ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

দুই সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই যুবক নিহত

মৌলভীবাজার ও লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০২:০১ এএম

দেশের মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। উভয় ঘটনায়ই নিহত যুবকরা সীমান্ত এলাকায় গরু চরাতে গিয়েছিলেন। মেীলভীবাজারে নিহত যুবক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মারা যান। আর লালমনিরহাটে নিহত যুবকের মরদেহ প্রথমে বিএসএফ নিয়ে গেলেও পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মৌলভীবাজার :

কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহতের নাম সুখীরাম উরাং (২৫)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সুখীরামের বাড়ি কর্মধার মুরইছড়া বস্তি এলাকায়।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়,  সুখীরাম বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার মুরইছড়া সীমান্তের এক হাজার ৮৪৪ ও এক হাজার ৮৪৫ নম্বর মূল সীমান্ত পিলার এলাকায় গরু চরাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে বিএসএফ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে তার পিঠে গুলি লাগলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ সময় তিনি দৌড়ে কিছুদূর এগিয়ে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল হাসপাতালে গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহজান কবির জানান, সুখীরাম উরাং বিএসএফের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সীমান্ত থেকে দৌড়ে এসে মাটিতে পড়ে যান, এ সময় তিনি পানি চাইলে পানি খাওয়ানো হয়। তখনো জীবিত ছিলেন সুখীরাম। পরে গাড়ি এনে কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

তিনি আরও জানান, নিহত সুখীরাম ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ১৫-২০ দিন আগে ছুটিতে বাড়িতে এসে তিনি পরিবারের সদস্যদের কৃষিকাজে সহযোগিতা করছিলেন।

কুলাউড়া থানার ওসি মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হয়ে সুখীরাম মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

মুরইছড়া সীমান্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৬ ব্যাটালিয়নের আওতায় পড়েছে। এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিজিবির ৪৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া জানান, তারা ঘটনাটি শুনেছেন। সীমান্তের শূন্যরেখা অতিক্রম করায় বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক মারা যেতে পারেন বলে তারা ধারণা করছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট :

পাটগ্রাম সীমান্তে গরু আনতে গেলে বিএসএফের গুলিতে সবুজ ইসলাম (২৫) নিহত হন। পরে বিএসএফ ওই যুবকের মরদেহ ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে গেলেও পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে জানা গেছে।

গতকাল ভোরে ৮৬৪ ও ৮৬৫ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।  নিহত সবুজ পাটগ্রাম উপজেলার জগৎবেড় ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পচাভান্ডার গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। 

বিজিবি ও এলাকাবাসী জানায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা থানার ফুলকাডাবরী গ্রামের খালপাড়া এলাকার বিপরীতে বাংলাদেশের জগৎবেড় ইউনিয়নের পচাভান্ডার সীমান্ত এলাকা। গত বুধবার গভীর রাতে উভয় দেশের সীমান্তের প্রধান পিলার ৮৬৪ নম্বরের ৫ নম্বর উপপিলারের কাছ দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের ৮ থেকে ১০ জন গরু পারাপারকারী গরু আনা-নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বাংলাদেশি গরু পারাপারকারীরা ভারতীয় অংশের প্রায় ৩০ গজ অভ্যন্তরে চেনাকাটা সীমান্ত এলাকায় যান। সেখানে ভারতের ১৬৯ কোচবিহার রাণীনগর বিএসএফ ব্যাটালিয়নের চেনাকাটা ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাদের দেখে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে সবুজ ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।  

বিষয়টি জানতে পেরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৬১ ব্যাটালিয়নের (তিস্তা-২) শমসেরনগর ক্যাম্পের কমান্ডার ও টহলদল ঘটনাস্থলে যায়। গতকাল সকালে চেনাকাটা ক্যাম্পের বিএসএফ কমান্ডারকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় শমসেরনগর বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার। পরে সকালে ঘটনাস্থল সীমান্তের পাশে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট স্থায়ী পতাকা বৈঠক হয়। এতে ভারতের চেনাকাটা কোম্পানি কমান্ডার ও বাংলাদেশের শমসেরনগর কোম্পানি কমান্ডারসহ উভয় দেশের ১০ জন করে সদস্য বৈঠকে অংশ নেন।    

জগৎবেড় ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অহেদ আলী বলেন, ‘শমসেরনগর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার রাত সাড়ে ৩টায় আমার মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে বলেনÑ বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি একজন গরু পারাপারকারী মারা গেছেন। আপনি ঘটনাস্থলের কাছে আসেন। আমি অসুস্থ এজন্য যাইনি। সকালে সবুজদের বাড়িতে গিয়েছি, বাড়িতে তার মা, স্ত্রী কেউ নেই।’

এ ব্যাপারে বিজিবি ৬১ ব্যাটালিয়নের (তিস্তা-২) শমসেরনগর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার কামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠকে গুলি করে বাংলাদেশি যুবক নিহতের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং মরদেহ ফেরত চাওয়া হয়েছে।’

বিএসএফ জানিয়েছে থানা পুলিশের কাছে মরদেহ দেওয়া হয়েছে, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় ওই সীমান্তে উভয় দেশের ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।