* ২০ ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে ২ হাজার ফিলিস্তিনির মুক্তি
গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ ঘোষণার পর গতকাল সোমবার হামাস ও ইসরায়েল বন্দিবিনিময় করেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে রেডক্রসের হাতে ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে হস্তান্তর করে হামাস। পরে তাদের ইসরায়েলে নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল। তারা বেশির ভাগ বন্দিকে গাজা উপত্যকায় ফিরিয়ে দেয়। কিছু বন্দিকে দখল করা পশ্চিম তীরে পাঠানো হয়। তবে ১৫০ জন ফিলিস্তিনিকে সম্পূর্ণভাবে দেশছাড়া করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের মিসরে পাঠানো হলেও অন্য দেশে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
আলজাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের ওফার কারাগার থেকে বাসে করে ফিলিস্তিনি বন্দিদের রামাল্লা নিয়ে যাওয়া হয়। তারা বাস থেকে নামতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে জড়ো হওয়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনি আনন্দে ফেটে পড়ে। তাদের পরিবারের সদস্যরা ও বন্ধুরা তাদের জড়িয়ে ধরেন। সেখানে থাকা অন্যরা বন্দিদের কাঁধে নিয়ে উল্লাস করতে থাকেন। মুক্তি পাওয়া বন্দিদের অনেককেই দুর্বল দেখাচ্ছিল এবং তাদের কারো কারো শরীরে দৃশ্যমান জখমের চিহ্ন ছিল। গণমাধ্যমে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রামাল্লায় আসার সময় বাসের ভেতরে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিরা দুই আঙ্গুল তুলে জয়ের চিহ্ন দেখাচ্ছেন ও হাসছেন। এসব বাসের চারপাশে প্রচুর মানুষ ছিল যারা তাদের ফোনে দৃশ্যগুলো ভিডিও করছিল। তাদের অনেকের হাতেই ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বাহিনী রাস্তা থেকে লোকজনকে সরিয়ে দিচ্ছিল যেন বাসগুলো নিরাপদে গন্তব্যে যেতে পারে। ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, তাদের সব জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবে। কিন্তু হামাস জীবিত ২০ বন্দির সবাইকে গতকাল সকালে মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হামাসের সোমবারের মধ্যেই মৃত ২৮ জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। এসব মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার আগেই ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তির অধীনে মুক্তি পাওয়া অনেক ফিলিস্তিনি বন্দির পরিবার বলছে, বহুপ্রতীক্ষিত এ মুক্তি তাদের জন্য একই সঙ্গে আনন্দ ও কষ্টের। কারণ, তারা জানতে পেরেছেন, তাদের প্রিয়জনদের তৃতীয় কোনো দেশে নির্বাসিত করা হবে। ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়া অন্তত ১৫৪ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে ইসরায়েল নির্বাসনে যেতে বাধ্য করবে। যাদের নির্বাসিত করা হচ্ছে, তারা ইসরায়েলের মুক্তি দেওয়া ফিলিস্তিনের বৃহত্তর একটি দলের অংশ। তাদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ২৫০ এবং গত দুই বছরে গাজা থেকে আটক প্রায় ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের মতে, তাদের মধ্যে অনেককে ‘গুম’ করা হয়েছিল। গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী সোমবার ২০ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের কোথায় পাঠানো হবে, সে সম্পর্কে ইসরায়েল এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে গত জানুয়ারিতে বন্দি মুক্তির সময় কয়েক ডজন বন্দিকে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ যেমন- তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও তুরস্কে নির্বাসিত করা হয়েছিল।
১ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে: ইসরায়েল
ফিলিস্তিনি বন্দিদের দুটি দলে ভাগ করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি দলকে ইসরায়েলের ওফের কারাগার থেকে বের করে অধিকৃত পশ্চিম তীরে স্থানান্তর করা হয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে বিভিন্ন সময় আটক ১ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের কারা কর্তৃপক্ষ। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে বন্দিদের স্থানান্তরিতও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। ফিলিস্তিনি বন্দিদের দুটি দলে ভাগ করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
১৫৪ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মিসরে পাঠাল ইসরায়েল
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়া ১৫৪ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মিসরে পাঠানো হয়েছে। সোমবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনি বন্দিদের গণমাধ্যম কার্যালয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিদেশে নির্বাসিত ১৫৪ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মিসরে স্থানান্তর করা হয়েছে, যেখানে তাদের মুক্তির আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এটি ‘ফ্রি ফ্লাড-৩’ চুক্তির বাস্তবায়নের অংশ।’
গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর ইসরায়েলে সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। সোমবার ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে দেওয়া ভাষণে তিনি একদিকে আরব ও মুসলিম বিশ্বকে প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে ইরান ইস্যুতে ভবিষ্যতে শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা নিয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন।