ঢাকা সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

সাক্ষাৎকারে বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম

প্রতিহিংসামুক্ত হবে আগামীর রাজনীতি

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ১২:৫০ এএম

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম এ কাইয়ুম। রাজনৈতিক কারণে ২০১৩ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করলেও গত বছর জুলাই অভুত্থানের পর দেশে ফেরেন। তিনি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তালিকাভুক্ত শরণার্থী হিসেবেও পরিচিত। দীর্ঘ প্রবাসজীবনেও যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, গঠনমূলক ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে। ত্যাগী এই নেতা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১১ (বাড্ডা-ভাটারা-রামপুরা-হাতিরঝিল আংশিক) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। সম্প্রতি মুখোমুখি হন রূপালী বাংলাদেশের। কথা বলেন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচন ও সামাজিক নানা ইস্যু নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক তুষার পাঠান

রূপালী বাংলাদেশ: দীর্ঘ এক যুগ পর দেশে ফেরার অনুভূতি কেমন?

এম এ কাইয়ুম: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। জীবনের ওপর হুমকির কারণে দেশে না থাকতে পারলেও দেশের প্রয়োজনে সব সময় জননেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের কর্মীরা রাজপথে সক্রিয় ছিল। যে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ এক নতুন রাজনৈতিক পেক্ষাপটে দাঁড়িয়েÑ সেখানে দূর থেকে বিভিন্নভাবে কর্মীদের পাশে থেকেছি, তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করেছি। জুলাইয়ের সেই রক্তাক্ত সময়ে আমার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা জীবন দিয়েছেন। রাজধানীর বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা এলাকায় হেলিকপ্টার ও স্নাইপার হামলায় নিরীহ শিক্ষার্থী ও শিশুদের হত্যার পরও মানুষ পিছু হটেনি। আমি আমার নির্বাচনি এলাকার মানুষের সাহসিকতা ও অবস্থানকে স্যালুট জানাই।

রূপালী বাংলাদেশ: আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে, প্রতিহিংসার রাজনীতি ফিরে আসবে কি?

এম এ কাইয়ুম: বিএনপি কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, আগামীতেও করবে না। বিগত সরকার যেভাবে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের দমন-নিপীড়নের শিকার করেছিল, আমরা তেমনটি করব না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবারই থাকবে, কেউ গুম-খুন বা মামলার আতঙ্কে ভুগবে না।

রূপালী বাংলাদেশ: মব কালচার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে কী ভাবছেন?

এম এ কাইয়ুম: মব কালচার সমাজের জন্য ভয়াবহ সমস্যা। স্বার্থান্বেষীরা নিজেদের সুবিধা হাসিলের জন্য এটাকে ব্যবহার করছে। পুলিশের মনোবল ভেঙে গেছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এর অবসান ঘটবে। দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সরকারের দৃঢ় নেতৃত্ব, যা তারেক রহমানের নেতৃত্বেই সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক না হলেও উন্নতি হয়েছে। তবে সন্ত্রাসীরা এখন প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করে চাঁদাবাজি করছে। আমরা চেষ্টা করছি এসব বন্ধ করতে এবং নির্বাচনের আগে বিষয়গুলো সহনশীল পর্যায়ে আনার।

রূপালী বাংলাদেশ: আপনার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে কি ভাবনা?

এম এ কাইয়ুম: বিগত বিএনপি সময়কারের সময় রাস্তা টেকসই ছিল। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কমিশন বাণিজ্য ও দুর্নীতির কারণে রাস্তার মান নষ্ট হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধের পাশাপাশি দ্রুত রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করব।

রূপালী প্রতিবেদক: কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি বন্ধ ও তরুণ প্রজন্মের উন্নয়নে কোনো ভাবনা আছে কি?

ড. এম এ কাইয়ুম: আজকের শিশু-কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিছু ব্যক্তিস্বার্থে পাড়া-মহল্লাভিত্তিক গ্যাং গঠন করে অস্ত্র সরবরাহ করছে। এসব গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি খেলাধুলা, বিনোদন ও শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে, যাতে তরুণ প্রজন্ম সঠিক পথে থাকে।

রূপালী প্রতিবেদক: ২৪-এর জুলাই আন্দোলনের পর দলের ভূমিকা কেমন আশা করছেন?

এম এ কাইয়ুম: জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের যে পেক্ষাপট, সেটি দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ ১৫ বছর বিএনপি রাজপথে ছিল; নির্যাতন, জেল-জুলুম সহ্য করেছে। কাক্সিক্ষত জুলাই বিপ্লবের পর বিএনপি নতুন উদ্যমে মাঠে সক্রিয় হয়েছে। এর আগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে দলটি ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়। শেখ হাসিনার আমলে ক্রসফায়ারে বিএনপির ৪৭৭১ জন নেতাকর্মী নিহত হন, গুম হন প্রায় বারোশ। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবে নিহত হন ৪২২ নেতাকর্মী। দলের হাইকমান্ড থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় লাখ মামলায় আসামি ৬০ লাখ নেতাকর্মী। স্বয়ং খালেদা জিয়ার নামে ছিল ৩৬টি এবং তারেক রহমানের নামে ১৩৫টি মামলা।

আশা করি, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি সর্বোচ্চ জনসমর্থন ঘরে তুলতে পারবে। দলের ত্যাগী নেতাকর্মী যারা আছেন, দল তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করবে।