বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। তপশিল ঘোষণার আগেই ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। অক্টোবরের মধ্যভাগেই তাদের মাঠে নামার সংকেত দেওয়া হবে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ কাজ করলে কিংবা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে বিএনপি। এমন সতর্কবার্তা ইতোমধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, আসনভিত্তিক প্রার্থী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। একক প্রার্থী নির্ধারণে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে একক প্রার্থীদের ‘সবুজ সংকেত’ দেবে বিএনপি। ইতোমধ্যে প্রত্যেক আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা। সম্ভাব্য প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ, জেলা, উপজেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও কথা বলছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে জরিপে এগিয়ে থাকা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিষয়ে আরও বিস্তর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রায় ৭০ শতাংশ আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থীর তালিকা দলটির হাইকমান্ডের কাছে। এদিকে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্রদের নিয়েই নির্বাচন করতে চায় বিএনপি। এজন্য আসন ছাড় দেবে দলটি। সব মিলে শতাধিক আসন চায় মিত্ররা। এ অবস্থায় মিত্র দলগুলোর কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা চাওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি দল ও জোট তালিকা দিয়েছে। বিএনপির একাধিক শীর্ষ নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
এদিকে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য বিএনপি পুরোপুরি প্রস্তুত। একক প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। কবে নাগাদ সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়া হবে, সেটা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবেন।
যদিও দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, খুব শিগগিরই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে মাঠে কাজ করার জন্য আমরা গ্রিন সিগন্যাল দেব। তবে সেটা চূড়ান্ত নয়। তপশিল ঘোষণার পর পার্লামেন্টারি বোর্ডের মাধ্যমে আমরা চূড়ান্ত মনোনয়ন দেব। তিনি এও বলেন, প্রতিটি আসনে আমাদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী আছেন। অনেক আসনে আমাদের পাঁচজন, সাতজন এবং দশজন করে যোগ্য প্রার্থী আছেন। সুতরাং একটা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়টা আমাদের দেখতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন হচ্ছে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। চলছে নির্বাচনকেন্দ্রেকি মাঠ সাজানোর কাজ। তপশিল ঘোষণার আগেই ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। অক্টোবরের মধ্যভাগেই তাদের মাঠে নামার সংকেত দেওয়া হবে। আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এ পর্যন্ত অন্তত ৫টি জরিপ চালিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
আন্তর্জাতিকভাবে, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, দলের সাংগঠনিক টিম এবং মিডিয়ার মাধ্যমে এসব জরিপ করা হয়। এছাড়া বিএনপির গুলশান অফিসের ৩ জন এবং একটি জাতীয় দৈনিকের ২ জন প্রতিনিধি নিয়ে সারা দেশে জরিপ চালানো হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বেঁধে দেওয়া ‘মানদ-ে’ (আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত ত্যাগী, সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, এলাকায় জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজধারী) এসব তালিকায় প্রতিটি আসনে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ওঠে আসে। তাদের নিয়েই সম্প্রতি গুলশান কার্যালয়ে দলের দায়িত্বশীল নেতারা বৈঠক করেন। নির্বাচনি প্রস্তুতি ও মাঠপর্যায়ে দলের সাংগঠনিক শক্তি আরও জোরালো করাসহ দলের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, নির্বাচনি মাঠে তার পক্ষে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তারেক রহমান। একই সঙ্গে কঠোর বার্তাও দেন তিনি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্ভাব্য একক প্রার্থীদের প্রথমে অনানুষ্ঠানিকভাবে সবুজ সংকেত জানানো হবে। মাঠপর্যায়ে তারা প্রচার-প্রচারণা চালাবেন। আসনগুলোয় অন্য যারা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, তারাও সবুজ সংকেত পাওয়া প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন। এ সময়ে তাদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে তপশিল ঘোষণার পর দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডে মাধ্যমে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে।