একসময় কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার গ্রামীণ জনপদে বাঁশ-বেতের পণ্য ছিল প্রতিটি পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। গৃহস্থালি, কৃষিকাজ, এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠানেও বাঁশ-বেতের তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার ছিল ব্যাপক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহ্য। চাহিদা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কারিগররা।
সরেজমিন তাড়াইল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, এখন হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। একসময় যেসব কারিগর ঝুড়ি, চালুনি, বেতের চেয়ার বা ডালা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারা এখন পেশা বদলে দিনমজুর বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হয়েছেন।
চরতালজাঙ্গা গ্রামের প্রবীণ কারিগর আব্দুল গফুর (৬০) বলেন, ‘আগে সপ্তাহে কয়েকটা বাঁশ কেটে নানা জিনিস বানিয়ে বাজারে বিক্রি করতাম। এখন মানুষ প্লাস্টিকের জিনিস নেয়, বাঁশের দামও বেড়েছে। খরচ মিটিয়ে লাভ থাকে না।’ আরেক কারিগর মজনু মিয়া জানান, ‘আমাদের সন্তানরা এখন এই পেশা নিতে চায় না। তারা বলে, এই কাজে ভবিষ্যৎ নেই। অথচ আমরা এই কাজেই জীবন কাটিয়েছি।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সচেতন মহলের মতে, এই ঐতিহ্য রক্ষা করতে হলে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। ক্ষুদ্রঋণ, প্রশিক্ষণ ও বাজার সংযোগে সহায়তা পেলে এই পেশা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। প্রশাসনের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও প্রশিক্ষণ জরুরি।
তাড়াইল উপজেলা শিল্পকলা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. পপি খাতুন বলেন, ‘আমরা স্থানীয় হস্তশিল্পের তালিকা তৈরির কাজ করছি। ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তার পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাঁশ-বেত শুধু একটি পেশা নয়, এটি গ্রামীণ জীবনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। কিন্তু সময়ের বাস্তবতায় এই শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। বিশেষজ্ঞদের মতে সঠিক পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তাড়াইলের হারানো ঐতিহ্য আবারও ফিরে আসতে পারে নতুন রূপে।