ঝিনাইদহের মাটি কৃষির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এই জেলার উর্বর মাটিতে আগে ধান, পাট, আখ কিংবা সবজিই ছিল কৃষকের প্রধান নির্ভরতা। তবে সময় বদলেছে, কৃষকের চিন্তা-ভাবনায়ও এসেছে পরিবর্তন। এখন ঝিনাইদহের মাঠে শুধু শাক-সবজি বা ধান নয়, চোখে পড়ছে বিদেশি ফলের বাগানও।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যুগিহুদা গ্রামে আনারের বাগান গড়ে তুলে সফলতার মুখ দেখছেন তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানা আব্দুল্লাহ। বিদেশি জাতের আনার চাষ করে তিনি একদিকে যেমন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, অন্যদিকে স্থানীয়দের মধ্যে জাগিয়েছেন নতুন উদ্যম।
২০২১ সালে ইউটিউব ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে ভারতীয় ভাগওয়া জাতের ৯১টি চারা সংগ্রহ করে এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন সোহেল। গাছ লাগানোর দুই বছর পর থেকেই ফুল আসা শুরু হয়। বর্তমানে তার পুরো বাগান ভরে গেছে ফলে। একেকটি গাছে ৩০ থেকে ৮০টি পর্যন্ত আনার ধরছে। বাগান দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ভিড় জমাচ্ছে। ফলগুলো লালচে-সবুজ আভা ছড়িয়ে ঝলমল করছে, যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে আঁকা রঙিন তুলির আঁচড়।
স্থানীয় কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘শুরুতে আমরা ভেবেছিলাম এই মাটিতে আনার হবে না। ছেলেটি ভুল করছে। কিন্তু এখন দেখছি ফলনে ভরপুর গাছ। দেখে মনটা ভরে যায়।’
আনারের বাগান দেখতে আসা কলেজছাত্র আশিকুর রহমান জানান, ফেসবুকে ছবি দেখে এসেছি। সত্যিই চোখ ধাঁধানো দৃশ্য। মনে হয় যেন কাশ্মীরের কোনো বাগান।
উদ্যোক্তা সোহেল রানা আব্দুল্লাহ বলেন, প্রথমে অনেকেই নিরুৎসাহিত করেছিল। তবে আমি হাল ছাড়িনি। স্থানীয় বাজারে আনারের চাহিদা ভালো থাকায় আশা করছি এ মৌসুমেই দেড়-দুই লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারব। ভবিষ্যতে আরও জমি নিয়ে আনারের চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।
এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘আনার বাংলাদেশের আবহাওয়ায় একটি নতুন সম্ভাবনা। আমরা উদ্যোক্তাদের পাশে আছি। সোহেলের সফলতা অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।’