ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

প্রবৃদ্ধির নতুন ব্যাখ্যায় নোবেল ৩ গবেষকের

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম

চলতি ২০২৫ সালের জন্য অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনজন অর্থনীতিবিদÑ জোয়েল মোকির, ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট। উদ্ভাবননির্ভর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাখ্যা করার জন্য তারা এ পুরস্কার পেয়েছেন।

এই তিন অর্থনীতিবিদের মধ্যে অর্ধেক পুরস্কার পেয়েছেন জোয়েল মোকির। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির পূর্বশর্তগুলো শনাক্ত করার জন্য তিনি পুরস্কার পেয়েছেন। ‘সৃজনশীল বিনাশ’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির তত্ত্ব দেওয়ার জন্য বাকি অর্ধেক পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট। রয়টার্সের তথ্যানুসারে, এই পুরস্কারের মূল্যমান ১২ লাখ ডলার।

জোয়েল ময়কার যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষক। ফিলিপ এজিওঁ ফ্রান্সের নাগরিক এবং তিনি কলেজ দে ফ্রান্স ও লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত। পিটার হাউইট যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি, প্রভিডেন্সের অধ্যাপক।

বিবৃতিতে নোবেল কমিটি বলেছে, নোবেলজয়ীরা আমাদের শিখিয়েছেনÑ সব সময় প্রবৃদ্ধি হবে, এটা কখনোই নিশ্চিত ধরে নেওয়া যায় না। মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রবৃদ্ধি নয়, বরং স্থবিরতাই ছিল স্বাভাবিক অবস্থা। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সম্ভাব্য হুমকিগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবিলা করতে হবে।

জোয়েল ময়কার ঐতিহাসিক দলিলের মাধ্যমে খুঁজে দেখেছেন, কীভাবে টেকসই প্রবৃদ্ধি মানবসমাজে ‘নিউ নরমাল বা নয়া স্বাভাবিক’ অবস্থা হয়ে উঠল। তিনি দেখিয়েছেন, ধারাবাহিকভাবে উদ্ভাবন ঘটতে হলে কেবল কোনো কিছু কার্যকর, তা জানাই যথেষ্ট নয়, বরং কেন তা কার্যকরÑ তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও জানা জরুরি। শিল্পবিপ্লবের আগে এই বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়ার অভাবের কারণে নতুন আবিষ্কারগুলোর ওপর ভিত্তি করে অগ্রসর হওয়া কঠিন ছিল। পাশাপাশি সমাজের নতুন ধারণার প্রতি উন্মুক্ততা ও পরিবর্তনকে স্বাগত জানানোর গুরুত্বও তিনি তুলে ধরেছেন।

ফিলিপ এজিওঁ ও পিটার হাউইটও টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করেছেন। ১৯৯২ সালে তারা তৈরি করেন এক গাণিতিক মডেল, যার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয় ‘পৎবধঃরাব ফবংঃৎঁপঃরড়হ’ বা ‘সৃষ্টিশীল বিনাশ’ প্রক্রিয়াকে। অর্থাৎ, যখন কোনো নতুন ও উন্নত পণ্য বাজারে আসে, তখন পুরোনো পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় হার মানে। নতুন উদ্ভাবন তাই যেমন সৃষ্টিশীল, তেমনি ধ্বংসাত্মকওÑ কারণ, এটি পুরোনো প্রযুক্তিকে অচল করে দেয়।

বিভিন্নভাবে এই নোবেলজয়ীরা দেখিয়েছেন, সৃষ্টিশীল বিনাশের এই প্রক্রিয়া সংঘাতও সৃষ্টি করে, যা গঠনমূলকভাবে সামলাতে হয়। অন্যথায়, বড় কোম্পানি বা প্রভাবশালী স্বার্থগোষ্ঠী নিজেদের ক্ষতির আশঙ্কায় নতুন উদ্ভাবনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

পুরস্কারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে, গত দুই শতকের ইতিহাসে তা প্রথম দেখা গেছে। এর ধারাবাহিকতায় কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে। সেই মানুষেরাই আজকের সমৃদ্ধির ভিত্তি গড়ে তুলেছে।

অর্থনীতিতে নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান জন হাসলার বলেন, ‘নোবেলজয়ীদের গবেষণা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়Ñ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্বয়ংক্রিয় কিছু নয়। আমাদের অবশ্যই সেই প্রক্রিয়াগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে, যা সৃষ্টিশীল বিনাশকে সম্ভব করে তোলে। তা না হলে আমরা আবার স্থবিরতার যুগে ফিরে যেতে পারি।’

অর্থনীতির এই পুরস্কার মূল নোবেল পুরস্কারের অন্তর্ভুক্ত নয়। ১৯৬৯ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে এই পুরস্কার চালু করে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫৭ জন এই পুরস্কার পেয়েছেন। আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অর্থনীতিতে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুরস্কারÑ এটাই এই পুরস্কারের কেতাবি নাম।