রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ৭টি হল সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন ৪২ প্রার্থী। বিজয়ীদের ৩৯ জনই ৬টি ছাত্রী হলের এবং ৩ জন একটি ছাত্র হলের। এ ছাড়া ৪টি ছাত্রী হলে একটি করে পদে কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি। গতকাল সোমবার রাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সেতাউর রহমান স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেনÑ রোকেয়া হল সংসদে ৯ জন, তাপসী রাবেয়া হলে ৩ জন, খালেদা জিয়া হলে ১০ জন, রহমতুন্নেসা হলের ৯ জন, জুলাই-৩৬ হলের ৭ জন, মুন্নুজান একজন এবং বিজয়-২৪ হলে ৩ জন। এ ছাড়া রোকেয়া হল, খালেদা জিয়া হল, রহমতুন্নেসা হল এবং জুলাই-৩৬ হল ছাত্রী সংসদে একটি করে পদ ফাঁকা রয়েছে।
রোকেয়া হল সংসদের ৯টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন এবং একটি পদ ফাঁকা রয়েছে। বিজয়ীরা হলেনÑ কমনরুম সম্পাদক পদে আয়েশা সিদ্দিকা, সহ-কমনরুম সম্পাদক পদে আফসানা আক্তার শিফা, সহ-বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে তাহমিনা ঊর্মি, ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে নাজমুন নাহার সুইটি, সহ-ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে নাশরিফা তুন নাঈম, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে রুদবা জাহান। কার্যনির্বাহী সদস্য ৪টি পদের মধ্যে রিফা সানজিদা জেদনী, জে এন হুমায়রা, আসনারা খাতুন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া হলটিতে কার্যনির্বাহী সদস্যের একটি পদ ফাঁকা রয়েছে।
তাপসী রাবেয়া হলে ৩টি পদে একক প্রার্থী ছিলেন। তারা হলেনÑ সহ-কমনরুম সম্পাদক পদে শাহনাজ আরফিন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মহুয়া মল্লিক জেবা ও সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুসলিমা খাতুন।
খালেদা জিয়া হলের ১০টি পদের বিজয়ীরা হলেনÑ বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে আশরাফি বুলবুল, সহ-কমনরুম সম্পাদক পদে তাসমী তামান্না মীম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে তাহেরা আক্তার, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে সায়মা জাকিয়া, ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে রোকাইয়া খাতুন, সহ-ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে নাফসে মুতমাইন্না ও কার্যনির্বাহী সদস্য পদে উম্মে হাবিবা আক্তার, জান্নাতুল ফেরদৌস, সুমাইয়া ও উম্মে হানী তামান্না খাতুন। এ ছাড়া হলটিতে সহ-বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদটি ফাঁকা রয়েছে।
রহমতুন্নেসা হলের বিজয়ী ৯ জন হলেনÑ বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে রেবেকা সুলতানা, সহ-বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে সাদিয়া আফরিন, কমনরুম সম্পাদক পদে শামসি আরা, সহ-কমনরুম সম্পাদক পদে খাদিজা খাতুন, ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে লাবনী খাতুন, সহ-ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে তাবাসসুম কবীর ও কার্যনির্বাহী সদস্য পদে আয়েশা তাসনীম, জান্নাতুল ফেরদৌস ও জেসমিন খাতুন। এ ছাড়া হলটিতে কার্যনির্বাহী সদস্যের একটি পদ ফাঁকা রয়েছে।
জুলাই-৩৬ হলের ৭ পদের বিজয়ীরা হলেনÑ সহ-বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ফাতেমাতুজ সানিহা, সহ-কমনরুম সম্পাদক পদে জোবাইদা খাতুন, সহ-ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে উম্মে জাহান শ্রাবণী, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে খাদিজা খাতুন ও কার্যনির্বাহী সদস্য পদে হাবিবা খাতুন, সাকিয়া জান্নাত ও জান্নাতুল আফরিন। এ ছাড়া এই হলেও কার্যনির্বাহী সদস্যের একটি পদ ফাঁকা রয়েছে। মুন্নুজান হলের বিজয়ী প্রার্থী হলেন, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফাইরুজ মোকাররমা তূবা।
বিজয়-২৪ হলে ৩ জন বিজয়ী হলেন, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে নাজমুল আকতার আকাশ, সহ-কমনরুম সম্পাদক মুহাম্মদ রিদোয়ানুল ইসলাম ও সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে শাহেদ হোসেন।
এ বিষয়ে রাকসু, হল ছাত্র সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রদের একটি হলে তিনজন এবং ছাত্রীদের হলগুলোর কয়েকটি পদে ৪২ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। আমি তাদের অগ্রিম অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রার্থীরা ব্যস্ত প্রচারণায়: এ দিকে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার। প্রার্থীদের অনেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনভর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন। আবার কেউ কেউ লিফলেট ছাপাতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে পরিবহন মার্কেটের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, রাবি শাখা সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহীসহ নেতাকর্মীদের কাছে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেছে।
নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে ভোটগ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সব ধরনের নির্বাচনি প্রচারণা করা যাবে। প্রচারণার সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। গতকাল রোববার বিকেলে ব্যালট নম্বর বরাদ্দ এবং রাতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে ওই দিন বিকেল থেকে বৃষ্টি থাকায় প্রচারণায় নামতে পারেননি প্রার্থীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল সকাল ১০টা থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়। থেমে থেমে বৃষ্টি চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই প্রচারণায় নামেন প্রার্থীদের অনেকে। তারা টুকিটাকি চত্বর, পরিবহন মার্কেট, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনের ভ্রাম্যমাণ খাবার ও চায়ের হোটেলের ছাউনিতে বসে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচার চালান। ইসলামী ছাত্রশিবির মনোনীতÑ সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি ও জিএসকে একই সময় আলাদা আলাদা জায়গায় প্রচার চালাতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের ভিপি, জিএস, এজিএসও ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় প্রচারণা চালিয়েছেন। একই সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি প্যানেলের প্রার্থীরা প্রচার চালিয়েছেন।
প্রচারণার একপর্যায়ে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ) সাংবাদিকদের বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন না হওয়ার পরও যারা আমাদের সমালোচনা করছে, তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই। তারা নিজেদের প্রচারণায় সময় ব্যয় না করে, আমাদের সমালোচনায় সময় ব্যয় করছে। আসলে এতে আমাদেরই একটা প্রচার হচ্ছে। আমরা কাদা ছোড়াছুড়ি করতে চাই না। আমরা নিজেদের কাজগুলো করে যেতে চাই। অনেক ছাত্রসংগঠন বিধি লঙ্ঘন করে আগেই লিফলেট বিতরণ করেছে, এটা আমরা নির্দিষ্ট জায়গায় অভিযোগ করব।’
‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী তাসিন খান সকাল থেকে ব্যস্ত ছিলেন লিফলেট ছাপাতে। দুপুরের পর কাজ শেষে তিনিসহ তার প্যানেল প্রচারণা চালায়। তাকে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে দোয়া চাইতে।
আচরণবিধিতে নির্বাচনি সভা, সমাবেশ ও শোভাযাত্রার বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রার্থী ও ভোটার ছাড়া অন্য কেউ কোনোভাবেই কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচারণা চালাতে পারবেন না। নির্বাচনি প্রচারণায় শুধু সাদা-কালো পোস্টার ব্যবহার করা যাবে। কোনো ভবনের দেয়ালে নির্বাচনসংক্রান্ত লেখা ও পোস্টার লাগানো যাবে না। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন বিধি-নিষেধ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।