জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গত বছর জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায় তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরবর্তীতে সরকার পতনের পর হামলায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। কিন্তু সেই মামলার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্তপ্রক্রিয়া ধীরগতির কারণে এখনো কাউকে আটক করা হয়নি।
চব্বিশের ১৪-১৭ জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং শিক্ষকদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বর্বরোচিত হামলা চালায়। এই হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো ছাত্রলীগ কর্মী এখন পর্যন্ত আটক হয়নি।
জুলাই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা পক্ষে থেকে মামলাটি করা হয়। নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনসহ ১৭২ নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০-৪০০ জনকে হামলার মামলায় আসামি করা হয়েছে।
জাবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী ফেরদৌস রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে আশুলিয়া থানার ওসি মামলাটি গ্রহণ করেন। ওই মামলায় আসামিদের মধ্যে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থী রতন বিশ্বাস, জাবি ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম, সরকার ও রাজনীতি ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থী অভিষেক ম-ল, জাবি সাবেক সহ-সভাপতি মিজান, জোবায়ের রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, আরমান খান যুব, প্রতœতত্ত্ব ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থী তারেক, জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেন, আর রাফি চৌধুরী, সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার প্রমুখ ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। যার কারণে ছাত্রলীগের দুষ্কৃতকারীরা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে, অনেকে দেশ থেকে পালিয়েও গেছে।
মামলার বাদী ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ফেরদৌস রহমান বলেন, মামলারটি প্রায় ১ বছর সময় হচ্ছে, তবুও একজনও ধরা পড়েনি। মামলার আসামিরা এখনো বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং নানা রকম অরাজকতা সৃষ্টি করছে। যা আমাদের ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য, কারণ তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় টিউশনে যায়। একই সঙ্গে আমি নিজেকে ও পরিবার নিয়ে শংকা বোধ করছি। কারণ এই ফ্যাসিস্ট খুনি আ.লীগের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন জায়গায় গুপ্ত হত্যাসহ বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারছে। যা দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমি চাই দ্রুত এদের গ্রেপ্তার করা হোক।
এ বিষয়ে জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহম্মদ বাবর বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে একটি ছাত্রদল কর্তৃক এবং অন্যটিতে আমি নিজে বাদী হয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারে বিশেষ সদিচ্ছা নেই। তাদের ধারণা, প্রশাসন আওয়ামী লীগ শিক্ষকদের কাছ থেকে বেনিফিসিয়াল ছিল এবং এখন দায় এড়াতে বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করছে।’
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভিন্নভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলছি। তাদের কার্যক্রমের ওপর আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারিত হবে, তিনি যোগ করেন।
মামলাটির কার্যকারিতা ধীরগতি ও কাউকে আটক না করতে পারার দায় নিয়ে আশুলিয়া থানার নবীনগর জোনের সাব-ইন্সপেক্টর মাহমুদুর রহমান বলেন, এই মামলায় দুজন গ্রেপ্তার আছে। মামলাটিতে শিক্ষার্থীদের শুধু নাম ও তথ্য দেওয়া আছে। বাকি কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বারবার দুইবার চিঠি পাঠিয়েছি, তবে সেখান থেকে কোনো তথ্য বা চিঠির উত্তর দেওয়া হয়নি। যার কারণে আমরা মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, আমাদের কাছে পুলিশ থেকে চিঠি পেয়েছি। আমরা মামলায় অন্তর্ভুক্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করতেছি। অতি শিগগিরই তালিকা প্রস্তুত করে তাদের সরবরাহ করব। তবে এ বছর ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৮১ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বহিষ্কৃতের নাম প্রকাশ করেলেও এতদিন পরেও তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করতে পারেনি তারা।

