- সস্ত্রীক ব্যাংক হিসাব তলব
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে শাহবাগ থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালত এই আদেশ দেন। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খানসহ তার স্ত্রীর আয়কর ফাঁকি তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। যার অংশ হিসেবে তাদের দুজনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে দুজনের তথ্য চেয়ে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তথ্য পেলে তাদের আয়কর নথির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। ফাঁকি উদ্ঘাটনে তাদের টিম কাজ করছে’ বলেও জানান মোহাম্মদ আবদুর রকিব।
আলোচিত এই সচিবকে গতকাল শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী একটি মামলায় গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গত ২৮ আগস্ট ডিআরইউতে ‘মঞ্চ ৭১’ এর অনুষ্ঠানে হামলার পর সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান জানিয়েছেন।
তার আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক তৌফিক হাসান আসামিকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। মামলার আবেদনে তিনি বলেন, ‘আসামি আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান মামলার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ঘটনার সাথে জড়িত আছে মর্মে জানা যায়। মামলাটি তদন্তাধীন। এ অবস্থায় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং আসামির নাম-ঠিকানা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত তাকে জেলে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।’
এর আগে, শাহবাগ থানার মামলায় আবু আলম শহীদ ও ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারী পাঁচজনসহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল বেলা ২টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামিকে হাজির করা হয়। এরপর তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধের লক্ষ্যে গত ৫ আগস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সংগঠনের উদ্দেশ্য জাতির অর্জনকে মুছে ফেলার সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ২৮ আগস্ট সকাল ১০টায় একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠানের মধ্যে একদল মানুষ হট্টগোল করে স্লোগান দিয়ে সভাস্থলে ঢুকে পড়েন। একপর্যায়ে তারা অনুষ্ঠানস্থলের দরজা বন্ধ করে দেন।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েকজনকে লাঞ্ছিতও করেন। হট্টগোলকারীরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং আলোচনায় অংশ নেওয়াদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে অতিথিদের অনেককেই বের করে দেওয়া হলেও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে পুলিশ এসে ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২৯ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন উপপরিদর্শক আমিরুল ইসলাম।
এদিকে, রাজধানীর শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধ আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খানকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে সরকারি আমলাদের নিয়ে তৈরি সরকারবিরোধী প্ল্যাটফর্ম ‘জনতার মঞ্চ’-এর অন্যতম সংগঠক ছিলেন আবু আলম শহীদ খান। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০১ সালে তিনি ওএসডি হন। তারপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এলে তিনি জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০১৫ সালে অবসরে যান।