বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:৩৬ এএম

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা

হত্যার উদ্দেশ্যেই গৃহকর্মীর ছদ্মবেশ নেয় আয়েশা

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:৩৬ এএম

গ্রাফিক্স : রূপালী বাংলাদেশ

গ্রাফিক্স : রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার রহস্য এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তদন্তসংশ্লিষ্টদের ধারণা, হত্যার উদ্দেশ্যেই গৃহকর্মীর ছদ্মবেশ ধারণ করে ওই বাসায় ঢুকে পড়ে আয়েশা। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান সন্দেহভাজন আয়েশার অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মা-মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরিকল্পনামাফিক খুনের উদ্দেশ্যেই আয়েশা ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। তাকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী আজিজুল ইসলাম। খুনিকে গ্রেপ্তারে থানার পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক টিম কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধারণা, খুনি প্রশিক্ষিত।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিপরীত পাশের একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলার ফ্ল্যাট থেকে মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজের (১৫) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে ওই বাসার গৃহকর্মী আয়েশা পলাতক। মেয়েটি মাত্র চার দিন আগে অস্থায়ী গৃহকর্মী হিসেবে ওই বাসায় কাজ নিয়েছিল। আয়েশা সোমবার সকালে কাজে এসেছিল বোরকা পরে, দেড় ঘণ্টা বাদে বেরিয়ে যায় নাফিসার স্কুলড্রেস পরে এবং কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে। পুলিশ জানায়, মা-মেয়েকে হত্যার পর বাথরুমে গোসল করে গৃহকর্মী আয়েশা। এরপর নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।

জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো গতকাল সকাল ৭টার দিকে স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আজিজুল। স্কুলে পরীক্ষা চলমান থাকায় বাসায় ফেরেন তাড়াতাড়ি। বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরেই তিনি স্ত্রী-কন্যার লাশ দেখতে পান। পরে তার চিৎকারে আশপাশের বাসিন্দারা বেরিয়ে আসেন, খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশ মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

গতকাল মঙ্গলবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত মা-মেয়ের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর পুলিশ লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়। পরিবারের লোকজন মরদেহ গ্রামের বাড়ি নাটোর নিয়ে যান। এর আগে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ। প্রতিবেদনে আঁতকে ওঠার মতো তথ্য এসেছে।

দুজনের সুরতহাল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নিহত লায়লা আফরোজের শরীরজুড়ে ৩০টি জখমের চিহ্ন। আর তার মেয়ে নাফিসার গলায় চারটি গভীর আঘাতের ক্ষত। এর মধ্যে আফরোজের বাম গালে তিনটি, থুতনিতে চারটি, গলার নিচে বাম পাশে পাঁচটি, বাম হাতে তিনটা, বাম হাতের কব্জিতে একটি, ডান হাতের কব্জিতে দুটি, বুকের বাম পাশে ৯টি, পেটের বাম পাশে দুটি এবং তলপেটের নিচে একটি জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অন্যদিকে নাফিসার বুকের দুপাশে চারটি গভীর ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারালো ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এমন সুরতহাল সাম্প্রতিক সময়ে তারা দেখেননি। হত্যার ধরন ও নৃশংসতা দেখে ঘাতককে প্রশিক্ষিত বলে ধারণা করছেন তারা। নৃশংস এই হত্যাকা-ের পর থেকে গৃহকর্মী আয়েশাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু কোনোভাবেই তার অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে একটি সিসিটিভি ফুটেজে আয়েশাকে বাসা থেকে বের হয়ে রিকশায় করে চলে যেতে দেখা গেছে। তাকে একমাত্র আসামি করে সোমবার মধ্যরাতে নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন।

মামলার এজাহারে স্বামী আজিজুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ‘সোমবার সকালে আমি কর্মস্থলে উপস্থিত থাকা অবস্থায় আমার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। পরবর্তীতে আমি নিরুপায় হয়ে বেলা অনুমান ১১টার সময় বাসায় ফেরত এসে দেখতে পাই যে, আমার স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে এবং আমার মেয়ের গলার ডান দিকে কাটা। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মেইন গেটের দিকে পড়ে আছে। আমার মেয়ের ওই অবস্থা দেখে তাকে উদ্ধার করে পরিছন্নতাকর্মী মো. আশিকের মাধ্যমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আসামি আমার মেয়ের একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী (সঠিক পরিমাণ স্মরণ নেই) নিয়ে যায়।’

ঘটনার দিন নিহতদের ফ্ল্যাটের আলমারি তছনছ অবস্থায় পাওয়া যায়, যা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ঘাতক কোনো কিছু তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে। আর আজানা ওই জিনিস নিতেই মা-মেয়েকে খুন করা হয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ কিংবা মূল্যবান জিনিসের প্রতি টার্গেট থাকলে আসামি চুরি করা কিংবা ডাকাতি করে সেগুলো লুটে নিত। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয়, ঘাতকের টার্গেটই ছিল খুন করা। সাধারণ কোনো মেয়ের পক্ষে একা দুজনকে খুন করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া যেভাবে মা-মেয়েকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে ঘাতক প্রশিক্ষিত। হত্যার উদ্দেশ্যেই সে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। আর গৃহকর্মীর আড়ালে সে হত্যাকা- ঘটায়। এমনও হতে পারে, কেউ তাকে দিয়ে হত্যাকা- ঘটিয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান। এ ঘটনায় দারোয়ান মালেককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে সে গৃহকর্মীর বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘হত্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, পরিকল্পনা করে মা-মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার উদ্দেশ্যেই সে ওই বাসায় কাজ নিয়েছে।’

ঘাতক আয়েশাকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ও হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের আশা ব্যক্ত করেছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী। বাসাবাড়ির কাজে কাউকে নেওয়ার আগে তার নাম, পরিচয়, যাবতীয় ঠিকানা সংগ্রহ এবং একজনের রেফারেন্সের মাধ্যমে কাজে নিতে নগরবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

গণমাধ্যমকে কমিশনার বলেন, ‘যাকে কাজে নেওয়া হবে, সে গ্রামের বাড়িতে আগে কী করত, সেখান থেকে ঢাকায় কেন এলো, এসব বিষয় জেনে তারপর কাজে নিন। মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, এটি পরিকল্পিত এবং হত্যার উদ্দেশ্যেই গৃহকর্মী ওই বাসায় কাজ নিয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে কাজ করা হচ্ছে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!