- পৌরকর নেওয়ার পরও অতিরিক্ত চার্জ পরিশোধ করতে হবে নগরবাসীকে
- নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এই উদ্যোগে বিশৃঙ্খলা বাড়বে বৈ কমবে না
- বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক পরিচয় বহন করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্ব
- ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহের সুযোগ নেই : প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা, চসিক
প্রতি বছর নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্স ও পৌরকর নেওয়ার পরও চট্টগ্রাম নগরীর ডোর টু ডোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার ফলে কর দেওয়ার পরও অতিরিক্ত চার্জ পরিশোধ করতে হবে নগরবাসীকে। চসিকের সূত্র মতে, বাসাবাড়ির প্রতি ফ্লাট থেকে মাসে ৫০ থেকে ৭০ টাকা আর সেমিপাকা ঘরে ২৫ থেকে ৪০ টাকা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা, শিল্পকারখানার আকার, শ্রমিক সংখ্যা ও বর্জ্যরে পরিমাণ অনুসারে ৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা, হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্ট থেকে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা এবং কমিউনিটি সেন্টার থেকে প্রতি ১০০ অতিথির বর্জ্যরে বিপরীতে ফি ধার্য করা হয়েছে ২০০ টাকা। যদিও চসিকের আগের মেয়ররা নগরবাসীর বাসাবাড়ি থেকে ডোর টু ডোর আবর্জনা সংগ্রহ করতে এরই মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিন সরবরাহ করেছিল। তবে চকিসের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তার দাবি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ডোর টু ডোর আবর্জনা সংগ্রহের কোনো সুযোগ নেই। এতদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করার বিষয়টি ছিল অবৈধ।
চসিকের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আদলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নতুন এই উদ্যোগকে চসিকের কর্মকর্তারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক উদ্যোগ হিসেবে অবহিত করলেও নগরবাসীর অভিযোগ, হোল্ডিং ট্যাক্স ও পৌরকর নেওয়ার পরও নগরীর বর্জ্য সরাতে অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ চসিকের হটকারী সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে নগর পরিকল্পনাবিদদের অভিমত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রাজনৈতিক পরিচয় বহন করা এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হলে বর্জ ব্যবস্থাপনা বিশৃঙ্খলা আরও বেশি বাড়বে।
তারা আরও বলেন, বর্জ্য সংগ্রহ করা নিয়ে কোনো ফ্লাট মালিকের সঙ্গে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হলে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন। সে ক্ষেত্রে ফ্লাট মালিকদেরই লাঞ্ছিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তারা আরও বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই এ ধরনের কর্মকা- পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। যে কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি করবে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৪০টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে চসিক। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব দেওয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান পায়নি চসিক। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পাওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট ফি নেওয়ার বিনিময়ে বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা ও হোটেল, রেস্টুরেন্ট থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে করপোরেশনের ডাস্টবিনে সংরক্ষণ করবে। পরে করপোরেশনের নিজস্ব উদ্যোগে বর্জ্যগুলো ড্যাম্পিং করা হবে।
চসিকের তথ্য বলছে, প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয় নগরীতে। এর মধ্যে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টন বর্জ্য অপসারণ করতে পারে। যত্রতত্র পড়ে থাকা বাকি বর্জ্য নগরীর পরিবেশ নষ্ট করার সঙ্গে জলাবদ্ধতা, দুর্গন্ধ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। চসিকের নতুন এই উদ্যোগের ফলে নগরীকে নিট অ্যান্ড ক্লিন রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন চসিক মেয়র ডাক্তার শাহাদাত হোসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র আহ্বান করা হলে তাতে অংশ নেয় ১৯২টি প্রতিষ্ঠান। তার মধ্য থেকে ৪০টি প্রতিষ্ঠাকে নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেয় চসিক। তথ্য সূত্র বলছে, এসব প্রতিষ্ঠান নগরী থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করতে প্রতি মাসে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা করপোরেশনের রাজস্ব খাতে জমা দিতে হবে।
প্রতি বছর কর দেওয়ার পরও বর্জ্য অপসারণের জন্য অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ করাকে চসিকের হটকারী সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছেন নগরীর নাসিরাবাদ এলাকায় বসবাসীকারী মাহমুদ নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, যেহেতু প্রতি বছর আমরা হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছি, এ ছাড়া পৌরকরও নেওয়া হয়। সেহেতু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন করে ফি বা কর ধার্য করা অনৈতিক। করপোরেশন যদি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য অপসারণ করতে না পারে সেক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতে পারেন। তবে এর খরচ করপোরেশনকে দিতে হবে।
তবে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মুখপাত্র হাসান মারুফ বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ট্যাক্স দেওয়ার পরও নতুন করে ফি নির্ধারণ কোনোভাবে সমর্থন যোগ্য না। করপোরেশন কোনো উদ্যোগে কিংবা কার মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবে সেটা করপোরেশনের দায়িত্ব।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী করপোরেশনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, নগরীকে নিট অ্যান্ড ক্লিন রাখতে হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা জরুরি। তিনি আরও বলেন, নগরীতে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহে দীর্ঘদিনের নৈরাজ্য ও অনিয়ম ঠেকাতে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ডোর টু ডোর আবর্জনা সংগ্রহের কোনো সুযোগ নেই। এতদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করার বিষয়টি ছিল অবৈধ। পরিচ্ছন্নকর্মীরা আমার কাছ থেকে (করপোরেশনের) বেতন এবং বাসাবাড়ির মালিক থেকে বকসিসের নামে অবৈধভাবে অর্থ নিয়ে ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ করতেন। যা পুরোপুরি অবৈধ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন