শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. সানোয়ার আলী, দক্ষিণ সুরমা (সিলেট)

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০১:১৩ এএম

তীব্র জ্বালানি সংকটে পড়তে যাচ্ছে সিলেট

মো. সানোয়ার আলী, দক্ষিণ সুরমা (সিলেট)

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০১:১৩ এএম

তীব্র জ্বালানি সংকটে  পড়তে যাচ্ছে সিলেট

সিলেটে জ্বালানি তেলের সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। চেয়েও চাহিদামতো সরবরাহ পাচ্ছেন না ফিলিং স্টেশনের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। রেলওয়ের ওয়াগনের মাধ্যমে আগে যেখানে সপ্তাহে দুটি চালান আসত, সেখানে এখন দুই সপ্তাহেও একটি চালান আসছে না। জ্বালানি পণ্য সংকটের কারণে প্রতিটি ফিলিং স্টেশনে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে হাহাকার।

সিলেটে জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি হতে পারেÑ এমনটি যখন আঁচ করতে পেরেছিলেন জ্বালানি ব্যবসায়ীরা, সঙ্গে সঙ্গে সেটি তারা সিলেটের জেলা প্রশাসনকে অবগত করেন। কিন্তু কোনো প্রতিকারের দিকে যেতে পারেনি তারা। এ নিয়ে ব্যবসায়ী মহল রীতিমতো উদ্বিগ্ন।

এদিকে গেল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বিপণন প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোম্পানির সিলেটমুখী চলতি বছরের শেষ কার্গো জাহাজটি সিলেট এসে পৌঁছেছে। তবে সেটি আনলোড হতে হতে সময় গড়াবে রোববার পর্যন্ত। যদিও এই সরবরাহও পর্যাপ্ত নয়।

বিষয়টি নিয়ে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস্ অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় শাখা আজ শনিবার সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিপিসির বিপণন প্রতিষ্ঠান যমুনা ওয়েল কোম্পানি, পদ্মা ওয়েল পিএলসি এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সিলেটস্থ ডিপোর মধ্যে শুধুমাত্র যমুনা ওয়েল কোম্পানিরই সুরমা নদীতে জেটিঘাট থাকায় ওই কোম্পানিই কার্গো জাহাজে জ্বালানি পণ্য আনার সুযোগ পেত। আর বাকি দুটো কোম্পানি পদ্মা ওয়েল পিএলসি এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামকে রেলওয়ে ওয়াগনের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু রেলওয়ের উদাসীনতা কোম্পানি দুটির সিলেট ডিপোকে জ্বালানি পণ্য সরবরাহে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। তার ওপর যমুনার শেষ ভরসা কার্গো জাহাজ নাব্যতা সংকটের কারণে আগামী সপ্তাহ থেকে সিলেটে আর আসতে পারছে না। ফলে আসন্ন বোরো মৌসুম ও জাতীয় নির্বাচনে সিলেট অঞ্চলে জ্বালানি পণ্যের সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ নিয়ে জ্বালানি পণ্য ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে ধরনা দিলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিলেটের জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম এবং গত ২৭ সেপ্টেম্বর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরীর সাথে এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস্ অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটির নেতারা পৃথকভাবে দেখা করে জ্বালানি পণ্যের সংকটের বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে তাদের অবহিত করেন। তারা সংকটের আশু সুরাহার বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের আশ্বাস দিলেও অদ্যাবধি এর কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে জ্বালানি পণ্য ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। ইতিমধ্যেই অনেকগুলো ফিলিং স্টেশন ‘ড্রাই’ হওয়ার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে।

বিপিসির বিপণন প্রতিষ্ঠান পদ্মা ওয়েল পিএলসি সিলেট ডিপোর মার্কেটিং অফিসার আশরাফুল ইসলাম বলেন, সিলেট অঞ্চলে জ্বালানি পণ্য সংকটের বিষয় সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। স্থানীয়ভাবে জেলা প্রশাসককে অবগত করেছি। তিনি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন মর্মে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এর পাশাপাশি নিয়মমাফিক আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও নিয়মিত অবহিত করে থাকি। কিন্তু যদি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সংকটের সুরাহা না করেন, তবে আমরা কী করতে পারি?

মেঘনা পেট্রোলিয়াম সিলেট ডিপোর মার্কেটিং অফিসার সৈয়দ আলম বলেন, আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এখন সরকারি কর্তৃপক্ষ যদি আন্তরিকতা দেখাতে না পারে, তাহলে আমরা কী করব।

বিক্ষুব্ধ জ্বালানি পণ্য ব্যবসায়ীদের পক্ষে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস্ অ্যান্ড পেট্রোলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন আহমেদ  জানান, বিপিসির ৩ বিপণন প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কর্তা ব্যক্তিদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা সবসময় দায়সারা বক্তব্য দেন, যা আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারে না। তারা বলেন, আপৎকালীন সময়ে সিলেটের জ্বালানি ব্যবসায়ীরা কিশোরগঞ্জের ভৈরব অথবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে জ্বালানি পণ্য সংগ্রহের জন্য ৩ বিপণন প্রতিষ্ঠানের কর্তারা আমাদের উৎসাহিত করে থাকেন। কিন্তু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল ৬ লাইন মহাসড়কের চরম বিপর্যস্তকর অবস্থায় তা কতটুকু সম্ভব? বিষয়টি তারা বিবেচনায় রাখেন না। ভৈরব ও আশুগঞ্জ থেকে জ্বালানি পণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ট্যাংক-লরিগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। এ ছাড়া খানাখন্দে ভরা সড়কে জ্বালানি পণ্য ভর্তি অবস্থায় পরিবহন করতে গিয়ে ট্যাংক লরিগুলোকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। প্রতিটি ট্যাংক লরিই ভাঙা সড়কে চালাতে গিয়ে বিভিন্ন পার্টস ভেঙে রাস্তায় বসে পড়ছে। এ কারণে জ্বালানি পণ্য পরিবহন ব্যবসায়ীরাও মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

জ্বালানি পণ্য ব্যবসায়ীরা আরও জানান, সিলেট অঞ্চলের জ্বালানি সংকটের সুরাহার লক্ষ্যে আমরা কর্তৃপক্ষকে সিলেটের গোলাপগঞ্জস্থ কৈলাশটিলা গ্যাসফিল্ড থেকে উৎপাদিত পেট্রোল ও অকটেন এ অঞ্চলের ডিপোর মাধ্যমে সিলেটে সরবরাহের পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সুপারিশ বা পরামর্শ উপেক্ষা করে রিফাইনারির নামে পাইপলাইনের মাধ্যমে রশিদপুরস্থ ৪ হাজার ব্যারেল প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ কোনো প্রকার রিফাইন না করে চতুরতার সাথে সেখান থেকে ট্যাংক লরির মাধ্যমে সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় তা সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু সিলেট অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয় না। বরং সিলেট বিভাগের ট্যাংকলরিগুলোকে রশিদপুর ৪ হাজার ব্যারেল প্ল্যান্ট থেকে জ্বালানি পণ্য সংগ্রহে নিরুৎসাহিত করা হয়। এই ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে আমরা সিলেটের জ্বালানি পণ্য ব্যবসায়ীরা বিক্ষুব্ধ।

রশিদপুর ৪ হাজার ব্যারেল প্লান্ট থেকে জ্বালানি পণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সিলেটের ট্যাংক লরি শ্রমিকরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট বিভাগের সহ-সভাপতি মো. ইমদাদ হোসেন এমদাদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ বলেন, এ নিয়ে সব সময়ই আমরা অন্যায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। বিষয় সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটারস, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় নেতাদের অবগত করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও আমাদের ওপর অন্যায় জুলুম-নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!