- এস আলমের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যবস্থায়, তাদের কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে
আন্তর্জাতিক সালিশি ব্যবস্থায় গেছেন দেশের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী এস আলম ও তার পরিবার। তাদের দাবি, অবৈধভাবে পাচার হওয়ার অভিযোগে যেসব সম্পদ উদ্ধারে বাংলাদেশ সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে, এতে তাদের কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে। দেশের আলোচিত-সমালোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের আইনজীবীরা গত সোমবার বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসে (আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্র) এই আবেদন জমা দেন। লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এই খবর দিয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে এই সংবাদ প্রকাশ করেছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
এস আলম পরিবারের অভিযোগ, এই পরিবারকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। যেমন অযৌক্তিকভাবে সম্পদ জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করা এবং সম্পদ ধ্বংস করা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, সেই সরকার এস আলম পরিবারের বিরুদ্ধে এসব ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এই মামলা ইউনূস সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করেছে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে শত শত কোটি ডলার পাচার হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এই অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করছে। অন্তর্বর্তী সরকার যে শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করেছিল, সেই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।
পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার প্রচেষ্টার নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তার অভিযোগ, এস আলম পরিবার বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার পাচার করেছে। তার প্রশ্ন, এই অর্থ কোথায় গেল? এস আলম গ্রুপ যথারীতি এসব অস্বীকার করে বলেছে, আহসান মনসুরের এসব অভিযোগের ভিত্তি নেই।
গত বছরের ডিসেম্বরে এস আলম পরিবারের আইনজীবীরা ইউনূস সরকারকে জানিয়েছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা না হলে সালিশি মামলা করা হবে। শেষমেশ তারা সেই পথেই হাঁটলেন।
আবেদনে যা আছে: বিশ্বব্যাংকে করা এস আলমের সালিশি মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, সরকার তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দের পাশাপাশি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। সেই সঙ্গে ব্যাবসায়িক লেনদেন নিয়ে ‘ভিত্তিহীন’ তদন্ত করেছে। শুধু তাই নয়, এস আলম পরিবারের বিরুদ্ধে ‘প্ররোচনামূলক মিডিয়া অভিযান’ চালানো হয়েছে।
আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এসব কারণে এস আলম পরিবারের শতকোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে, যদিও তারা ক্ষতিপূরণের সঠিক হিসাব দেননি। এই সালিশি মামলার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যখনই আবেদন আমাদের হাতে আসবে, তখনই আমরা যথাযথভাবে উত্তর দেব।’ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ বিষয়ের মন্তব্যের আবেদনে সাড়া দেয়নি।
২০০৪ সালে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় এই সালিশি মামলা করা হয়েছে। বলা দরকার, এস আলম পরিবার বর্তমানে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের হাতে আসা নথি অনুযায়ী, এই পরিবার ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার পর ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে।
এস আলম পরিবার আগে বলেছে, সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে তাদের কিছু সুরক্ষা প্রাপ্য। বাংলাদেশে যে ১৯৮০ সালের বিদেশি ব্যক্তিগত বিনিয়োগ আইন আছে, সেই আইন অনুযায়ী তাদের সুরক্ষা পাওয়া উচিত।
একসময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) কাজ করেছেন বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তার অভিযোগ, এস আলম, তার পরিবার ও সহযোগীরা বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় জোরপূর্বক ব্যাংক দখল করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। তিনি আরও বলেন, এস আলম এবং তার সহযোগীরা ছয়টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে ঋণ ও আমদানি জালিয়াতি করেছেন।
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘আমাদের হাতে প্রচুর প্রমাণ আছে। এসব প্রমাণ থেকে বোঝা যায়, তারা কত সম্পদ বিদেশে পাঠিয়েছে। এখন আমরা তাদের ব্যাংকগুলো নিয়ে কাজ করছি। এগুলোর অবস্থা তথৈবচ। এসব ব্যাংক বাঁচাতে বেইল আউট করা হয়েছে।’
এদিকে সালিশি মামলায় এস আলম পরিবার দাবি করেছে, সরকার তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, যেসব ধনী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে, তাদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতা করা হতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন