ঝালকাঠির নলছিটিতে সরকারি বিধিবিধান উপেক্ষা করে বাড়ছে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা। মৌসুম শুরুর পর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমির মাটি থেকে ইট তৈরি, শুকানো ও পোড়ানোর কাজে হিড়িক পড়েছে। এগুলোর পরিবেশগত ছাড়পত্র যেমন নেই, তেমনি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিও গ্রহণ করেনি। এসব ভাটার কার্যক্রমে কৃষিজমির মাটি (টপ সয়েল), কাঠ পোড়ানো এবং ধুলো-বালুতে বায়ুদূষণ আরও তিব্র হয়েছে।
এদিকে অবৈধ ভাটায় আশপাশের এলাকা, নদী, গ্রামীণ জনপদের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ইটভাটার সৃষ্ট দূষণে কৃষিজমি ও কৃষি উৎপাদন ক্ষতির মুখে পড়ছে এবং বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইটভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে জ¦ালানি কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম।
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইট উৎপাদন করছে উপজেলার গৌরীপাশা, প্রতাপ ও সরই গ্রামের একাধিক ভাটায়। এদের মধ্যে মেসার্স রিয়াজ ব্রিকস, সরমহলে সরদার ব্রিকস ও থ্রি স্টার ব্রিকস দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি অনুরাগ এলাকায় তিলক ব্রিকস, আমিরাবাদে এমবিএল ব্রিকস এবং নৈকাঠির জাফরাবাদ ব্রিকসও বিধিবহির্ভূতভাবে ইট উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের শুরুতেই যদি এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হতো, তাহলে পরিবেশ দূষণ, ধোঁয়া, কৃষিজমির ক্ষয় এবং জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি থেকে রেহাই পাওয়া যেত। তারা বলছেন, মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযানে সাময়িকভাবে ভাটা বন্ধ থাকলেও কয়েক দিন পরই আবার আগের মতোই কাজ শুরু হয়ে যায়। এসব অভিযানের বাস্তবে কোনো ফল নেই বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় কৃষক আবদুল জব্বার বলেন, কৃষিজমিতে বা জমির পাশে এসব ইটভাটা স্থাপন করায় তাদের ফসলের ক্ষতি হয়। জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় ভালো ফলন পাওয়া যায় না। এসব ইটভাটার মালিক স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তারা প্রতিবাদ করতেও সাহস পান না।
আনিসুর রহমান নামের একজন বলেন, ইটখোলাগুলো থেকে নির্গত দূষিত উপাদানের প্রাদুর্ভাবে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রতিনিয়ত বায়ুম-লে নির্গত হচ্ছে। এটা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতির বড় কারণ।
এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে চলতি মৌসুমের শুরুতেই কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন তারা। স্থানীয়দের প্রত্যাশা, এবার যেন কর্তৃপক্ষ সত্যিকার অর্থেই লাগাম টেনে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করে।
গ্রামীণ সড়কের পাশে গড়ে ওঠা এসব ভাটার ট্রলি ও ট্রাকের কারণে এলজিইডির সড়কগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইট পরিবহনের সময় কাভার না থাকায় সড়কে বালু জমছে এবং বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। রাতে অনেক ভাটায় কাঠ পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়া এলাকায় ছড়িয়ে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার মালিক বলেন, আমাদের ইটভাটার ব্যবসা অনেক পুরোনো। সব কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স গ্রহণ এবং নবায়ন করেই আমরা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু নতুন আইনের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র না দেওয়ায় লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছে না।
ঝালকাঠি পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইদুর রহমান বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে কাঁচা ইট ধ্বংস করা হলেও তারা পুনরায় ভাটা চালু করে। ইটভাটার মালিক ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্বশীল না হলে ইটভাটার আগ্রাসন ঠেকানো যাবে না।

