পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৩০ কাঠা প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে আরও ৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। গতকাল বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন তাদের সাক্ষ্য শুনেছেন। তাদের সাক্ষ্য শেষে আগামী ৩ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ঠিক করেছে আদালত। দুদক প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
সাক্ষীরা হলেনÑ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জহিরুল ইসলাম খান, অগ্রণী ব্যাংকের রাজউক ভবন শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক লায়লা নূর বেগম ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ মনির হোসেন, দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর সহকারী পরিচালক ধীরাজ চন্দ্র বর্মণ ও আফনান জান্নাত কেয়া এবং দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন। সংশ্লিষ্ট আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. সোহানুর রহমান বলেন, এক মামলায় চারজন, আরেক মামলায় তিনজন এবং অপর এক মামলায় একজন সাক্ষী দিয়েছে।
এদিকে এদিন রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। তার পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহিনুর ইসলাম জামিন চেয়ে শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে খুরশীদ আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে এত দিন আসামিরা পলাতক থাকায় সাক্ষীদের জেরা করা হয়নি। তবে এক আসামি আদালতে থাকায় তার পক্ষে শাহীনুর রহমান সাক্ষীদের জেরা করেন। গত ৩১ জুলাই এ তিন মামলাসহ পৃথক ছয় মামলায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের সাত সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে গঠন করেন আদালত।
তিন মামলায় গত ১১ আগস্ট প্রথম দিনে তিন মামলার তিন বাদী, ২৬ আগস্ট পৃথক তিন মামলায় ১৭ জন এবং তৃতীয় দিন ২ সেপ্টেম্বর ১৮ জন, ১৭ সেপ্টেম্বর ১০ জন এবং ৩০ সেপ্টেম্বর ৯ জন এবং ১৫ অক্টোবর ১২ জন সাক্ষ্য দেন। এসব মামলার শেখ পরিবারের অন্য আসামিরা হলেনÑ শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক।
শেখ পরিবার ছাড়া অন্য আসামিরা হলেনÑ জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে এই ছয় মামলা করে দুদক। সবগুলো মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তারা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩নং রাস্তার ৬টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন