ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ঘরের মধ্যে কুবি ছাত্রী-মায়ের লাশ কবিরাজ গ্রেপ্তার 

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:৩৩ পিএম

কুমিল্লা নগরের কালিয়াজুরী এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ও তার মায়ের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার গভীর রাতে পিটিআই মাঠসংলগ্ন নেলী কটেজের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত কবিরাজ মাওলানা আব্দুর রবকে (৭৫) আটক করেছে র‌্যাব। গতকাল সোমবার দুপুরে নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়।

নিহতরা হলেনÑ তাহমিনা বেগম (৫০) ও তার মেয়ে সুমাইয়া আফরিন রিংকি (২২)। রিংকি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তাহমিনা বেগমের স্বামী নুরুল ইসলাম কুমিল্লা আদালতের হিসাবরক্ষক ছিলেন। গত বছর তিনি মারা যান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার রাতে নিহতের বড় ছেলে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরে দরজা খোলা পান। ভেতরে গিয়ে মা ও বোনকে খাটে শুয়ে থাকতে দেখেন। পরে ছোট ভাই আসার পরও নড়াচড়া না দেখে ডাকাডাকি করলে তাদের মৃত অবস্থায় দেখতে পান।

নেলী কটেজের মালিক আনিসুর রহমান বলেন, রাত ১টার দিকে নিহতের ছেলে আল আমিন ফোনে জানান, তার মা ও বোনকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দুইটি আলাদা কক্ষে তাদের মরদেহ দেখতে পান বলে জানান। 

নিহত তাহমিনার বড় ছেলে ফয়সালের দাবি, দুর্বৃত্তরা তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করেছে এবং ঘর থেকে স্বর্ণালংকার, মোবাইল ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে গেছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রোববার সকাল ৮টার দিকে মাথায় টুপি, পাঞ্জাবি-পাজামা পরা এক ব্যক্তি ওই বাসায় প্রবেশ করেন। সকাল ১১টার দিকে বের হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার প্রবেশ করেন। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তাকে বের হতে দেখা যায়নি।

এরপর স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে সিসিটিভি ক্যামেরাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পরে তিনি কখন বের হয়েছেন তা ক্যামেরায় ধরা পড়েনি। প্রতিবেশীরা ধারণা করছেন, সিসিটিভিতে ধরা পড়া ব্যক্তি পরিবারের পরিচিত কবিরাজ, তিনি নিয়মিত ওই বাসায় যাতায়াত করতেন।

এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন এবং তার মাকে হত্যা এবং কুমিল্লার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, নগরীর পূবালী চত্বর ও পুলিশ সুপার কার্যালয় ঘেরাও ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীর মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক। ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে তাদের খুন করা হয়েছে। আমরা চাই, দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক।’ এ ঘটনায় উপাচার্য ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী রিংকি হত্যার ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এটি একটি নৃশংস জোড়া খুন। আমরা চাই, দ্রুততম সময়ে ঘাতকদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হোক এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম জানান, রাতেই ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। নিহত ব্যক্তিদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও বিছানায় কিছু রক্ত পাওয়া গেছে। যৌন সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। 

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।