলে কঠোর অবস্থানে যাবে তারা। এই সময়ের পরে যদি কারো কাছে সাদাপাথর পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সর্বসাধারণের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেনÑ সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান পদ্মসেন সিংহ।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন মিয়ার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেনÑ কোম্পানীগঞ্জের গোয়াইনঘাট সার্কেল এএসপি আব্দুল্লাহ আল নোমান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল মতিন, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সুজন চন্দ্র, সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা ফয়জুর রহমান প্রমুখ।

জাফলংয়ে পাথর লুটের ঘটনায় আটক ২ :

এদিকে সিলেটের জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে পাথর লুটের ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন উপজেলার জাফলংয়ের মামার বাজার এলাকার মৃত শহিদ মিয়ার ছেলে আফজল হোসেন ও লাখেরপাড় গ্রামের মন্তাজ মিয়ার ছেলে জাবেদ আহমদ।

আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে গোয়াইনঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, ধৃত আসামিদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে এবং অপর আসামিদের আটকে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে গোয়াইনঘাটের ইউএনও রতন কুমার অধিকারী জানান, জাফলং জিরো পয়েন্ট থেক লুট হওয়া পাথরের মধ্যে এ পর্যন্ত সর্বমোট ২৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে জিরো পয়েন্টে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কিছু দুষ্কৃতকারী চলতি মাসের ৭, ৮ ও ৯ তারিখে জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে টানা তিন দিনে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার ঘনফুট পাথর লুট করে। এ ঘটনায় গত সোমবার (১৮ আগস্ট) ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল মুনায়েম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০০-১৫০ জনকে আসামি করে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ২৯।

জৈন্তাপুরে জব্দ আরও ১৪ হাজার ঘনফুট পাথর :

জৈন্তাপুর উপজেলায় উপজেলা প্রশাসন ও টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযানে ১৪ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় উপজেলার ৪ নম্বর বাংলাবাজার এলাকায় অভিযানে পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার লাবনী, জৈন্তাপুর মডেল থানার পুলিশ ও সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) দায়িত্বাধীন শ্রীপুর বিওপির সদস্যরা।

অভিযান চলাকালে ৪ নম্বর বাংলাবাজার এলাকায় কয়েকটি ক্রাশার মিলে রাংপানি নদীর ২ হাজার ঘনফুট ও শ্রীপুর চা-বাগানের পাশে মজুত করে রাখা আরও ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, গত সপ্তাহে ৪ নম্বর বাংলাবাজার এলাকায় জব্দকৃত সাড়ে ৯ হাজার ঘনফুট পাথর ও শনিবার ২ হাজার ঘনফুটসহ মোট সাড়ে ১১ হাজার ঘনফুট পাথর রাংপানি নদীতে পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অভিযানে শ্রীপুর চা-বাগান এলাকা থেকে জব্দ করা ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জাফলংয়ের পিয়াইন নদীতে পুনঃস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি গত সপ্তাহে শ্রীপুর পাথর কোয়ারি এলাকায় জব্দকৃত ২০ হাজার ঘনফুট পাথরসহ ৪ নম্বর বাংলাবাজার এলাকায় আরও সাড়ে ১১ হাজার ঘনফুট জব্দকৃত পাথরসহ মোট ৩০ হাজার ঘনফুটের অধিক পাথর প্রশাসনের তদারকিতে রাংপানি নদীতে পুনঃস্থাপনের কাজ চলছে। 

বিজিবির উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি :

সিলেটে পাথর লুটপাটের ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিজিবি। এ তথ্য দিয়েছেন ১৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার। 

তিনি জানানা, সদর দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি পুরো ঘটনা ও বিজিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তদন্ত করছে। গতকাল জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল এলাকায় টহল কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, পাথর লুটপাটের সঙ্গে জড়িত মহল বিজিবি সম্পর্কে নানা ধরনের অপতথ্য প্রচার করছে। পাথর লুটপাট ও সংশ্লিষ্ট ঘটনায় বিজিবির দায়িত্বে অবহেলা আছে কি না, তা তদন্ত করছে সদর দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। 

তিনি আরও বলেন, বিজিবি সার্বক্ষণিকভাবে তাদের আওতাধীন এলাকায় টহল অব্যাহত রেখেছে। এ কারণেই বিজিবি ক্যাম্পের আওতাধীন সীমান্তের ৩০০ গজের ভেতরে এলাকাগুলো থেকে পাথর লুটপাট করতে পারেনি দুর্বৃত্তরা। 

সাম্প্রতিক লুটপাটের পর বিজিবি সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে জনবল বৃদ্ধিসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, গত দুই মাসে পাথর চুরিতে ব্যবহৃত ছয় শতাধিক বারকি নৌকা জব্দসহ আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে বিজিবি। অধিক পরিমাণে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিত টাস্কফোর্সের অভিযান চালানো হলে এত ব্যাপকভাবে লুটপাট হতো না বলেও মন্তব্য করেন বিজিবির এই কর্মকর্তা। 

সিলেটের সাদাপাথর, বিছনাকান্দি, জাফলং, শ্রীপুর-রাংপানি, লোভাছড়াসহ লালখাল সীমান্তঘেঁষা প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র। সাদাপাথর লুটের পর গণমাধ্যমে শ্রীপুরের রাংপানি লুটের চিত্র প্রকাশ পেলে বিজিবি নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর সারী নদী অববাহিকার লালখালে টহল কার্যক্রম বাড়ানো হয়।