‘চায়ের রাজধানী’ মৌলভবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিশাল চা-বাগান এবং উন্নত মানের চায়ের জন্য খ্যাতি রয়েছে। তবে এ রাজ্যে এবার যুক্ত হয়েছে মনোমুগ্ধকর আলপনায় মোড়া একটি সড়ক, যা মুগ্ধ করছে পথচারী থেকে শুরু করে আগত পর্যটক সবাইকে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) সংলগ্ন প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশজুড়ে বিস্তৃত সবুজ চা-বাগানের মধ্যে আঁকা এই আলপনাগুলো যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক অপূর্ব শিল্পশৈলীর মিলন ঘটিয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিনের উদ্যোগে এ সড়কজুড়ে আঁকা হয়েছে মনোমুগ্ধকর আলপনা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার পর্যটনের অন্যতম ব্যস্ততম ভানুগাছ রোডের বিটিআরআই মোড় থেকে শুরু করে বিটিআরআইসংলগ্ন ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে আল্পনার বৈচিত্র্য নজর কাড়ছে স্থানীয় ও ভ্রমণপিপাসুদের। রাস্তার দুই পাশজুড়ে বিস্তৃত সবুজ চা-বাগানের মধ্যে আঁকা এগুলো যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক অপূর্ব শৈল্পিক মিলন ঘটিয়েছে। আলপনার রঙে রঙিন এই রাস্তা শুধু চলার পথ নয়, হয়ে উঠেছে আনন্দ, ভালোবাসা ও সৌন্দর্যের এক অপূর্ব গন্তব্য। শৈল্পিক তুলির আঁচড় আর প্রকৃতির এক মোহনীয় মেলবন্ধনে রাস্তার দুই পাশে সুশৃঙ্খল সবুজ চা-বাগানের নীরব নিসর্গের মাঝখানে ফুটে উঠেছে ছন্দের ঢেউ। এখানে লাল, নীল, হলুদ, সাদা রঙে আঁকা আলপনাগুলো যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ক্যানভাসে ছড়িয়ে পড়েছে চোখ ধাঁধানো নকশার মতো। শুধু দেখার নয়, এটি এখন একটি ‘ফটোস্পট’ হয়ে উঠেছে স্থানীয় ও ভিনজেলা থেকে আগত পর্যটকদের কাছে।
সরেজমিন দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে ভিড় জমেছে নানা বয়সি মানুষের। অনেকে মোবাইল বা ক্যামেরা হাতে দৃষ্টিনন্দন এ দৃশ্যকে ধরে রাখছেন ছবিতে। কেউ হাঁটছেন ধীর পায়ে, কেউ দাঁড়িয়ে আছেন রঙিন কোনো নকশার পাশে, কেউ আবার শিশুকে সঙ্গে নিয়ে শেখাচ্ছেন ‘এই হলো আমাদের সংস্কৃতি।’
স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটি শ্রীমঙ্গলের পর্যটনব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটক, প্রশাসন, সাধারণ মানুষসহ সবার কাছেই এ রাস্তার গুরুত্ব অনেক। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যেভাবে সৃজনশীলভাবে অঙ্কন হয়েছে, তা দেখে মনে হয়েছে এটি শুধু রাস্তা নয়, যেন একটি স্থায়ী শিল্পকর্ম।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা চাকরিজীবী শারমিন জাহান বলেন, ‘গত শনিবার আমরা শ্রীমঙ্গলে এসেছি। বের হলাম চা-বাগান দেখতে। হঠাৎ রাস্তাটি দেখে ছবি তুলতে লাগলাম। আমার মেয়ে এখন ছবি তোলাতেই ব্যস্ত। এর মধ্যেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো, বৃষ্টিতে ভিজেই তারা ছবি তুলছে।’
তিনি বলেন, রাস্তাটি অসাধারণ সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা চাই, এভাবে আরও কয়েকটি রাস্তাও সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে তোলা হোক। এখানকার মানুষ, প্রকৃতি, হোটেল-মোটেল সব খুবই সুন্দর। আমরা আবার ছুটি পেলে এখানে আসব।’
শ্রীমঙ্গল ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি মো. কামরুল হাসান চৌধুরী জানান, ‘দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন মৌলভীবাজারে। তাদের প্রথম দেখার স্থান হয় কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা। এখানকার উঁচু-নিচু পাহাড়, চা-বাগান, পান বাগান, খাসিয়া পুঞ্জি, বিটিআরআই, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, ক্যামেলিয়া লেকসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থানগুলো মুগ্ধ করে পর্যটকদের। পর্যটকদের জন্য আমরা সব সময় ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা-বাগান আর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীববৈচিত্র্যের এক অপার সম্ভাবনাময় পর্যটননগরী শ্রীমঙ্গল। এ পর্যটননগরী সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশবিভুঁইয়েও সমানভাবে সমাদৃত। চা-বাগানের পাশাপাশি হ্রদ, হাওর, উঁচু-নিচু পাহাড়, ঘন জঙ্গল, খনিজ গ্যাসকূপ আর আনারস, লেবু, পান, আগর ও রাবার বাগান দিয়ে সাজানো অদ্ভুত সুন্দর স্থানটির নাম শ্রীমঙ্গল এখানকার প্রতিটি পথ, প্রতিটি গাছ, এমনকি প্রতিটি বাতাসেও মিশে আছে সৌন্দর্য ও আতিথেয়তার স্পর্শ। আমাদের চেষ্টার মূল লক্ষ্য হচ্ছে এ প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যকে আরও শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা, যেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা শ্রীমঙ্গলে এসে শুধু নয়নে নয়, হৃদয়ে ধারণ করেন এক মুগ্ধ অভিজ্ঞতা। পরিচ্ছন্নতা, নান্দনিকতা ও পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা শ্রীমঙ্গলকে গড়ে তুলতে চাই এমন এক শহর, যেখান থেকে কেউ যেন ফিরে না যান মুগ্ধতা আর ভালোবাসা ছাড়া।’
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) পরিচালক ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটি চমৎকার সৌন্দর্যের রূপ নিয়েছে। এটি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াবে নিঃসন্দেহে। এ ধরনের উদ্যোগ নিয়মিত চলমান থাকলে শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য আরও বিকশিত হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন