অন্তর্বর্তী সরকারের কোন কোন উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের নাম ও কণ্ঠ রেকর্ড আছে বলে দাবি করেছেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘এসব উপদেষ্টা সভায় কী বক্তব্য দেন, এর খবরও আছে।’
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে আয়োজিত এক মানববন্ধনে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এসব কথা বলেন। কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে তাহের অভিযোগ করে বলেন, ‘একটি দলের লোকদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনে বসিয়ে নীলনকশার নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র চলছে।’ এতে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছেন না তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জামায়াতের নেতা তাহের বলেন, ‘আমি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আজকে হুঁশিয়ারি দিতে চাই না। দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। প্রশাসনের যে অবস্থা এবং যে ষড়যন্ত্র চলছে, এটাকে বন্ধ করুন। নিরপেক্ষ সৎলোকদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করুন। আর যদি না হয়, কোন কোন উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, আমাদের কাছে নাম আছে। তাদের কণ্ঠ রেকর্ড আছে। মিটিংয়ে তারা কী বক্তব্য দেন, এর খবর আছে। আমরা জনগণের কাছে আপনাদের এখন প্রকাশ করছি না। সুযোগ করে দিতে চাই। আপনাদের সংশোধনের জন্য সময় দিতে চাই। যদি সময়মতো সাবধান না হন, তাহলে জনসমক্ষে নাম প্রকাশ করা হবে।’
গণভোটের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে গতকাল রাজধানীতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী পর্যন্ত সড়কপথে এই কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে মৎস্য ভবন মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ মানববন্ধনকে ঘিরে রাজধানীতে গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে অসহনীয় ভোগান্তি হয় মানুষের।
এর আগে মানববন্ধনে জামায়াত নেতা তাহের বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য সরকারকে নিরপেক্ষ হতে হয়। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ হতে হয়। সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা রাখতে হয়। কিন্তু আমরা দেখছি, সেই নিরপেক্ষ প্রশাসন, সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনকে আবার দলীয়করণ করার জন্য এক মহাষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত পরশু জনপ্রশাসনে একজন সচিবকে নিয়োগ করা হয়েছে। আমরা আগে সরকারকে বলেছিলাম, এই জায়গাটিÑ নির্বাচন আগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে সিএসপিদের নিয়োগ হয়ে থাকে। বিভাগীয় কমিশনারদের নিয়োগ হয়ে থাকে এবং এখানে একজন নিরপেক্ষ যোগ্য ব্যক্তিকে, সৎ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া দরকার।’
সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছিলেন যে, কোনো দলীয় লোক দেওয়া হবে না মন্তব্য করে তাহের বলেন, ‘কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছি, আমাদের সঙ্গে কথা বলার এক দিন পরেই এমন এক ব্যক্তিকে সেখানে নিয়োগ করা হয়েছে, যার অতীতের দুর্নীতির ইতিহাস অনেক লম্বা। সে একটি দলের প্রতি পরিপূর্ণভাবে অনুগত এবং বিভিন্ন সময়ে একটি বিশেষ দলের ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠনের বিভিন্ন পোর্টফোলিওতে দায়িত্ব পালন করেছে।’
তাহের অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা আজও দেখছি, সরকারের চার থেকে পাঁচজন উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের পক্ষে সব নিয়োগকে নিয়ন্ত্রণ করে একটি দলের দলীয় সরকারে পরিণত করার চেষ্টা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি পুলিশের কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। সেখানে একই রকমের কথা যে, প্রচ- চাপ কোনো একটি দলের লোকদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য।’
নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোটের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘গণভোট এখন সবার ঐক্যবদ্ধ একটি সিদ্ধান্ত। কিন্তু এখানে একটু প্যাঁচ খেলার চেষ্টা করছে। সেটা হচ্ছে, বলছে যে গণভোট ও জাতীয় ভোট একসঙ্গে হতে হবে।’
মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ঢাকা মহানগরের উত্তরের সেক্রেটারি রেজাউল করিম সভা সঞ্চালনা করেন। মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাসুম, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, আবদুল হালিম প্রমুখ।