ঢাকা বুধবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি

নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট শক্তি  মোকাবিলাই বড় চ্যালেঞ্জ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ১১:৫৪ পিএম
  • নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সক্ষমতা অর্জন করতে চাইছি
  • পাহাড়ে ধর্ষণের প্রধান অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হলেও বড় ইস্যু বানানো হচ্ছে
  • দুর্গাপূজায় ৪৯টি ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৯
  • ১৭৬০টির মধ্যে চার্জশিট হয়েছে মাত্র ৫৫ মামলায়
  • খোয়া যাওয়া ১ হাজার ৩৫০টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি

আসন্ন নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট শক্তি মোকাবিলা বড় একটি চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, পরাজিত ফ্যাসিস্ট, তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরাও আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সক্ষমতা অর্জন পুলিশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় পুলিশ সদর দপ্তরের হল অব ইন্টিগ্রিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইজিপি।

নির্বাচন সামনে রেখে চ্যালেঞ্জের কথা বলা হচ্ছে, নির্দিষ্ট করে কোনো পক্ষকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে কি নাÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পুলিশ থানা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এক বছরে বাহিনীকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসা একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সক্ষমতা অর্জন করতে চাইছি। আমাদের বিশ্বাস, পারব। আমি কোনো শক্তির কথা নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না। যারা পরাজিত ফ্যাসিস্ট, তারাও আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তাদের নেতাকর্মী ও সাপোর্টাররা (সমর্থকেরা) আমাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহাড়ে চলমান অস্থিরতা ধর্ষণের ঘটনা দিয়ে শুরু। এ ক্ষেত্রে স্পেসিফিক যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মামলা হয়েছে। তার পরও কেন এটাকে নিয়ে এত বড় ইস্যু বানানো হচ্ছে! কারা করছে আমাদের বোধগম্য নয়।’

এক মোহাম্মদপুর-আদাবরের শীর্ষ সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ব্যর্থ, সেখানে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সক্ষমতা পুলিশের আছে কি না, জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘সক্ষমতা অবশ্যই আছে। এটা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই, আপনাদেরও থাকা উচিত না। মোহাম্মদপুর-আদাবরে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। বিপুলসংখ্যক অল্প বয়সি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নানাভাবে চেষ্টা করছি, কিছু ক্ষেত্রে নিবর্তনমূলক আটক আদেশ দেওয়ার কথা ভাবছি।’ 

পুলিশের সাবেক আইজিপিরা বলছেন, বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে থাকা পুলিশ সদস্য দিয়ে নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশ কতটা সক্ষমÑ জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘আপনারা যত যা-ই বলেন, আমরা (পুলিশ) সক্ষম। বাহিনীর ১ লাখ ৫০ হাজার সদস্যকে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। একসঙ্গে এত পরিমাণ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ আগে কখনো দেওয়া হয়নি। প্রশিক্ষণে হাতে-কলমে তাদের নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ, ভোটিং, নির্বাচন কেন্দ্রের বিধিবিধান শেখানো হবে। এ ছাড়া আগে থেকে প্রত্যেকের বিষয় খোঁজ নেওয়া হবে। দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এমন কেউ থাকলে তাকে পরিবর্তন করা হবে।’

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র:

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রগুলো কাদের হাতে আছে এবং অস্ত্রগুলো উদ্ধার না হলে ঝুঁকি আছে কি না, জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫০টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। আমরা নিয়মিত অস্ত্র উদ্ধার করছি। যদি জানতাম অস্ত্র কার হাতে, তাহলে তো কথাই ছিল না। আমাদের ধারণা, লুট হওয়া অস্ত্রগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদী, পাহাড়ি কিংবা আরসার কাছে যেতে পারে। এগুলো আমাদের সন্দেহে রয়েছে। সবকিছু মাথায় রেখে কাজ করছি।’ 

থানায় জমা দেওয়া ব্যক্তিগত অস্ত্র লুটের সংখ্যা কত জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, অল্প কিছু অস্ত্র থানা থেকে লুট হয়েছে। পুলিশের অস্ত্রের সংখ্যা বেশি। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে বৈধ অস্ত্র সরকার জমা নিয়েছে। যারা জমা দেননি, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। 

পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা:

আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় সারা দেশে ৩১ হাজার ৬০৬টি ম-প রয়েছে। সব কটিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের তালিকা অনুসারে, এখন পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৯টি ঘটনা আমলে নিয়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় ১৫টি মামলায় ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে পুলিশের সাইবার ইউনিট কাজ করছে বলেও জানান তিনি। 

গ্রেপ্তারের পরও বড় ইস্যু বানানোর চেষ্টা:

আইজিপি বলেন, পাহাড়ে ধর্ষণের ঘটনা দিয়ে শুরু। এ ক্ষেত্রে যার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, তাকে গ্রেপ্তার করা এবং মামলা হয়েছে। তার পরও একটি গোষ্ঠী বিষয়টিকে বড় ইস্যু বানানোর চেষ্টায় লিপ্ত। কারা করছে, এটা আমাদের বোধগম্য নয়। 

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলা:

আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় ১ হাজার ৭৬০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫৫টি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর তদন্ত চলমান। চার্জশিট দেওয়া ৫৫টির মধ্যে ১৮টি হত্যা মামলায় ১ হাজার ৯৪১ জনকে অভিযুক্ত করে পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। অন্য ৩৭টি মামলায় ২ হাজার ১৮৫ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩-এ ধারা অনুযায়ী, পুলিশ রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে ১৩৬ জনকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। আরও ২৩৬ জনের অব্যাহতির জন্য আবেদন পুলিশের বিবেচনায় রয়েছে। পুলিশ যাদের নিরীহ ও নির্দোষ মনে করছে।